শিক্ষার্থী ও গ্রামবাসীর সংঘর্ষে আহত ২০

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করার জের ধরে গত বৃহস্পতিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থী ও গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। এর জের ধরে গতকাল শুক্রবার শিক্ষার্থীরা দিনভর ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছেন।
সংঘর্ষে আহত বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তাকর্মী বদি-উজ-জামান বাদলকে (৩০) গুরুতর অবস্থায় যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়-সংলগ্ন শ্যামনগর গ্রামের বাসিন্দা। সংঘর্ষের ঘটনা তদন্তের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গতকাল শুক্রবার বিকেলে প্রক্টর মশিউর রহমানকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে।
যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি শিকদার আক্কাছ আলী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনশৃঙ্খলা ঠিক রাখার জন্য বৃহস্পতিবার রাত থেকে ক্যাম্পাস এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। কেউ আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটানোর চেষ্টা করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ সূত্র জানায়, ২৬ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠান উপলক্ষে আগের দিন কর্তৃপক্ষ মাঠে বালু ফেলার কাজে নিরাপত্তাকর্মী বাদলের ভাই শরীফের ট্রলি ভাড়া করে। ওই দিন শরীফ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করেন। ওই ছাত্রী বিষয়টি তাঁর সহপাঠীদের জানান। ওই দিনই ছাত্রীর সহপাঠীরা শরীফকে মারধর করেন। এর জের ধরে গত মঙ্গলবার শরীফ স্থানীয় কয়েকজনকে নিয়ে এক ছাত্রকে পিটুনি দেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মসিয়ুর রহমান হলের ছাত্ররা সমাবেশ করেন। সেখানে তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী বাদলকে ডেকে ওই ঘটনার প্রতিবাদ জানালে তিনি খেপে যান। এ নিয়ে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা বাদলকে মারধর করেন। এ সময় ছাত্ররা বাদলের ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটিতে আগুন দেন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে বাদলের আত্মীয়স্বজন লাঠিসোঁটা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে হামলা করে। ছাত্ররাও ইট ছুড়ে পাল্টা ধাওয়া দেয়। এ সময় প্রশাসনিক ভবনের জানালার কাচ ভাঙচুর করা হয়।
শিক্ষার্থীরা বলেন, শিক্ষার্থীরা গতকাল দিনব্যাপী নিরাপত্তাকর্মী বাদলের অপসারণের দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছেন। তাঁরা বিকেল সাড়ে চারটা থেকে ক্যাম্পাসের প্রশাসনিক ভবনের সমানে অবস্থান নেন। কর্মসূচি থেকে শিক্ষার্থীরা ঘোষণা দেন, বাদলকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অপসারণ না করা পর্যন্ত সব বিভাগের পরীক্ষা ও পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।
এ অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের বিভিন্ন ছাত্রাবাসে থাকা অন্তত ৫০০ শিক্ষার্থী গ্রামবাসীর হামলার আশঙ্কায় রয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাত থেকে ক্যাম্পাস এলাকায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জিন প্রকৌশল ও জৈব প্রযুক্তি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র রাশিদুজ্জামান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী বাদলের ভাই শরীফ আমাদের এক সহপাঠীকে উত্ত্যক্ত করে। এর প্রতিবাদ জানাতে গেলে বাদল বহিরাগত কয়েকজনকে নিয়ে এক ছাত্রকে মারধর করে। বাদলের বিরুদ্ধে এর আগেও আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে অভিযোগ করেছি। কিন্তু তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এবার বাদলকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অপসারণ না করা পর্যন্ত কোনো শিক্ষার্থী পরীক্ষা ও পাঠদানে বসবে না।’
এ বিষয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও নিরাপত্তাকর্মী বাদল বা তাঁর ভাই শরীফ কারও সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আবদুস সাত্তার বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। যে কেউ আইন ভঙ্গ করলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।