ন্যূনতম নাগরিক সেবা মেলে না

শেরপুরের শ্রীবরদী পৌরসভাটি ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত। এই এক যুগেও এখানে পৌর ভবন নেই। নেই ন্যূনতম নাগরিক সুবিধাও। সবচেয়ে বড় সমস্যা পানি ও পয়োনিষ্কাশন নিয়ে। পৌরবাসী এটিকে নামমাত্র পৌরসভা বলে থাকে।
পৌর কার্যালয় সূত্র জানায়, শ্রীবরদী উপজেলার সাতানী মথুরাদী এলাকার দুই কিলোমিটার অংশে মূল পৌর শহর। এই পৌরসভায় লক্ষ্যমাত্রার ৫০ থেকে ৫৫ শতাংশ রাজস্ব আদায় হলেও নাগরিক পরিষেবা বাড়েনি।
পৌরসভার একাধিক নাগরিক বলেন, পৌরসভার উদ্যোগে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা নেই। পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থা বেহাল। বর্জ্য অপসারণের ব্যবস্থা নেই। শহরের প্রধান সড়কটি ছাড়া অধিকাংশ সড়কই খারাপ। কয়েকটি এলাকায় এখনো বিদ্যুৎ পৌঁছায়নি।
পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, পৌরসভার আয়তন ১১ বর্গকিলোমিটার। জনসংখ্যা ২৮ হাজার ৪০৪ জন। ২০১১ সালে প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল হাকিম। সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে মেয়র হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মো. আবু সাঈদ। ‘গ’ শ্রেণির এই পৌরসভার নাগরিকেরা ১০ থেকে ১২ ধরনের সেবা পাওয়ার কথা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: আবাসিক, শিল্প ও বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহারের জন্য পানি সরবরাহ, পয়োনিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, যাত্রীছাউনি, সড়কবাতি, যানবাহনের পার্কিং স্থান ও বাসস্ট্যান্ড নির্মাণ, শিক্ষা, খেলাধুলা, চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা করা এবং সৌন্দর্য বৃদ্ধিকরণ।
কলাকান্দা এলাকার ব্যবসায়ী মুনছুর আলীসহ একাধিক নাগরিক বলেন, জন্ম-মৃত্যুর নিবন্ধন, নাগরিক সনদপত্র, ব্যবসার ছাড়পত্র—এ ধরনের সেবা ছাড়া তাঁরা নির্ধারিত অনেক সেবাই পান না।
পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী সাইদুল ইসলাম বলেন, সাবেক ইউনিয়ন পরিষদের পরিত্যক্ত ভবনে পৌরসভার কাজ চলছে। বর্ষায় এ ভবনে পানি চুইয়ে পড়ে। ফলে দাপ্তরিক কাজকর্মে বিঘ্ন ঘটে।
বর্তমান মেয়র আবদুল হাকিম বলেন, সরকার বছরে মাত্র ৪০ লাখ থেকে ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়। এ দিয়ে তেমন কাজ করা সম্ভব হয় না। অধিকাংশ রাস্তা সওজ, এলজিইডি ও জেলা পরিষদের হওয়ায় তাদের অর্থায়ন ছাড়া কাজ করা সম্ভব নয়। বর্তমানে সাড়ে তিন কিলোমিটার সড়কের উন্নয়নকাজ চলছে।
ভাঙা রাস্তা: পৌরসভার প্রকৌশল কার্যালয় সূত্র জানায়, এখানকার অধিকাংশ সড়কই সড়ক ও জনপথ (সওজ), স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এবং জেলা পরিষদের। পৌরসভার নিয়ন্ত্রণাধীন পাকা সড়ক আছে দুই কিলোমিটার। আধা পাকা আছে ছয় কিলোমিটার। এর অধিকাংশই ভাঙা।
গত বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, শহরের শেখদী মোড় থেকে শেখদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত এক কিলোমিটার আধা পাকা সড়কটির বিভিন্ন স্থানে ভেঙে গিয়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।
পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা বেহাল: পৌরসভা সূত্র জানায়, শহরে দেড় কিলোমিটার নালা আছে। এগুলোর অবস্থা করুণ। ফলে পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা নাজুক। সামান্য বৃষ্টিতেই শ্রীবরদী বাজার এলাকা পানিতে সয়লাব হয়ে জলাবদ্ধতা হয়। তখন ময়লা-আবর্জনাযুক্ত পানি দোকান ও বাসায় ঢোকে।
সরেজমিনে দেখা যায়, শহরের প্রাণকেন্দ্র শ্রীবরদী উত্তরবাজার থেকে মধ্যবাজার এলাকা পর্যন্ত পানি নিষ্কাশনের নালাগুলো বর্জ্য ও আবর্জনায় ভরে আছে। পানি যাওয়ার ব্যবস্থা নেই। রাস্তা ও নালা একাকার। সড়কের বিভিন্ন স্থানে বর্জ্য পড়ে আছে। এসব থেকে দুর্গন্ধ বের হয়ে পরিবেশ দূষণ করছে।
শ্রীবরদী বাজার এলাকার বীরেন্দ্র চন্দ্র বর্মণ পানি ও পয়োনিষ্কাশনের অব্যবস্থাপনাকে শহরের প্রধান সমস্যা বলে মনে করেন।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, জালকাটা, পোড়াগড়, কলাকান্দা ও শেখদী এলাকার বিভিন্ন অংশে বিদ্যুৎ পৌঁছায়নি। দুই থেকে তিনটি এলাকা ছাড়া কোথাও সড়কবাতি নেই। প্রায় সারা বছর, বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে পৌরবাসী পানির সংকটের শিকার হয়।
নবনির্বাচিত মেয়র আবু সাঈদ প্রথম আলোকে বলেন, তিনি পৌরভবন নির্মাণ, রাস্তাঘাট সংস্কার, বর্জ্য অপসারণ, পানি ও পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থার উন্নয়নসহ শ্রীবরদীকে মডেল পৌরসভা হিসেবে গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবেন।