প্রকাশে এগিয়ে কবিতা, বিক্রিতে উপন্যাস

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, পূর্ববঙ্গে বক্তৃতা ১৮৯২–১৯২৬
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, পূর্ববঙ্গে বক্তৃতা ১৮৯২–১৯২৬

একুশে গ্রন্থমেলার ১৬তম দিনে গতকাল মঙ্গলবার বাংলা একাডেমির তথ্যকেন্দ্র বিগত ১৫ দিনের একটি হিসাব দেয়। এ হিসাবে এখন পর্যন্ত মেলায় আসা নতুন বইয়ের তালিকায় সবচেয়ে এগিয়ে আছে কবিতার বই, মোট ৪৬০টি। এরপরই চলছে গল্প-উপন্যাসের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। গল্প ২৯৬টি, উপন্যাস ২৯৯টি। প্রবন্ধ, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি, বিজ্ঞানের বইয়ের অবস্থান বেশ দূরে। এটা হলো প্রকাশের তালিকা। বিগত বছরের মার্চ মাসের ১ তারিখ থেকে এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে আসা বইগুলোকে বইমেলায় নতুন বইয়ের তালিকায় ধরা হয়।

রচনাবলি, আবুল মাল আবদুল মুহিত
রচনাবলি, আবুল মাল আবদুল মুহিত

তবে বিক্রির তালিকার চিত্রটি ভিন্ন। এখানে উপন্যাসের জনপ্রিয়তার ধারেকাছে আর কিছু নেই। অবশ্য মেলায় আসা নতুন কয়েকটি গবেষণা, প্রবন্ধ, রচনাবলি এবং সায়েন্স ফিকশন লড়াইটা জমিয়ে তুলেছে।
বিকেলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কাকলী প্রকাশনীর কর্ণধার এ কে নাছির আহমেদের মুখে প্রসন্ন হাসি দেখা গেল। বেচাকেনার অবস্থা জানতে চাইলে তিনি সামনে থাকা কয়েকজন দর্শক দেখিয়ে বললেন, ‘দেখেছেন সবার হাতে ব্যাগ। এখন ঘোরাঘুরির দিন শেষ। এখন যারা আসছে কিনছে।’ বিক্রির তথ্য দিতে গিয়ে তিনি জানালেন, মুহম্মদ জাফর ইকবালের তিতুনি এবং তিতুনি বইটি দ্বিতীয় মুদ্রণ শেষ হওয়ার পথে। হুমায়ূন আহমেদের গল্পসমগ্র-এর বিক্রি ভালো।
অন্যপ্রকাশ, অনন্যা, অবসর, অন্বেষা , অ্যাডর্ন, সময়, পাঞ্জেরি, তাম্রলিপি, শোভাপ্রকাশ, মাওলার সামনে বইপ্রেমীদের নিত্য হই-হট্টগোল। কারণ একটাই। এসব প্রকাশনী থেকেই বের হয় দেশের সামনের সারির জনপ্রিয় লেখকদের উপন্যাস। এসব প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা জানালেন, দুই সপ্তাহে নতুন বইয়ের বিক্রির তালিকাও পরিষ্কার বুঝিয়ে দিচ্ছে উপন্যাসের এই নিরঙ্কুশ জনপ্রিয়তার কথা।
রবীন্দ্রনাথের নতুন বই: তাই বলে শুধু যে মেলায় উপন্যাসের কাটতি তা নয়। বিকেলে প্রথমা প্রকাশনের সামনে দাঁড়িয়ে এটা পরিষ্কার হলো। এ প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় কেন্দ্রে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পূর্ববঙ্গে বক্তৃতা ১৮৯২-১৯২৬ এবং মহিউদ্দিন আহমদের বিএনপি: সময়-অসময় বই দুটির চাহিদা সব বয়সী পাঠকের।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পূর্ববঙ্গে বক্তৃতা ১৮৯২-১৯২৬ বইটি আলোচনায় আসার কারণ হিসেবে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানটির প্রধান সমন্বয়কারী জাফর আহমদ বলেন, এটিই রবীন্দ্রনাথের পরিকল্পিত কোনো বই, যার প্রথম প্রকাশ ঘটেছে বাংলাদেশে। বইটির ফ্ল্যাপ থেকে জানা গেছে, রবীন্দ্রনাথ তাঁর পূর্ববঙ্গে বক্তৃতা বইটি প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছিলেন ১৯২৬ সালে পূর্ববঙ্গের কয়েকটি জেলায় বক্তৃতাদানের পরপর। বসুমতী সাহিত্য মন্দিরকে এর প্রকাশনার ভার দিয়েছিলেন। নিজে প্রুফ দেখেছিলেন। বক্তৃতাগুলো সম্পর্কে তাঁর দুর্বলতা ছিল।

বিএনপি সময়–অসময়-মহিউদ্দিন আহমদ
বিএনপি সময়–অসময়-মহিউদ্দিন আহমদ

সংবাদপত্রে মুদ্রিত কয়েকটি ভাষণের অপূর্ণতা সংস্কার করে তিনি প্রবাসী, ভারতী, শান্তিনিকেতন, সবুজপত্র পত্রিকায় প্রকাশের জন্য নিজেই পাঠিয়েছিলেন। প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশকে তাঁর উদ্বেগ জানিয়ে লিখেছিলেন, ‘তোমার হাতে বসুমতীর প্রুফ দিয়ে এসেছি। কিন্তু মন সুস্থির হয়নি।’ বইটি অবশ্য শেষ পর্যন্ত প্রকাশিত হয়নি। সেই বই-ই প্রথমা থেকে এবার বের হলো। এটির সম্পাদনা করেছেন ভূঁইয়া ইকবাল।
মেলায় আসা নতুন বইয়ের তালিকায় আলোঘর এনেছে হাসান আজিজুল হকের নির্বাচিত সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক প্রবন্ধ, উৎস প্রকাশন এনেছে আবুল মাল আবদুল মুহিত রচনাবলি, রূপ প্রকাশন এনেছে আবু হেনা রনির খাট ই বন্ধু, মাওলা এনেছে শারমিনী আব্বাসীর অমৃতের পুত্র, বাড কম্প্রিন্ট অ্যান্ড পাবলিকেশনস এনেছে কে এম মাইনুল ইসলামের ক্ষরণ ইত্যাদি।

নির্বাচিত সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক প্রবন্ধ-হাসান আজিজুল হক
নির্বাচিত সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক প্রবন্ধ-হাসান আজিজুল হক

গতকাল মেলায় ভিড় উপচে না পড়লেও কমবেশি সারাক্ষণই বই বিক্রি হতে দেখা গেছে। ছোট-বড় সব প্রতিষ্ঠানেরই বিক্রি হয়েছে। রূপ প্রকাশনের কর্ণধার কাজী আবদুল হক জানালেন, অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় এবার বেশি সাড়া পাচ্ছেন তাঁরা।
সন্ধ্যার আগে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎই কানে এল লালনের গান। গাইছিলেন চুয়াডাঙ্গার দুই বাউল আলম ও রাসেল। বিভিন্ন স্টলের সামনে অনুরোধে গেয়ে শোনান বেশ কয়েকটি গান।
বাংলা একাডেমিতে লিটলম্যাগ চত্বরে শব্দ ঘর-এর তিন বছর পূর্তি ও ২৫তম সংখ্যার মোড়ক উন্মোচন হয়। লেখক ও চিকিৎসক মুহিত কামালের সঞ্চালনায় ওই অনুষ্ঠানে ছিলেন লেখক সেলিনা হোসেন, পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়, সাইমন জাকারিয়া, সুমন্ত আসলাম প্রমুখ।
বিকেলে মেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘মাহমুদ নূরুল হুদা জন্মশতবার্ষিকী’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্বরোচিষ সরকার। আলোচনায় অংশ নেন নেহাল করিম, হাশেম সূফী, শামসুজ জাহান নূর এবং মাহমুদ নুরুল হুদার ভ্রাতুষ্পুত্র এইচ এইচ মাহমুদ। সভাপতিত্ব করেন এনামুল হক।
আজ বুধবার মেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘শওকত ওসমান জন্মশতবার্ষিকী’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। সন্ধ্যায় রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।