আগে সেতু, পরে ভোট

একের পর এক ভোট এসেছে। সঙ্গে প্রতিশ্রুতির বন্যা। ভোট দিলে সেতু করার ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের এমন অঙ্গীকারে ভরসা রেখে রেখে ক্লান্ত এলাকার মানুষ বুঝে গেছে, ভোটের মাঠে ওসব আসলে ফাঁকা বুলি। তাই এবার পৌরসভা নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রার্থীদের সেই পুরোনো প্রতিশ্রুতিতে আর কান দিতে নারাজ মানুষ। তাদের দাবি, আগে সেতু করার বাস্তবসম্মত পাকা কথা, পরে ভোট।
বগুড়ার শিবগঞ্জ শহরের পাশ দিয়ে প্রবাহিত করতোয়া নদী। নদীর ওপারে পৌর এলাকার দুটি ওয়ার্ডে প্রায় সাত হাজার মানুষের বসবাস। নদী পারাপারের একমাত্র উপায় অর্জুনপুর ঘাট থেকে নৌকা। বিভিন্ন প্রয়োজনে ওই দুই ওয়ার্ডের লোকজনকে প্রতিদিন উপজেলা সদরে এদিক দিয়েই আসতে হয়। একই পথে নিত্য স্কুল-কলেজে যেতে হয় ছাত্রছাত্রীদের। আর এ কষ্ট সহ্য না করতে চাইলে অন্য পথে তিন কিলোমিটার ঘুরতে হয়। পারাপারের সমস্যার জন্য করতোয়া নদীর ওপর অর্জুনপুর ঘাটে দীর্ঘদিন ধরে সেতুর দাবি জানিয়ে আসছেন এলাকার বাসিন্দারা।
আকন্দপাড়া মহল্লার চার-পাঁচজন অভিযোগ করেন, ভোট এলে নিজেদের দাবি যতবারই তাঁরা রাজনৈতিক নেতাদের জানিয়েছেন ততবারই মিলেছে প্রতিশ্রুতি। কিন্তু সেতু তাঁরা পাননি। আজও তাঁরা ভোগান্তিতেই রয়ে গেছেন। তাই এবার তাঁদের দাবি, সেতু না পেলে ভোট নয়।
অর্জুনপুর মহল্লার শেখ রাসেল (৪৭) বলেন, ‘ভোটের সময় সকলি কয় এই লদীর ওপর ব্রিজ বানাবি। কিন্তু ভোট ব্যার হলে আর কেউ খবর লেয় না। সকলি হামাকরোক ধোঁকা দিয়া যায়। কিন্তু এইবার আর মিঠা কথার কাম নাই। পাকা কথা না দিলে ভোট দিমো না।’
এ ব্যাপারে শিবগঞ্জ উন্নয়ন কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহফুজুল হক বলেন, একটি সেতুর অভাবে কয়েক হাজার মানুষ চরম কষ্টে আছেন। এ সেতুর জন্য বহুবার মিছিল-সভাসহ বিভিন্ন আন্দোলন হয়েছে। কিন্তু সেতু হচ্ছে না।
জানতে চাইলে বর্তমান মেয়র ও বিএনপি থেকে মেয়র পদপ্রার্থী মতিয়ার রহমান বলেন, ‘সেতুটি করার জন্য পৌরসভার আর্থিক সংগতি, লোকবল ও কারিগরি সুবিধা—কোনোটাই নেই। তারপরও আমি সেতুটি করার জন্য স্থানীয় সাংসদসহ বিভিন্ন জায়গায় একাধিকবার অনুরোধ করেছি। তবে এবার নির্বাচিত হতে পারলে যেভাবেই হোক সেতুটি করার চেষ্টা করব।’
বিএনপির ‘বিদ্রোহী’ তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমি নির্বাচিত হতে পারলে প্রয়োজনে গণচাঁদা নিয়ে প্রথমেই ওই সেতু নির্মাণ করব।’
আওয়ামী লীগের তৌহিদুর রহমান বলেন, ‘ওখানে সেতু নির্মাণ করতে অনেক টাকার দরকার। পৌরসভার তহবিল দিয়ে হবে না। আমি জয়লাভ করলে অতি সহজেই সেতু করার ব্যবস্থা করতে পারব বলে আমার বিশ্বাস।’