আসমাউলের লেখাপড়া কি বন্ধ হবে!

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার ফুলবাড়ী ইউনিয়নের ভাগদরিয়া গ্রামের আসমাউল হুসনা বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। কিন্তু টাকার অভাবে তাঁর লেখাপড়া এখন বন্ধ হওয়ার পথে।
এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আসমাউল হুসনা ভাগদরিয়া গ্রামের মরহুম আশরাফুল ইসলামের মেয়ে। আশরাফুল গোবিন্দগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ছিলেন। সামান্য বেতনের চাকরি। এরপরও খেয়ে না-খেয়ে আশরাফুল দুই মেয়েকে লেখাপড়া করাতেন। কিন্তু বিধিবাম।
গত ১৪ জানুয়ারি হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে আশরাফুল মারা যান। তিনি ছিলেন সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তাঁর মৃত্যুতে আশরাফুলের স্ত্রী শাহানা বেগম সন্তানদের নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
আশরাফুলের চার মেয়ের মধ্যে আসমাউল হুসনা সবার বড়। আসমাউল হুসনা ২০০৭ সালে কুঞ্চমালঞ্চ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে ও ২০১০ সালে গোবিন্দগঞ্জ বিএম বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে অষ্টম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পান, একই বিদ্যালয় থেকে ২০১৩ সালে এসএসসিতে জিপিএ-৫ এবং ২০১৫ সালে গোবিন্দগঞ্জ মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পান। বর্তমানে আসমাউল হুসনা ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। তাঁর স্বপ্ন ভালো শিক্ষক হওয়া।
আসমাউল হুসনার ছোট বোন তামান্না ইয়াসমিন বাকপ্রতিবন্ধী। সে লেখাপড়া করতে পারেনি। অপর ছোট দুই বোনের মধ্যে তানিয়া সুলতানা গোবিন্দগঞ্জ বিএম বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে এবং লামিয়ার বয়স এখন এক বছর।
শাহানা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী সামান্য বেতন পেতেন। তা দিয়ে কোনোমতে সংসার চালিয়ে মেয়েদের পড়াশোনা করাচ্ছিলাম। আমাদের ছেলে নেই। আশা ছিল মেয়ে শিক্ষিত হয়ে, চাকরি করবে। সংসারে অভাব থাকবে না। কিন্তু স্বামীর মৃত্যুতে পরিবারে আকাশ ভেঙে পড়ার মতো অবস্থা হয়েছে। স্বামীর কর্মস্থল থেকে কিছু টাকা পেয়েছিলাম, তা-ও খরচ হয়ে গেছে। টাকার অভাবে বড় মেয়ের লেখাপড়া এখন বন্ধ হওয়ার উপক্রম। আসমাউল হুসনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে থাকে। টাকার অভাবে সে বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে পারছে না।’
আসমাউল হুসনা বলেন, ‘কীভাবে লেখাপড়ার খরচ জোগাব, এই চিন্তায় সারা দিন অস্থিরতার মধ্যে কাটাচ্ছি।’