তিতুমীর কলেজে শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা

মহাখালীর তিতুমীর কলেজে গতকাল বৃহস্পতিবার শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ হামলা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে ওই প্রতিষ্ঠানের সাত শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। আহত শিক্ষার্থীদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আহত শিক্ষার্থীরা হলেন ইংরেজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র গোলাম কিবরিয়া (২২), ইতিহাস দ্বিতীয় বর্ষের আবদুল মোতালেব (২১), বাংলা তৃতীয় বর্ষের শাহ আলম (২১), বাংলা দ্বিতীয় বর্ষের মো. আসিফ (২০), মার্কেটিং দ্বিতীয় বর্ষের মো. আয়নাল (২০), মো. দিদার বাংলা দ্বিতীয় বর্ষের ও মহেশুর (২১) সমাজবিজ্ঞান দ্বিতীয় বর্ষের।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাঁদের ওপর হামলা করেছেন। তবে কলেজ ছাত্রলীগ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
হাসপাতালে আহত শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, কলেজে বর্ধিত বেতন ও ফি আদায় বন্ধের দাবিতে বেশ কয়েক দিন ধরে আন্দোলন করছেন তাঁরা। তবে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা এর বিরোধিতা করছেন। বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মিরাজুল ইসলাম, বহিষ্কৃত নেতা মানিক, অপু, সানি, দিদারসহ একদল নেতা-কর্মী কলেজের আক্কাছুর রহমান আঁখি ছাত্রাবাসে ঢুকে পড়েন। তাঁরা বিভিন্ন কক্ষের দরজা আটকিয়ে আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের বেধড়ক পেটান। পরে সহপাঠীরা উদ্ধার করে তাঁদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। এর আগে গত বুধবার সকালে ছাত্রলীগের একই গ্রুপ কলেজ চত্বরে মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়ে ১০ জনকে আহত করে।
মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে গতকাল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, এ ধরনের কোনো ঘটনার সঙ্গে তাঁরা জড়িত নন। ছাত্রাবাসে বিভিন্ন অঞ্চলভিত্তিক ছাত্রদের মধ্যে সমস্যা থাকতে পারে। এ জন্য হয়তো কিছু ঘটে থাকতে পারে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মোজাম্মেল হক ঘটনাটি নিশ্চিত করেন।
ছাত্রলীগের পাঁচজন কারাগারে: গত বুধবার মানববন্ধন কর্মসূচিতে হামলার পর আক্কাছুর রহমান আঁখি ছাত্রাবাসে পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়া ছাত্রলীগের পাঁচ কর্মীকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তাঁরা হলেন তিতুমীর কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র কাজী রহমত উল্লাহ, ব্যবস্থাপনা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের সোহেল রানা, বাংলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের জাহিদ হাসান, তৃতীয় বর্ষের জহিরুল ইসলাম ও রসায়ন বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র আরাফাত হাওলাদার। গত বুধবার তিতুমীর কলেজে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে এই পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে তাঁদের বিরুদ্ধে বনানী থানায় মামলা করেন কলেজের মার্কেটিং বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ময়েজ উদ্দিন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বনানী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) এ কে এম নুরুল হক গতকাল ছাত্রলীগের গ্রেপ্তার পাঁচ কর্মীকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত রিমান্ড ও জামিনের উভয় আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, এই আসামিরাসহ অজ্ঞাতনামা ১৫০ জন সন্ত্রাসী ও বিপথগামী ছাত্র লাঠিসোঁটা ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কলেজের বিভিন্ন স্থানে বেপরোয়া ভাঙচুর, হামলা ও সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের মারধর করেন। তাঁদের তাণ্ডবে কলেজে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। পলাতক অপর আসামিদের পূর্ণাঙ্গ নাম-ঠিকানা বের করে গ্রেপ্তারের জন্য এবং ব্যবহৃত অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের জন্য এই আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি।
তদন্তকারী কর্মকর্তা এ কে এম নুরুল হক প্রথম আলোকে বলেন, এই পাঁচজনই কলেজ শাখা ছাত্রলীগের কর্মী। আধিপত্য বিস্তারের জন্যই এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে।