স্বাধীনতা দিবসে নানা আয়োজন
একাত্তরের শহীদদের প্রতি পুষ্পার্ঘ্য নিবেদনসহ নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে গতকাল শনিবার উদ্যাপন করা হয়েছে ৪৬তম স্বাধীনতা দিবস। শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে শুরু হয় এ দিবসের কর্মসূচি। এ উপলক্ষে তোপধ্বনি করা হয়। শহীদ মিনার ও স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে প্রশাসন, রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ও সাধারণ মানুষ।
এ ছাড়া সরকারি ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। দেশের বিভিন্ন এলাকায় শহীদ পরিবারের সদস্য ও মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়। আয়োজন করা কুচকাওয়াজ ও শারীরিক কসরত প্রদর্শনের। আলোচনা সভা হয়। ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। মসজিদ, মন্দিরসহ বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনালয়ে বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনার আয়োজন করা হয়। হাসপাতাল, এতিমখানা, জেলখানা, ভবঘুরে আশ্রয়কেন্দ্র ও শিশুকেন্দ্রে উন্নত মানের খাবার পরিবেশন করা হয়।
প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক, আঞ্চলিক কার্যালয় ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:
রাজশাহী: প্রথম প্রহরে নগরের ভুবন মোহন পার্ক শহীদ মিনারে সদর আসনের সাংসদ ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশার নেতৃত্বে দলীয় নেতা-কর্মীরা ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। মহানগর আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি শাহীন আকতার ও সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারের নেতৃত্বে নেতা-কর্মীরা শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। নগর বিএনপির সভাপতি মিজানুর রহমান মিনুর নেতৃত্বে রাজশাহী কলেজ শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন দলটির নেতা-কর্মীরা।
সকালে নগরের বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে শোভাযাত্রা বের করে শহীদ মিনারে গিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। এ ছাড়া মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি স্টেডিয়ামে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা কুচকাওয়াজে অংশ নেয়।
এদিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপাচার্য মুহম্মদ মিজানউদ্দিন, সহ-উপাচার্য চৌধুরী সারওয়ার জাহানসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। শহীদদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে সেখানে তাঁরা এক মিনিট নীরবতাও পালন করেন। বিকেলে উপাচার্য ভবনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ পরিবারের সদস্য ও মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন উপাচার্য মুহম্মদ মিজানউদ্দিন।
রংপুর: কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সিটি করপোরেশনের মেয়র মুক্তিযোদ্ধা সরফুদ্দিন আহমেদ ও মডার্ন মোড়ে স্বাধীনতা স্তম্ভ অর্জনে বিভাগীয় কমিশনার কাজী হাসান আহমেদ, পুলিশের রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি হুমায়ুন কবীর, জেলা প্রশাসক রাহাত আনোয়ার পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
সকালে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে রংপুর স্টেডিয়ামে পুলিশ, আনসার ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও শিশু সংগঠনের সদস্যদের অংশগ্রহণে কুচকাওয়াজ হয়। রাইফেল ক্লাব শুটিং কমপ্লেক্সে শুটিং প্রতিযোগিতা, টাউন হলে মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়। জেলা শিশু একাডেমী প্রাঙ্গণে শিশুদের জন্য মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চিত্রাঙ্কন, নৃত্য, সংগীত, আবৃত্তি প্রতিযোগিতা হয়।
পঞ্চগড়: পৌরসভা চত্বরে গতকাল দুপুরে পৌরসভা ও সদর উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়। পৌর মেয়র মো. তৌহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পঞ্চগড়-২ আসনের সাংসদ মো. নুরুল ইসলাম। সকালে সিরাজুল ইসলাম স্টেডিয়ামে কুচকাওয়াজ হয়। বিকেলে সরকারি মিলনায়তনে ‘মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার’ শীর্ষক আলোচনা সভা হয়।
সিরাজগঞ্জ: স্বাধীনতা দিবসের প্রথম প্রহরে সিরাজগঞ্জের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার মুক্তির সোপানে তোপধ্বনির পর ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। সকাল আটটার দিকে সিরাজগঞ্জ শহীদ এম শামসুদ্দীন স্টেডিয়ামে কুচকাওয়াজ ও শারীরিক কসরত প্রদর্শন করা হয়। দুপুরে শহীদ এম মনসুর আলী অডিটোরিয়ামে মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়। জেলা প্রশাসক বিল্লাল হোসেনের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন সিরাজগঞ্জ-২ আসনের সাংসদ হাবিবে মিল্লাত, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাংসদ সেলিনা বেগম প্রমুখ।
গাইবান্ধা: সকাল আটটায় শহরের শাহ আবদুল হামিদ স্টেডিয়াম মাঠে শারীরিক কসরতে সহস্রাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেয়। পরে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সন্ধ্যায় জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আলোচনা সভা হয়। জেলা প্রশাসক মো. আবদুস সামাদের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য দেন জাতীয় সংসদের হুইপ মাহাবুব আরা বেগম, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু বকর সিদ্দিক প্রমুখ।
নীলফামারী: ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে শুরু হয় দিবসের আনুষ্ঠানিকতা। ১২টা ১ মিনিটে স্বাধীনতা স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। সকালে নীলফামারী স্টেডিয়ামে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের কুচকাওয়াচ, শারীরিক কসরত ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা হয়। দুপুরে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়। ডোমার, ডিমলা, জলঢাকা, কিশোরগঞ্জ ও সৈয়দপুর উপজেলায়ও একই ধরনের কর্মসূচি পালন করা হয়।
বিরামপুর (দিনাজপুর): রাত ১২টা ১ মিনিটে জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম জেলা প্রশাসন চত্বরে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। পরে চেহেলগাজী মাজার প্রাঙ্গণে অবস্থিত শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করা হয়। এ ছাড়া খানসামা ও চিরিরবন্দরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, বিরল পাইলট মডেল স্কুল মাঠে স্মৃতিসৌধে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সাংসদ খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, নবাবগঞ্জে সাংসদ শিবলী সাদিক স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করেন।