দু-এক দিনের মধ্যে মহাজোট ছেড়ে নতুন জোট

অচিরেই একটি রাজনৈতিক জোট গঠন করার ঘোষণা দিয়েছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ। একই সঙ্গে আগামী দু-এক দিনের মধ্যে মহাজোট ছাড়ারও ঘোষণা দেন তিনি।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর বনানীতে জাপার কার্যালয়ে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কিছু ছাত্রছাত্রীর জাতীয় ছাত্রসমাজে যোগদান অনুষ্ঠানে এরশাদ এ ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ‘অচিরেই জোটের ঘোষণা দেব। এ জোট হবে একটি শক্তিশালী জোট।’

এর আগে গত বুধবার রাতে এরশাদ একটি বিকল্প জোট গঠন করার লক্ষ্যে বিকল্পধারার সভাপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বারিধারার বাসায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে বৈঠক করেন।

ওই বৈঠকের বিষয়ে ইঙ্গিত করে এরশাদ বলেন, ‘আমরা জোট করব। কথা হয়েছে আমার সঙ্গে, তাঁরা রাজি হয়েছেন। আরও অনেকে এ জোটে আসবে। দেশকে অশুভ শক্তির হাত থেকে বাঁচাতে হলে জোটের কোনো বিকল্প নেই।’

এরশাদ প্রধান দুই জোটের নাম উল্লেখ করে বলেন, ‘১৮-দলীয় জোট ও ১৪ দলে কত দল আছে, তাদের নাম জোটের লোকেরাই বলতে পারবে না। আমরা এমন জোট করব, যাদের নাম সবাই বলতে পারবে।’

জাপার দলীয় সূত্র জানায়, সকালে মহাজোট ছাড়ার ঘোষণা দিয়ে বিকেলেই নতুন জোটের ঘোষণা দেওয়ার কথা চিন্তা করা হচ্ছে। তবে সেটা কোন দিন হবে, তা ঠিক হয়নি। এই জোটে আনতে দুটি ধর্মভিত্তিক দল চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন ও প্রয়াত শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সঙ্গেও কথা হচ্ছে।

নতুন জোটের বিষয়ে কথা বলতে গতকাল সকালে এরশাদের বাসায় যান বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান।

সব দলের অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচনে যাবেন না বলে কয়েক দিন ধরে জোরালো কথাবার্তা বলছেন মহাজোটের দ্বিতীয় বৃহত্তম শরিক দলের প্রধান এরশাদ। যদিও এ নিয়ে সরকার এখন পর্যন্ত জাপার প্রতি কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। এর মধ্যে গতকাল হঠাৎ করেই এরশাদের নতুন রাজনৈতিক জোট করার ঘোষণা রাজনৈতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। এ জোট গঠনের উদ্দেশ্য আসন্ন নির্বাচনে অংশ নেওয়া, নাকি দুই জোটের বাইরে বিকল্প শক্তি হওয়া, বা অন্য কিছুর ইঙ্গিত কি না—তা নিয়ে জাপার ভেতরে-বাইরেও নানা জল্পনা-কল্পনা আছে।

যদিও গতকাল ছাত্রসমাজের অনুষ্ঠানেও এরশাদ বলেছেন, ‘আমি ঘোষণা করছি, এবার আমরা কারও ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহূত হব না। সব দলের অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচনে যাব না।’ তিনি এও বলেন, জাতীয় পার্টি নির্বাচনে না গেলে নির্বাচন হবে না।

জাপার চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নাম উল্লেখ করে বলেন, ‘এ দুই দল আজ অভিশাপ, রাহু। এই রাহুর হাত থেকে দেশকে মুক্ত করতে হবে। উই ক্যান্ট ফেইল (আমরা ব্যর্থ হতে পারি না)। আল্লাহ পাক সুযোগ দিয়েছেন। এ সুযোগ আমরা কাজে লাগাব।’

 এরশাদের জোট গঠনের ঘোষণা সম্পর্কে কথা বললে জাপার নেতাদের মধ্যে দুই রকম প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। এক পক্ষ এ ঘোষণাকে খুব একটা গুরুত্ব দিতে চাইছে না। তারা মনে করছে, নানা স্বার্থের কারণে নতুন জোট বেশি দূর আগাবে না। তবে আরেক পক্ষ মনে করছে, নতুন এ জোট সরকারের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হবে না। কারণ হিসেবে তারা বলছে, এ জোট কার্যকর থাকলে প্রধান বিরোধীদলীয় জোটের আন্দোলনের গতি কিছুটা ধাক্কা খেতে পারে। এতে মানুষের দৃষ্টি কিছুটা ভাগাভাগি হয়ে যেতে পারে।

যোগদান অনুষ্ঠানে জাতীয় ছাত্রসমাজের আহ্বায়ক মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে জাপার সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর আহমদ, কাজী ফিরোজ রশীদ, জিয়াউদ্দিন আহমেদ, দলের মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার প্রমুখ বক্তব্য দেন।