নিজামীর ফাঁসির দণ্ড বহাল

মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির দণ্ড বহাল রেখেছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত।

আজ বুধবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেন।

আপিল বিভাগ তিনটি অভিযোগে নিজামীর ফাঁসি বহাল রেখেছেন। দুটি অভিযোগে তাঁর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রাখা হয়েছে। ফাঁসির সাজার একটি অভিযোগসহ তিনটি অভিযোগ থেকে তাঁকে খালাস দেওয়া হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধকালে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের নীলনকশা বাস্তবায়নকারী গুপ্তঘাতক আলবদর বাহিনীর প্রধান নিজামীকে ২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।

ট্রাইব্যুনালে নিজামীর বিরুদ্ধে ১৬টি অভিযোগের মধ্যে আটটি প্রমাণিত হয়। এর মধ্যে বুদ্ধিজীবী হত্যা, গণহত্যাসহ চারটি অভিযোগে (২, ৪, ৬ ও ১৬) নিজামীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। হত্যা, অপহরণ ও নির্যাতনের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের ষড়যন্ত্র ও সহযোগিতা করার চারটি অভিযোগে (১, ৩, ৭ ও ৮) তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। বাকি আটটি অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় সেগুলো থেকে তাঁকে খালাস দেন ট্রাইব্যুনাল।

আপিলে পাঁচটি অভিযোগে (২, ৬, ৭, ৮ ও ১৬) নিজামীর সাজা বহাল রেখেছেন সর্বোচ্চ আদালত। এর মধ্যে ২, ৬ ও ১৬ নম্বর অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড এবং ৭ ও ৮ নম্বর অভিযোগে তাঁর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। আপিলে তিনটি অভিযোগ (১, ৩ ও ৪) থেকে তাঁকে খালাস দেওয়া হয়েছে।

গত ৮ ডিসেম্বর নিজামীর আপিলের ওপর দুই পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষ হয়। এরপর আপিল বিভাগ রায় ঘোষণার তারিখ ৬ জানুয়ারি ধার্য করেন।

নিজামীর আপিলের রায়টি জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে পঞ্চম রায়। অপর চারটি রায় হয়েছে দলটির সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, দুই সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ও আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে। এঁদের মধ্যে রায়ে ফাঁসি বহাল থাকায় মুজাহিদ, কামারুজ্জামান ও কাদের মোল্লার দণ্ড কার্যকর হয়েছে। সাঈদীর আমৃত্যু কারাদণ্ডের পূর্ণাঙ্গ রায় ৩১ ডিসেম্বর প্রকাশিত হয়েছে।

ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে করা এক মামলায় ২০১০ সালের ২৯ জুন নিজামীকে গ্রেপ্তার করা হয়। একই বছরের ২ আগস্ট তাঁকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

২০১২ সালের ২৮ মে ট্রাইব্যুনাল নিজামীর বিরুদ্ধে ১৬টি অভিযোগ গঠন করে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার বিচার শুরু করেন। ২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর এই মামলার রায়ে নিজামীকে ফাঁসির আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।


রায়ে ট্রাইব্যুনাল বলেন, একাত্তরে নিজামী ছিলেন জামায়াতের তৎকালীন ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতি। ছাত্রসংঘই পরে আলবদর বাহিনীতে পরিণত হয়, আর গুপ্তঘাতক আলবদর বাহিনীই মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিকে পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে মিলে বুদ্ধিজীবী নিধন চালায়। আলবদর বাহিনীর অপরাধ ও কৃতকর্মের দায়-দায়িত্ব নেতা হিসেবে নিজামীর ওপর বর্তায়।


ট্রাইব্যুনাল বলেন, অথচ এটা বিশ্বাস করতেই কষ্ট হয়, স্বাধীনতার সক্রিয় বিরোধিতাকারী এমন এক ব্যক্তিকে এই রাষ্ট্রের মন্ত্রী করা হয়েছিল। তাঁকে মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করা ছিল তৎকালীন সরকারের গুরুতর ভুল এবং মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদ ও সম্ভ্রমহারা দুই লাখ নারীর গালে সরাসরি চপেটাঘাত। এ ধরনের লজ্জাজনক কাজ গোটা জাতির জন্য অবমাননাকর।


নিজামী ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শিল্পমন্ত্রী ছিলেন।


ট্রাইব্যুনালের ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন নিজামী। গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর আপিলের শুনানি শুরু হয়। ১১ কার্যদিবস শুনানি শেষে ৮ ডিসেম্বর মামলার কার্যক্রম শেষ হয়। আজ আপিল মামলার রায় ঘোষণা করা হলো।