কুপিয়ে ও ইটের আঘাতে দুই গৃহবধূকে হত্যা

শরীয়তপুর সদর উপজেলার পূর্ব সোনামুখী গ্রামে এক প্রবাসীর স্ত্রীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে জেবুননেছা বেগম নামের ওই গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত জেবুননেছা ওই গ্রামের পোল্যান্ডপ্রবাসী মজিবুর রহমানের স্ত্রী। মাথায় কুপিয়ে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে।
এদিকে রাজবাড়ীর পাংশায় স্বামীর ইটের আঘাতে স্ত্রী নিহত হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল সকালে পুলিশ অর্চনা রানী দাস নামের ওই গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করেছে। তিনি পাংশার মাগুড়াডাঙ্গী গ্রামের ঋষিপাড়া এলাকার বাসিন্দা রাজকুমার দাসের স্ত্রী।
শরীয়তপুর সদর থানা সূত্র জানায়, উপজেলার বাসিন্দা পোল্যান্ডপ্রবাসী মজিবুর রহমানের স্ত্রী জেবুননেছা (৪৫) বুধবার রাতে নিজ ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। দিবাগত রাত দুইটার দিকে তাঁর চার বছর বয়সী মেয়ের চিৎকারে পরিবারের সদস্যরা ঘরে ঢুকে দেখেন, মেঝেতে জেবুননেছার রক্তমাখা লাশ পড়ে রয়েছে। পরে পুলিশ গতকাল সকালে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তর জন্য শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। জেবুননেছা পাশের সোনামুখী গ্রামের আবদুল মোতালেব সরদারের মেয়ে। ১৫ বছর আগে তাঁদের বিয়ে হয়। তাঁর স্বামী দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসী।
জেবুননেছার ভাশুর করিম ব্যাপারী বলেন, ‘রাত নয়টা পর্যন্ত জেবুননেছা আমার আরেক ভাইয়ের স্ত্রীর সঙ্গে গল্প করছিল। এ সুযোগে দুর্বৃত্তরা তার ঘরে প্রবেশ করে পালিয়ে থাকতে পারে। রাতে তারা ঘরের আলমারি ভেঙে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার নিয়ে যায়। আমাদের ধারণা, জেবুননেছা দুর্বৃত্তদের চিনে ফেলায় তাকে হত্যা করা হয়েছে। আমাদের সঙ্গে কারও কোনো শত্রুতা নেই। ডাকাতি করতে এসেই আমার ভাইয়ের স্ত্রীকে হত্যা করা হয়।’
জেবুননেছার চাচা মান্নান সরদার বলেন, ‘পরিকল্পিতভাবে আমার ভাইজিকে হত্যা করা হয়েছে। কোনো ডাকাতির ঘটনা ঘটেনি। ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য তার শ্বশুরবাড়ির মানুষ ডাকাতি করতে এসে হত্যা করা হয়েছে—এমন প্রচারণা চালাচ্ছে। আমরা পারিবারিকভাবে বসে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব।’
শরীয়তপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খলিলুর রহমান বলেন, হত্যাকাণ্ডটি রহস্যজনক। এ ঘটনায় গতকাল বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত মামলা হয়নি। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত লোকদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
এদিকে পাংশা থানার পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দা সূত্র জানায়, বুধবার রাতে দাম্পত্য কলহের জের ধরে রাজকুমার দাস (৩২) ও অর্চনা রানী দাসের (২৯) মধ্যে ঝগড়া হয়। একপর্যায়ে স্ত্রীকে ইট দিয়ে আঘাত করেন স্বামী রাজকুমার। এতে নাক ও মুখ দিয়ে রক্তপাত হওয়ার কিছুক্ষণ পরে অর্চনা রানী দাস মারা যান। খবর পেয়ে সকালে বাড়ি থেকে অর্চনার লাশ উদ্ধার ও তাঁর স্বামীকে আটক করে পুলিশ।
নিহত অর্চনার ভাই মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার চাকদাহ গ্রামের বাসিন্দা হরি দাস বলেন, ১২-১৩ বছর আগে তাঁর বোনের সঙ্গে রাজকুমারের বিয়ে হয়। তাঁদের ঘরে তিনটি সন্তান রয়েছে। কিন্তু বিয়ের পর থেকে যৌতুকসহ নানা কারণে তাঁর বোনকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হতো।
পাংশা থানার ওসি আবু শামা মো. ইকবাল হায়াত বলেন, লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। নিহত অর্চনার ভাই বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। আসামিকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।