অধিকার আদায়ে তাঁরাও নির্বাচনে

যশোরের বাঘারপাড়া ও সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌর নির্বাচনে সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হয়েছেন দুজন হিজড়া। এর আগে সাতক্ষীরায় কোনো নির্বাচনে কোনো হিজড়া প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি। তবে বাঘারপাড়ার হিজড়া প্রার্থী গত বছরেও নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন।
বাঘারপাড়া উপজেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, হিজড়া সুমি খাতুন এবার ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হয়েছেন। এখানে মোট ভোটার ২ হাজার ৩২৫ জন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী তাসলিমা খাতুন। সুমি এবার দ্বিতীয়বার পৌর নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। প্রথমবার নির্বাচনে অল্প ভোটে হেরে গেলেও এবার তিনি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। তিনি হিজড়াদের অধিকার আদায়ের জন্য নির্বাচনে লড়বেন।
সুমি বলেন, ২০ বছর আগে তিনি সিলেট থেকে যশোর শহরে আসেন। পরে যশোর থেকে তিনি চলে যান বাঘারপাড়ায়। তিনি হিজড়া দলের গুরু মা। তাঁর তিনজন শিষ্য রয়েছেন। তাঁরাও ওই বাড়িতে থাকেন। প্রতিদিন সুমির পক্ষেÿএলাকার মানুষের কাছে গিয়ে তাঁরাও ভোট চাইছেন। সুমি খাতুন আরও বলেন, হিজড়ারাও মানুষ। এ দেশের নাগরিক। কিন্তু মানুষ হিসেবে তাঁরা অধিকার থেকে বঞ্চিত। তাঁদের দেখে মানুষ না বুঝে বিভিন্ন সময়ে তাচ্ছিল্য করে। খাটো করে দেখে। তাই মানুষের সঙ্গে মিশতে ও তাদের ভালোবাসা পেতে কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন। এখানকার মানুষ এখন তাঁকে সম্মান করে, ভালোবাসে। গতবারের পৌর নির্বাচনে সাত ভোটে তিনি হেরে গিয়েছিলেন। এবারের জয় নিয়ে তিনি শতভাগ আশাবাদী।
প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর ব্যাপারে তাসলিমা খাতুন বলেন, তিনি তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীকে সম্মান করেন। তবে তিনি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।
অপর দিকে, কলারোয়া পৌর নির্বাচনে লড়বেন হিজড়া প্রার্থী দীথি (৪৮)। কলারোয়া নির্বাচন কার্যালয়ের তথ্যমতে, পৌরসভায় ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে দীথি ছাড়াও লড়ছেন লুৎফুন নেছা ও মোছা. শাহানাজ খাতুন। কলারোয়া পৌরসভার মির্জাপুর এলাকার বাসিন্দা আবদুল হামিদ ও সিরাজুল ইসলাম বলেন, প্রচারণা চালাতে দীথি সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন। গৃহিণী ছাড়াও এলাকার সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে মতবিনিময়ের পাশাপাশি সভা করছেন।
একই এলাকার আলিমুর রহমান ও শহীদুল ইসলাম বলেন, দীথি দীর্ঘদিন ধরে এলাকার দরিদ্র পরিবারের ছাত্রছাত্রীদের সহযোগিতা করছেন। ইতিমধ্যে তিনি এলাকায় পরিচিতি লাভ করেছেন। পাশাপাশি তিনি হিজড়া সম্প্রদায়ের অধিকার আদায়েও কাজ করছেন।
দীথি বলেন, ‘হিজড়াদের এখনো মানুষ অন্য চোখে দেখে। কিন্তু তাঁরাও যে সমাজের সব ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারেন, তা জানান দিতে আমি প্রার্থী হয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, তিনি জয়ী হলে দরিদ্র মানুষের কল্যাণে কাজ করবেন।
দীথি হলফনামায় উল্লেখ করেছেন, কৃষি খাত থেকে তাঁর আয় হয় বছরে ৬০ হাজার টাকা। ব্যাংকে জমা রয়েছে এক লাখ টাকা। আর নগদ টাকা রয়েছে ১২ হাজার, স্বর্ণালংকার রয়েছে ১৯ হাজার ৫০০ টাকার। কৃষিজমি ৬২ শতক ও অকৃষিজমি ৮ শতক।
সাতক্ষীরা হিজড়া সংগঠনের সভাপতি খুকু বলেন, দীথি নির্বাচনে অংশ নিয়ে তাঁদের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম একধাপ এগিয়েছে। বিষয়টি সাতক্ষীরা জেলার হিজড়া সম্প্রদায় ইতিবাচক হিসেবে দেখছে।