উফশী জাতের করলা বীজ কিনে কৃষক প্রতারিত

উচ্চ ফলনশীল (উফশী) জাতের করলা বীজ কিনে প্রতারণার শিকার হয়েছেন জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার বাখড়া কমলগাড়ি গ্রামের শতাধিক কৃষক। নকল বীজের কারণে ফলন না পেয়ে বিঘাপ্রতি কৃষকদের প্রায় দেড় লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। তদন্তে প্রতারণার সত্যতা মিললেও দেড় মাস পরও কৃষি বিভাগ প্রতারক বীজ ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
কৃষক ও কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বাখড়া কমলগাড়ি গ্রামের শতাধিক কৃষক কয়েক বছর ধরে ধানের বদলে উচ্চ ফলনশীল জাতের করলা চাষ করছেন। গত কয়েক বছর তাঁরা লাল তীর কোম্পানির করলা বীজ কিনে ব্যাপক লাভবান হয়েছেন। তাই বরাবরের মতো এবারও তাঁরা কালাই উপজেলার মোলামগাড়িহাটের বীজ ডিলার সোহেল বীজ ভান্ডার থেকে বীজ কেনেন। ১৭০ টাকার প্রতি প্যাকেটে করলার বীজ থাকে ৫০ থেকে ৫২টি। প্রতি বিঘা জমির জন্য কৃষকদের শুধু চার থেকে পাঁচ হাজার টাকার বীজ কিনতে হয়। অন্যবারের মতো এবারও কৃষকেরা কোম্পানির মোড়ক দেখেই ওই ডিলারের কাছ থেকে বীজ কেনেন। কিন্তু রোপণের পর ৭০ দিন পার হলেও এসব গাছে কোনো করলা ধরেনি। নকল বীজের কারণেই ফলন পাননি বলে কৃষকেরা অভিযোগ করেন।
অভিযোগ পেয়ে জেলা কৃষি বিভাগের তিন সদস্যের একটি তদন্ত দল গত ১৭ সেপ্টেম্বর ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের খেত পরিদর্শন করে বীজ প্রতারণার বিষয়টি নিশ্চিত হন। পরে কৃষি বিভাগ ডিলার সোহেলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট বীজ কোম্পানিসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করে। কিন্তু ওই ডিলারের বিরুদ্ধে আইনগত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
কৃষক তোজামেঞ্চল হোসেন বলেন, তিনি সাড়ে পাঁচ হাজার টাকার বীজ কিনেছেন। কিন্তু ফলন না পাওয়ায় এক বিঘা জমিতে তাঁর দেড় লাখ টাকা লোকসান হয়েছে।
কৃষক রাজ্জাক বলেন, ‘কৃষি বিভাগের তদন্তের পর ডিলার সোহেল আমাদের কয়েকজন কৃষককে ছয় হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন।’ তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘বিঘাপ্রতি যেখানে ক্ষতির পরিমাণ দেড় লাখ, সেখানে ছয় হাজারে কী হবে?’ এসব ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক প্রতারক ডিলারের শাস্তি দাবি করেন।
সোহেল রানা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘ভুলবশত এটা হয়েছে। অভিযোগ পেয়ে তা মীমাংসাও করা হয়েছে।’ লাল তীর কোম্পানির মার্কেটিং বিভাগের জয়পুরহাটের মাঠ কর্মকর্তা আলম হোসেন বলেন, ‘ওই কৃষকদের কাছে যে বীজ সরবরাহ করা হয়েছে তা আমাদের না। তবে সংশ্লিষ্ট ডিলার কৃষকদের সঙ্গে বিষয়টি মিটিয়ে ফেলেছেন বলে শুনেছি।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনোয়ারুল হাসান বলেন, কৃষকের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ডিলারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এ ছাড়া ডিলার নয়, কৃষকদের কাছে সরাসরি বীজ সরবরাহসহ ডিলারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে লাল তীর কোম্পানিকেও চিঠি দেওয়া হয়েছে।