বাংলার শেকড় সন্ধানী যাকারিয়া আর নেই

আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া
আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া

কোন পরিচয়ে তার পরিচিতি হবে? ইতিহাসবিদ, প্রত্নতাত্ত্বিক, অনুবাদক, পুঁথিসাহিত্যের গবেষক, সাহিত্যিক, ক্রীড়া সংগঠক, প্রশাসক নাকি একজন ভালো বাবা। এই সব অভিধাই আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়ার নামের আগে যোগ হতে পারে। গতকাল বুধবার ৯৭ বছরের কর্মময় জীবনের সমাপ্তি টেনে চলে গেলেন তিনি। রাজধানীর শমরিতা হাসপাতালে গতকাল বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
প্রথমে শিক্ষক ও পরে সরকারি আমলা হিসেবে কর্মজীবন শুরু করা আবুল কালাম যাকারিয়া প্রায় এক বছর ধরে বেশ কয়েকটি বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। বাংলার শেকড় সন্ধানে আজীবন নিয়োজিত থাকা এই গবেষকের মরদেহ গতকাল জানাজা শেষে রাজধানীর শমরিতা হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়েছে। আজ ভোরে আ ক ম যাকারিয়ার মরদেহ তাঁর জন্মস্থান ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরের দড়িকান্দি গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত করা হবে। মরহুমের পারিবারিক সূত্রে এ কথা জানিয়ে বলা হয়েছে, নিজের জন্মস্থান দড়িকান্দিতে কবর দেওয়ার জন্য তিনি নিজেই বলে গেছেন।
মরহুমের ছেলে মারুফ শমসের যাকারিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত এক মাসে তাঁর শারীরিক অবস্থা জটিল আকার নেয়। জ্ঞান থাকা পর্যন্ত তিনি বাংলার পুঁথিসাহিত্য, ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব নিয়ে করা অসমাপ্ত গবেষণাগুলো নিয়ে চিন্তা করেছেন। আমরা চাই তাঁর অসমাপ্ত ও সমাপ্ত কাজগুলো প্রকাশিত হোক, দেশের মানুষের কাছে তা পৌঁছাক।’
১৯২২ সালের ১ জানুয়ারি জন্ম নেওয়া যাকারিয়া ১৯৪৬-৪৭ সালে অনুষ্ঠিত অবিভক্ত বাংলার শেষ বেঙ্গল সিভিল সার্ভিস প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে ডেপুটি অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে ১৯৪৮ সালে চাকরি শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে সরকারের জেলা প্রশাসক, চট্টগ্রাম উন্নয়ন করপোরেশনের চেয়ারম্যান, স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের যুগ্ম সচিব ও শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব, পরে সংস্কৃতি ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব পদ থেকে ১৯৭৬ সালে অবসর নেন।
আ ক ম যাকারিয়ার মৃত্যুতে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
আ ক ম যাকারিয়া স্বাধীনতার পর ক্রীড়া, শিক্ষা ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিবের দায়িত্বে থাকার ২১টি ক্রীড়া ফেডারেশন গঠন করেন। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সহসভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন, বাংলাদেশ ভলিবল ফেডারেশনের সভাপতি হিসেবে ১০ বছরের অধিক সময় দায়িত্ব পালন করেন।
২০১৫ সালে একুশে পদক পাওয়া যাকারিয়া মূলত প্রত্নতাত্ত্বিক হিসেবে বেশি পরিচিত ছিলেন। তিনি ইতিহাস বিষয়ে নবাব সিরাজউদৌলা, বাঙালির নৃতাত্ত্বিক পরিচিতি, বাংলাদেশের প্রত্নসম্পদ, বাংলাদেশের প্রাচীন কীর্তি দুই খণ্ড, পুঁথি সাহিত্যের বই গুপিচন্দ্রের সন্ন্যাস, গাজী কালু ও চম্পাবতী উপাখ্যান, মূল ফারসি ভাষা থেকে বাংলা ভাষায় অনুবাদ করা মনিহাজ-ই-সিরাজ রচিত তবকাত-ই-নাসিরী, তারিখ-ই-বংগাল-ই-মহাব্বতজঙ্গী, মোযাফফর নামা, নওবাহার-ই-মুর্শিদ কুলী খান, সিয়ার-উল-মুতাখ-খিরিন. কুমিল্লা জেলার ইতিহাস, বরেন্দ্র জেলার ইতিহাস লিখেছেন। সৃজনশীল সাহিত্যের বই এর মধ্যে গ্রামবাংলার হাসির গল্প (দুই খণ্ড), মুক্তিযোদ্ধা, রাজাকার ও একটি তরুণী নামে উপন্যাস লিখেছেন।