আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রধান আসামির

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারণার তথ্য বিএনপির প্রার্থীকে জানানোর সন্দেহের জেরে কৃষক নজরুল ইসলাম খুন হন। তবে তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্য ছিল না। এ ঘটনায় মামলার প্রধান আসামি মো. রবিউল ইসলাম গতকাল শনিবার খাগড়াছড়ির বিচারিক হাকিম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এ কথা বলেন। পুলিশ এ তথ্য জানিয়েছে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, গত শুক্রবার মাটিরাঙ্গার আদর্শপাড়া এলাকা থেকে রবিউলকে (৩৫) গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁর বাড়ি আদর্শপাড়ায়। গত মঙ্গলবার রাতে একই গ্রামের কৃষক নজরুল (৫১) খুন হওয়ার পর থেকে তিনি পলাতক ছিলেন। এই হত্যা মামলার চার আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। অন্য তিনজন হলেন একই গ্রামের মো. সবুজ, মো. হাশেম ও মো. মীর হোসেন। নজরুল খুন হওয়ার পর পাঁচজনের বিরুদ্ধে মাটিরাঙ্গা থানায় হত্যা মামলা করা হয়। আরেক আসামি পলাতক। তিনি রবিউলের বড় ভাই মো. খোরশেদ।
শুক্রবার দুপুরে মাটিরাঙ্গা থানায় আলাপ হয় রবিউলের সঙ্গে। এ সময় তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘নজরুলকে পিটুনি দেওয়ার কথা থাকলেও তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্য তাঁদের ছিল না। তাঁর ওপর আমরা ক্ষুব্ধ ছিলাম। কারণ তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থীর ভোটের সভায় কী কথা হতো, তা বিএনপির প্রার্থীকে জানাতেন বলে আমাদের সন্দেহ হয়েছিল। মঙ্গলবার রাতে আমি, নজরুল ও মীর হোসেন স্থানীয় একটি চায়ের দোকানে বসে চা পান করি। এরপর আমি দোকান থেকে বের হয়ে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে আমাদের গ্রামের রমিজ কেরানিপাড়ার একটি বাঁশঝাড়ের কাছে অবস্থান করি। পরে নজরুল ও মীর হোসেন সেখানে আসেন। একপর্যায়ে মীর হোসেন নজরুলকে ধাক্কা দিয়ে মাটির ওপর ফেলে দেয় এবং ইট দিয়ে নাকের ওপর আঘাত করে। এরপর আমি কয়েকটি লাথি মারি। নজরুলের কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে চলে যাই।’ নজরুলের ওপর ক্ষুব্ধ হওয়ার কারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তিনি নির্বাচনের সব তথ্য মুঠোফোনে রেকর্ড করে বিএনপির প্রার্থীর কাছে প্রকাশ করতেন। তবে তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্য আমাদের ছিল না।’
আদর্শপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মো. আলী আজম, কালাচান, হুমায়ুন কবীর ও ফাতেমা বেগম বলেন, নজরুল খুব ভালো মানুষ ছিলেন। শুধু আওয়ামী লীগের নির্বাচনী খবর বিএনপির প্রার্থীর কাছে মুঠোফোনে রেকর্ড করে শোনানোর সন্দেহে মানুষটি খুন হলেন। এ ঘটনার পর থেকে গ্রামের মানুষের মধ্যে আতঙ্কা বিরাজ করছে।
মাটিরাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাহাদাত হোসেন বলেন, রবিউল গতকাল খাগড়াছড়ির বিচারিক হাকিম তাওহিদুল ইসলামের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এ ছাড়া বৃহস্পতিবার মামলার আরেক আসামি মো. মীর হোসেন এই হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আবু সুফিয়ানের কাছে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। এর আগে বুধবার খুনের একজন সাক্ষী প্রত্যক্ষদর্শী মো. সোহাগ খাগড়াছড়ির মুখ্য বিচারিক হাকিম সাইফুল ইসলামের কাছে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।
এদিকে কৃষক নজরুলকে উপজেলা কৃষক দলের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি বলে দাবি করেছেন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম। তবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মেয়র পদপ্রার্থী সামসুল হক দাবি করেন, নজরুল গত বছরের ১১ নভেম্বর যুবলীগে যোগদান করেছিলেন।