দলীয় চেয়ারপারসন নির্বাচন আগে

বিএনপি
বিএনপি

কেন্দ্রীয় কাউন্সিল করার আগে দলের চেয়ারপারসন নির্বাচন করবে বিএনপি। দলটি এবার এক ব্যক্তিকে একটির বেশি পদে না রাখার সিদ্ধান্তও বাস্তবায়ন করতে চায়।
গত শনিবার রাতে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে মার্চের মধ্যে কাউন্সিল করার সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে ছিলেন এমন দুজন নেতা প্রথম আলোকে বলেন, আগামী ১৮-১৯ মার্চ দলের ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কাউন্সিল অনুষ্ঠানের জায়গা পাওয়া না-পাওয়া সাপেক্ষে এই তারিখ বদলাতে পারে। তবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের আগে বিএনপি কাউন্সিল করতে চায়।
কাউন্সিলের আগেই দলের চেয়ারপারসন নির্বাচনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। চেয়ারপারসন নির্বাচনের জন্য একটি কমিশন করা হবে। নির্বাচন কমিশনার হিসেবে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব হোসেন আর রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য জমির উদ্দিন সরকারের নাম আলোচনায় এসেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন বিষয়ে কমিটির দায়িত্বে গতবারের কমিটিগুলোই বহাল থাকবে।
তিন বছর পরপর কাউন্সিল করার কথা থাকলেও এবারের কাউন্সিল হতে যাচ্ছে ছয় বছর পর। সর্বশেষ ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে কাউন্সিল হয়েছিল। মধ্যে ২০১৩ সালের মার্চে কাউন্সিলের ঘোষণা দিলেও তা করতে পারেনি বিএনপি।
দলের গঠনতন্ত্রে বলা আছে, জাতীয় কাউন্সিলের সদস্যদের সরাসরি ভোটে সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে তিন বছরের জন্য দলের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন। বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা মনে করছেন, চেয়ারপারসন পদে খালেদা জিয়ার বিপরীতে কেউ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ইচ্ছা প্রকাশ করবেন না বা ফরম নেবেন না। সে ক্ষেত্রে এখানে আর কাউন্সিলরদের ভোটাভুটিতে যেতে হবে না। খালেদা জিয়া বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আবার দলের চেয়ারপারসন নির্বাচিত হবেন।
সাধারণত দলের কাউন্সিলে কাউন্সিলররা চেয়ারপারসনকে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি গঠনের ক্ষমতা দিয়ে থাকেন। এবারও তেমনটি হবে বলে তাঁরা মনে করছেন। সেটি হলে দলের মহাসচিব থেকে শুরু করে সব নেতা মনোনীত করার ক্ষমতা পাবেন খালেদা জিয়া। গত কাউন্সিলেও এমনটি হয়েছিল।
চেয়ারপারসন নির্বাচনের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী অতীতে যেভাবে চেয়ারপারসন নির্বাচন ও কাউন্সিল হয়েছে, এবারও সেভাবেই হবে। তার প্রক্রিয়াও শুরু হচ্ছে। তিনি আশা করেন, কাউন্সিলের মাধ্যমে সঠিক নেতৃত্ব বেরিয়ে আসবে। যাঁরা একনিষ্ঠ, দলের জন্য ত্যাগ আছে, যাঁদের নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই—এমন ব্যক্তিরা নেতৃত্বে আসবেন। এতে দল আরও শক্তিশালী হবে।
এখন বিএনপিতে অনেক নেতা আছেন, যাঁরা একই সঙ্গে একাধিক পদে আছেন। যেমন দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একই সঙ্গে কৃষক দলের সভাপতির দায়িত্বেও আছেন। বৈঠক সূত্র জানায়, গত শনিবার স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ‘এক নেতা এক পদ’ নীতিতে যাওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। খালেদা জিয়া নিজেও এটি চান। তবে বৈঠকে ভিন্নমতও এসেছে। এটি করতে হলে গঠনতন্ত্রে সংশোধনী আনতে হবে।
সূত্র জানায়, স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এক নেতা এক পদের পাশাপাশি যাঁরা অতীতে বিএনপি থেকে সংসদ নির্বাচন করেছেন, তাঁদের জেলা বা উপজেলা পর্যায়ের মূল পদে না রাখার প্রস্তাব ওঠে। সদস্যদের কেউ কেউ এর বিরোধিতা করেছেন। তাঁরা যুক্তি দিয়েছেন, এতে এমন ধারণা জন্মাতে পারে যে জেলা-উপজেলার নেতা হলে সংসদ নির্বাচন করা যাবে না। এ বিষয়েও শেষ পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি।
দলীয় সূত্র জানায়, এবারের কাউন্সিলকে ঘিরে নেতা-কর্মীদের নজর থাকবে মূলত মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মহাসচিব হচ্ছেন, নাকি নতুন কেউ আসছেন। সেই সঙ্গে স্থায়ী কমিটিতেও পাঁচ-ছয়টি নতুন মুখ আসতে পারে। তবে মির্জা ফখরুলের বিরোধী হিসেবে পরিচিত একটি অংশ চায় না এবারের কাউন্সিলে তাঁকে পূর্ণাঙ্গ মহাসচিব করা হোক।
বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটি ১৯ সদস্যের। দলের চেয়ারপারসন, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও মহাসচিব পদাধিকারবলে এই কমিটির সদস্য। ১৯ সদস্যের মধ্যে খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন মারা গেছেন। সম্প্রতি মারা গেছেন আর এ গণি। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। এর বাইরে আরও দু-তিনজন বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগছেন।
দলীয় সূত্র জানায়, বিএনপির নেতাদের কেউ কেউ চান দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে কো-চেয়ারম্যান করা হোক। গত কাউন্সিলের আগেও এ দাবি উঠেছিল। এটি করতে হলেও গঠনতন্ত্রে সংশোধনী আনতে হবে। দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের দুজন নেতা প্রথম আলোকে বলেন, তারেক রহমানকে কো-চেয়ারম্যান করার দরকার নেই। কারণ, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান পদ সম্পর্কে গঠনতন্ত্রে বলা আছে, চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতে তিনি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন। কোনো কারণে চেয়ারম্যানের পদ শূন্য হলে তিনি বাকি মেয়াদের জন্য চেয়ারম্যান থাকবেন।
কাউন্সিলের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় প্রথম আলোকে বলেন, দল সুসংগঠিত করার জন্য কাউন্সিল হয়। অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ চিন্তা করে দায়িত্ব বণ্টন করা হয়। যাঁরা অতীতে ব্যর্থ হয়েছেন, তাঁরা বাদ যাবেন। আর যাঁদের ত্যাগ ছিল, তাঁদের মূল্যায়ন করা হবে।