'বনের রাজা' ওসমান গনির ১২ বছরের সাজা বহাল

জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় ‘বনের রাজা’ চাকরিচ্যুত প্রধান বন সংরক্ষক ওসমান গনির ১২ বছরের কারাদণ্ডের সাজা বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। আজ বিচারপতি রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। 

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী খুরসিদ আলম খান জানান, ২০০৮ সালের ৫ জুন ঢাকার বিশেষ জজ আদালতের বিচারক জ্ঞাত আয় বহিভূর্ত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে ওসমান গনিকে ১২ বছরের কারাদণ্ড দেন। ওই রায়ের বিরুদ্ধে ওসমান গনি আপিল করেন। শুনানি শেষে আপিল খারিজ করে বিচারিক আদালতের দেওয়া আদেশ বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট।

২০০৭ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ওসমান গনির উত্তরার সরকারি বাসভবনে অভিযান চালিয়ে চালের ড্রাম, বালিশ ও তোশকের ভেতর থেকে এক কোটি ছয় লাখ ৮৪ হাজার ৬০০ টাকা উদ্ধার করে। তারা ৪১ লাখ ১১ হাজার ৫০০ টাকা মূল্যের সঞ্চয়পত্রের সন্ধানও পায়। এরপরই ওসমান গনিকে গ্রেপ্তার করা হয়। বাসা থেকে ওসমান গনির নামে দুটি পাসপোর্ট পাওয়া যায়। পরে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে একটি ব্যাংকের ধানমন্ডি শাখার লকার থেকে ২৯০ ভরি স্বর্ণালংকার উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে মাত্র ২০ ভরি অলংকারের বৈধ কাগজপত্র ছিল।
দুদক ২০০৭ সালের ১৬ জুন ওসমান গনিকে তাঁর সম্পত্তির হিসাব জমা দেওয়ার জন্য নোটিশ দেয়। ওসমান গনি ২৬ জুলাই তাঁর স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির হিসাব জমা দেন। বিবরণীতে তিনি স্ত্রী মোহসিনারা ও তাঁর নামে তিন কোটি ৭০ লাখ ১৫ হাজার টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদসহ ২৯০ ভরি স্বর্ণালংকার আছে বলে উল্লেখ করেন। এর মধ্যে তাঁর নামে বিভিন্ন ব্যাংকে ৪৩ লাখ ৪৩ হাজার ৪০৬ টাকার এফডিআরসহ (স্থায়ী আমানত) মোট এক কোটি ৫৬ লাখ ৭৬ হাজার ১৯১ টাকা জমা ছিল। বাসায় আসবাবপত্র দেখানো হয়েছে চার লাখ ৫৫ হাজার ৪০০ টাকার। ইলেকট্রনিক সামগ্রীর মূল্য দেখানো হয় সাত লাখ পাঁচ হাজার ৬০০ টাকা।
স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে দেখিয়েছেন জিগাতলা মনেশ্বর রোডের ৯৬ /২ /বি নম্বরে একটি পাঁচতলা বাড়ি। দুদকের মূল্যায়নে ওই বাড়িটির মূল্য এক কোটি এক লাখ ৬৭ হাজার ৭৯৩ টাকা। চার কাঠা পরিমাণের এই জমির ক্রয়মূল্য ছিল এক লাখ ৮৫ হাজার টাকা। এ ছাড়া স্ত্রীর নামে উত্তরা ১০ নম্বর সেক্টরের সাত নম্বর সড়কে পাঁচ কাঠা জমির একটি প্লট; নিজের নামে পূর্বাচল ২ নম্বর সেক্টরের ১০২ নম্বর সড়কে সাড়ে সাত কাঠার ১২৯ নম্বর প্লট, যার মূল্য ১৩ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা; বরিশালের আলেকান্দায় ছয় শতাংশ জমি, মূল্য তিন লাখ টাকা দেখানো হয়; বিবরণীতে বলা হয়, তিনি ও তাঁর স্ত্রী ১৯ লাখ ৩০ হাজার ৫২৭ টাকার সম্পদের আয়কর দিয়েছেন।
দুদকের তদন্তে দেখা গেছে, ওসমান গনি এক কোটি দুই লাখ ৫৩ হাজার ৫৮৪ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন। তাঁর জ্ঞাত আয়বহিভূর্ত সম্পদের পরিমাণ চার কোটি ৯৬ লাখ ৮১ হাজার ৪৬৪ টাকা।
২০০৭ সালের ২৬ জুলাই দুদক ওসমান গনি ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে উত্তরা থানায় মামলা করে। দুদকের সহকারী পরিচালক আখতার হামিদ ভূঁইয়া ৬০ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত শেষে গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। আদালত ৫১ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য দেন। এরপর ২০০৮ সালের ৫ জুন আদালত ওসমান গনিকে ১২ বছর ও তাঁর স্ত্রী মোহসিনারা গনিকে তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন। একই সঙ্গে আদালত ওসমান গনির নামে থাকা এক কোটি ৮০ লাখ ও স্ত্রীর নামে থাকা দুই কোটি ৮০ লাখ টাকা এবং ২৭০ ভরি ওজনের স্বর্ণালংকার রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করেছেন। ওই সময়ে জাতীয় সংসদ ভবনে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালতের বিচারক এ কে এম আরিফুর রহমান এই রায় ঘোষণা করেন। ওসমান গনি এ সময় উপস্থিত ছিলেন। মোহসিনারা গনি পলাতক।