বসবাস শহরে, ছুটছেন গ্রামে

থাকেন শহরে। সারা বছর গ্রামে খুব একটা যান না। অথচ ভোটের আয়োজন শুরু হতেই শহর ছেড়ে তাঁরা পড়ে আছেন নিজ নিজ এলাকায়। ছুটছেন এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ধরনা দিচ্ছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে।

ভোটের আগে নেতাদের এমন আনাগোনায় এখন সরগরম বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি)। ২২ মার্চ প্রথম ধাপে এ উপজেলার ১২টি ইউপির নির্বাচন হবে। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ৬২ প্রার্থীর অন্তত ২৫ জন এলাকায় থাকেন না। এলাকার অন্তত ২৫ জন ভোটারের অভিযোগ, শহর থেকে আসা এ নেতারা প্রয়োজন ছাড়া গ্রামে আসেন না। তাঁরা পরিবার নিয়ে বসবাস করেন শহরে। সেখানে বাড়িও করেছেন কেউ কেউ। ভোট সামনে রেখে এখন শহর ছেড়ে গ্রামমুখী তাঁরা।
ভোটারেরা বলেন, বোহাইল ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী গোলাম মোস্তফা তরফদার বসবাস করেন বগুড়া শহরে। মাঝেমধ্যে তিনি কামালপুর ইউনিয়নের রোহদহ গ্রামেও থাকেন। নিজের ইউনিয়নে থাকেন না। এই ইউনিয়নে বিএনপির প্রার্থী আবদুল মজিদ থাকেন শেরপুর শহরে। স্বতন্ত্র দুই প্রার্থীর মধ্যে মাছুদুল ইসলাম বগুড়া শহরে আর তাহেরুল ইসলাম কামালপুর ইউনিয়নের রোহদহ গ্রামে বসবাস করেন। আবদুল মজিদ বলেন, ‘শহরে বসবাস করলেও চরে বাড়িঘর ও জায়গাজমি আছে। এলাকায় যাতায়াতও করি।’ গোলাম মোস্তফা তরফদার বলেন, ‘যেখানেই থাকি সব সময়ই এলাকাবাসীর পাশে আছি।’
চালুয়াবাড়ী ইউপির বিএনপির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান বসবাস করেন বগুড়া শহরে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তাজুল ইসলামের বসবাস শাহজাহানপুর উপজেলা সদরের মাঝিড়া বন্দর এলাকায়।
কাজলা ইউপির তিন প্রার্থীর সবাই থাকেন বগুড়া শহরে। তাঁরা হলেন আওয়ামী লীগের রাশেদ মোশারফ, বিএনপির এ এস এম রফিকুল ইসলাম ও স্বতন্ত্র প্রার্থী এ বি এম শামস উদ্দিন। তবে রফিকুল ইসলাম নিয়মিত নিজ ইউনিয়নে যাতায়াত করেন।
নারচী ইউপির স্বতন্ত্র প্রার্থী মজনুর রহমানের বাড়ি শেখাহাতি গ্রামে হলেও তিনি বসবাস করেন বগুড়া শহরের চেলোপাড়া এলাকায়। আওয়ামী লীগের প্রার্থী আলতাফ হোসেন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী আবুল কাশেমও বসবাস করেন শহরে।
হাটশেরপুর ইউপিতে বিএনপির প্রার্থী আলিনুর রহমান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হামিদুল ইসলাম—দুজনই বসবাস করেন বগুড়া শহরে। সারিয়াকান্দি সদর ইউপিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাহাম্মত করিম ও বিএনপির প্রার্থী আবদুল কদ্দুস কাইয়ুম বসবাস করেন সারিয়াকান্দি পৌর শহরে।
ফুলবাড়ী ইউপিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাইফুল ইসলাম থাকেন বগুড়া শহরের ঠনঠনিয়া এলাকায়। ভেলাবাড়ী ইউপির বিএনপির প্রার্থী লুৎফুল হায়দার বগুড়া শহরের নাটাইপাড়ায় বসবাস করেন। কর্ণিবাড়ী ইউপিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজাহার আলী বগুড়া শহরের উত্তর চেলোপাড়া এলাকায় বসবাস করেন। এই ইউপির বিএনপির প্রার্থী কাজী জাকির হোসেন বসবাস করেন শেরপুর শহরে।
কুতুবপুর ইউপিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী গাজিউল হক ও বিএনপির প্রার্থী ইমরান আলী থাকেন বগুড়া শহরে। চন্দনবাইশা ইউপির স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহ জিহাদুল ইসলাম ঢাকায় ও শাহাদত হোসেন বগুড়া শহরে বসবাস করেন। এ ছাড়া সারিয়াকান্দি সদর ইউপির স্বতন্ত্র প্রার্থী জাকিউল আলমের বসবাস গাবতলী উপজেলায়।
অবশ্য কুতুবপুরের বিএনপির প্রার্থী ইমরান বলেন, এত দিন তিনি বগুড়া শহরের বোনের বাসায় থাকতেন। এখন ধলিরকান্দি গ্রামে থেকে কৃষিকাজ দেখাশোনা করেন।
সারিয়াকান্দি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, চরাঞ্চল ও যমুনা পাড়ের অনেকেই অন্য এলাকায় বসবাস করেন। তবে বসবাস যেখানেই করুক না কেন; আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা এত দিন এলাকাবাসীর পাশে ছিলেন। তা ছাড়া দলের পরীক্ষিত ও যোগ্য নেতাদের দলীয় প্রার্থী করা হয়েছে।
উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. সুজাউদৌল্লা ওরফে সনজু প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির প্রার্থীদের মধ্যে অনেকেই শহরে ব্যবসা-বাণিজ্য করেন। কারও ছেলেমেয়ে শহরে পড়াশোনা করে। এ কারণে পরিবারের সঙ্গে তাঁদের শহরে থাকতে হয়। বগুড়া থেকে মাত্র কয়েক মিনিটের পথ। শহর-গ্রাম যেখানেই থাকুক; তা ভোটারদের ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না।