বরিশালে ১৬টি ঘরে আগুন

বরিশালে গতকাল বৃহস্পতিবার দুই পক্ষের সংঘর্ষে একজন নিহত ও তিনজন গুরুতর আহত হওয়ার পর আজ শুক্রবার আরও একজনের মৃত্যুর গুজবে বিক্ষুব্ধ লোকজন একটি গ্রামের চারটি বাড়ির ১৬টি ঘরে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। সদর উপজেলার চরকাউয়া ইউনিয়নের কালিখোলা গ্রামে এই অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। বাড়িগুলো হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের।

 পুলিশ গতকালের হত্যার ঘটনায় চার এবং আজকের অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে। 

 
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, গতকাল বিকেলে সদর উপজেলার চরকাউয়া ইউনিয়নের খানপুরা গ্রামে সরকারি মাতৃ বিদ্যালয় মাঠে স্থানীয় যুবক পারভেজ, পাভেল, শামীম ও জহিরুলের সঙ্গে কালিখোলা গ্রামের সোহাগ, ধীমান, পীযূষসহ কয়েকজনের ব্যাডমিন্টন খেলা হয়। খেলার একপর্যায়ে তাঁদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি ও সংঘর্ষ হয়। এ সময় কালিখোলা গ্রাম থেকে আসা যুবকদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে পারভেজ ঘটনাস্থলেই মারা যান।

গুরুতর আহত হন পারভেজের ছোট ভাই পাভেল গাজী (১৮), শামীম গাজী (২২) ও জহিরুল ইসলাম (১৬)। তাঁদের গতকাল রাতেই বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে জহিরুলের অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে উন্নত চিকিত্সার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, কালিখোলা গ্রাম থেকে যাঁরা এসে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে কয়েকজন হিন্দু যুবক ছিলেন।

এদিকে, আজ সকাল ১০টার দিকে জহিরুল মারা গেছে, এমন গুজব ছড়িয়ে পড়লে তার পরিবার ও এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। একপর্যায়ে দুই-আড়াই শ লোক হিন্দু বাড়িতে ‘আগুন দে’ বলে কালিখোলা গ্রামে গিয়ে হিন্দু চারটি পরিবারের ১৬টি বসতঘরে আগুন দেয়।


তবে গতকালের সংঘর্ষের ঘটনার পর থেকে কালিখোলা গ্রামের হিন্দু পরিবারসহ আশপাশের বাড়ির সদস্যরা সম্ভাব্য হামলার আশঙ্কায় অনেকে বাড়ি ছেড়ে বাইরে অবস্থান করছিলেন। দু-একজন যাঁরা বাড়িতে ছিলেন, তাঁরাও আজ আগুন ধরিয়ে দেওয়ার সময় ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন। পরে ফায়ার সার্ভিস ও এলাকাবাসী আগুন নেভায়।

 
আগুন দেওয়া হয়েছে, এমন একটি বাড়ির সদস্য হিমেল হালদার প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, ‘গতকালের ঘটনার পরপরই এলাকায় উত্তেজনা চলছিল। আজ সকাল ১০টায় হঠাত্ দেখতে পাই দুই-আড়াই শ মানুষ “আগুন দে! আগুন দে!” বলে আমাদের বাড়ির দিকে আসে। একপর্যায়ে তারা আগুন জ্বালিয়ে দেয়। বাড়ির অন্য সদস্যরা ভয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়।’


বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার এ টি এম মুজাহিদুল ইসলাম প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, গতকালের খেলা নিয়ে সংঘর্ষে একজন নিহত ও কয়েকজন আহত হয়। আহতদের মধ্যে ঢাকায় চিকিত্সাধীন একজন আজ মারা গেছে, এমন গুজবের জের ধরে উত্তেজিত এলাকাবাসী ওইসব বাড়িতে আগুন দিয়েছে।


বরিশাল বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল ইসলাম জানান, নিহতের ঘটনায় গতকাল রাতে চারজনকে এবং আগুন দেওয়ার ঘটনায় আজ দুজনকে আটক করা হয়েছে। উভয় পক্ষের মধ্যে পুনরায় হামলার আশঙ্কায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।