মানুষের সেতুতে ছাগলের বিচরণ

মানুষের চলাচলের জন্য তৈরি করা হয়েছে পদচারী-সেতু। কিন্তু মানুষেরই দেখা নেই। অগত্যা ছাগলের দখলে চলে গেছে সেতুটি। ছবিটি সম্প্রতি তোলা l প্রথম আলো
মানুষের চলাচলের জন্য তৈরি করা হয়েছে পদচারী-সেতু। কিন্তু মানুষেরই দেখা নেই। অগত্যা ছাগলের দখলে চলে গেছে সেতুটি। ছবিটি সম্প্রতি তোলা l প্রথম আলো

রেলযাত্রীদের সুবিধার জন্য পদচারী-সেতুটি তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু সেই যাত্রীরাই সেতুটি ব্যবহার করছেন না। তাঁরা ঝুঁকি নিয়ে এখনো ট্র্যাক (ট্রেন চলাচলের পথ) ব্যবহার করছেন। যাত্রীদের চলাচল না থাকায় সেতুটি মাদকসেবী ও গবাদিপশুর দখলে চলে গেছে।
সিলেট রেলওয়ে স্টেশনের যাত্রীদের সুবিধার্থে স্টেশনের অভ্যন্তরে ২০০৪ সালের ১৬ জুলাই পদচারী-সেতুটি তৈরি করা হয়। কিন্তু যাত্রীরা সেটি ব্যবহার না করে ঝুঁকি নিয়ে ট্র্যাক পাড়ি দিয়ে স্টেশনের এপার-ওপার যাচ্ছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ১০টায় এই স্টেশন থেকে যাত্রীবাহী ‘পাহাড়িকা ট্রেন’ চট্টগ্রামের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। এর আগে সকাল সোয়া নয়টা থেকে ট্রেনটি ছাড়ার আগ পর্যন্ত স্টেশনে অবস্থান নিয়ে দেখা যায়, এক ঘণ্টায় ৫২ জন যাত্রী পদচারী-সেতু ব্যবহার না করে ট্র্যাক অতিক্রম করেছেন। এই সময়ের মধ্যে পদচারী-সেতু ব্যবহারকারীর সংখ্যা মাত্র ১৩ জন।
স্টেশনে অবস্থানকারী অন্তত ১২ জন যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পদচারী-সেতুটি রেলযাত্রীরা ব্যবহার না করায় এটি মাদকসেবীদের দখলে চলে গেছে। সেতুর ওপর নিয়মিত তাদের আড্ডা বসে। এ ছাড়া মাঝেমধ্যে ছাগলও দেখা যায়। এগুলো দল বেঁধে সেতুর ওপর বিচরণ করে। ফলে প্রায়ই নোংরা হয়ে থাকে সেতুটি।
সকাল সোয়া নয়টার দিকে পদচারী-সেতুর নিচ দিয়ে ট্র্যাক অতিক্রম করছিলেন সিলেট নগরের বিলপাড় এলাকার বাসিন্দা শাহীনা আক্তার। তিনি বলেন, ‘ট্রেন ছাড়ার আরও অনেক দেরি। তাই রেললাইনের ওপর দিয়া যাইতাছি। ট্রেন ছাড়লে অবশ্য ওভারব্রিজ দিয়াই যাইতাম।’
আরেক রেলযাত্রী কামাল মিয়া বলেন, ‘কেউই তো ওভারব্রিজ দিয়া যাচ্ছে না। তাই আমিও যাচ্ছি না।’
তবে প্রায় একই সময়ে পদচারী-সেতুটি দিয়ে এক পাশ থেকে আরেক পাশে যাচ্ছিলেন রবিউল আলম নামের এক যাত্রী। তিনি বলেন, ‘সেতুটি তৈরিই হয়েছে যাত্রীদের নিরাপদে চলাচলের জন্য। সেটি রেখে অনিরাপদে কেন চলাচল করব?’
গত দেড় মাসে এই নিয়ে তিন দিন স্টেশনটি ঘুরে দেখা গেছে, বেশির ভাগ যাত্রীই পদচারী-সেতু ব্যবহার করেন না। সেই সুযোগে সেতুতে বখাটে যুবকেরা জটলা বেঁধে মাদক সেবন করে। ছাগলের বিচরণ ছিল প্রতিদিনই।

তবে সিলেট রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের দাবি, বিচ্ছিন্ন দু-একটি ঘটনা ছাড়া স্টেশন এলাকায় মাদকসেবীদের কোনো আড্ডা বসে না। এ ধরনের কোনো কার্যকলাপ চোখে পড়লে তাৎক্ষণিক পুলিশ ব্যবস্থা নিয়ে থাকে।

স্টেশনের মাস্টার কাজী শহিদুর রহমান বলেন, ‘সামান্য কষ্ট করে সিঁড়ি মাড়িয়ে ওপরে উঠতে হবে বলে আলসেমি করে অনেকে পদচারী-সেতুটি ব্যবহার করছেন না। অথচ যাত্রীদের সেতু ব্যবহারে আমরা নিয়মিত সচেতনতা কার্যক্রম চালাই।’ তিনি জানান, স্টেশন এলাকার আশপাশে কয়েকটি বস্তি রয়েছে। সেখানকার ছাগলগুলো সেতু ও রেকে অবাধে ঘোরাফেরা করে।