পুরো ইউনিয়নের একমাত্র মাধ্যমিক স্কুলটিও ভঙ্গুর

আঙিনায় প্রবেশ করেই দেখা গেল সামনের খালি জায়গায় কয়েকজন ছাত্র ভলিবল খেলছে। পাশেই একটি ভাঙা টিনের ঘর। ঘরের সামনে বেড়া ছাড়াই টিনের ছোট ছাউনির নিচে পাতানো কয়েকটি বেঞ্চে বসে আছে নবম শ্রেণির কয়েকজন শিক্ষার্থী। ঘরের বারান্দার এক পাশে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পড়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আরেক পাশে শিক্ষকেরা বসেন। ছোট ঘরটির ভেতরে গিয়ে দেখা গেল, বেড়া দিয়ে ভাগ করা। এক পাশে ষষ্ঠ শ্রেণি ও আরেক পাশে সপ্তম শ্রেণির শ্রেণিকক্ষ বানানো হয়েছে। ঘরটি দেখলেই মনে হয়, যেকোনো সময় ভেঙে যেতে পারে।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি সরেজমিনে বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার চর এলাকা বোহাইল ইউনিয়নের একমাত্র মাধ্যমিক স্তরের বিদ্যালয়ে এমন চিত্র দেখা যায়। বিদ্যালয়টির নাম বোহাইল নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়। ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টিতে শুরুর দিকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হলেও এখন নবম শ্রেণি চালু করা হয়েছে। শিগগিরই দশম শ্রেণি চালু করা হবে।
কয়েকজন শিক্ষার্থী জানাল, ইউনিয়নে অন্য কোনো মাধ্যমিক বিদ্যালয় না থাকায় এই বিদ্যালয়ই তাদের ওপরের স্তরে পড়ার সুযোগ করে দিয়েছে। কারণ, ২০১৩ সালের আগে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করা অধিকাংশ শিক্ষার্থী ঝরে পড়ত। অনেক মেয়ের বাল্যবিবাহ হয়ে যেত। সচ্ছল পরিবারের সন্তানেরা শহরে গিয়ে পড়তে পারলেও অন্যদের সেই সুযোগ হতো না।
প্রধান শিক্ষক মহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিদ্যালয়ে বর্তমানে ২৬১ জন শিক্ষার্থী পড়ছে। এর মধ্যে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ১১৪ জন, সপ্তম শ্রেণিতে ৮০, অষ্টম শ্রেণিতে ৩৮ ও নবম শ্রেণিতে ২৯ জন শিক্ষার্থী। শিক্ষক আছেন ছয়জন। এখনো এমপিওভুক্ত হয়নি। আশপাশে অন্য কোনো মাধ্যমিক বিদ্যালয় না থাকায় সাত-আট কিলোমিটার দূর থেকেও এই বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা পড়তে আসে। প্রধান শিক্ষক বললেন, ‘সমস্যা তো আছেই। একটা মাত্র টিনের ঘর। বাইরেও ক্লাস নিতে হয়।’
একাধিক শিক্ষক ও কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, আগে এই এলাকায় অনেক মেয়ের পঞ্চম শ্রেণি পাস করার আগেই বাল্যবিবাহ হতে যেত। এখনো হচ্ছে। গত বছর ষষ্ঠ শ্রেণির চার ছাত্রীর বিয়ে হয়ে যায়। তবে এই মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি হওয়ার পর অনেক মেয়ে ভর্তি হচ্ছে। এরপর বাল্যবিবাহ আগের চেয়ে কমেছে। অভিভাবকেরাও সন্তানদের এই বিদ্যালয়ে পাঠাচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেল, বিদ্যালয়ের ছয়জন শিক্ষকের মধ্যে তিনজন যমুনা নদীর পশ্চিম পাড় থেকে যান। এটাও একটা সমস্যা। কারণ, ছোট ছোট খেয়ানৌকায় নদী পার হতে প্রায়ই তাঁদের সমস্যায় পড়তে হয়। এ ছাড়া এমপিওভুক্ত না হওয়ায় তাঁরা বেতন পান না। ফলে তাঁদের একধরনের অনীহাও আছে। এর প্রভাব পড়ছে শ্রেণিকক্ষে।
জানতে চাইলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রুহুল আমীন প্রথম আলোকে বলেন, বিদ্যালয়টি এখনো সরকারি অনুমোদন পায়নি। তাই বিদ্যালয়টি কেমন চলছে, তা এখনো তাঁর দেখা হয়নি। সরকারি অনুমোদন পেলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিদ্যালয়টির ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি বোহাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা তালুকদার। জানতে চাইলে তিনি বলেন, দিনে দিনেই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বাড়ছে। ইউনিয়নের ১৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছাড়াও আশপাশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও এখানে ভর্তি হচ্ছে। কিন্তু আসবাব নেই, শ্রেণিকক্ষের সংকট। শিক্ষকেরাও বেতন পান না। বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত করাসহ সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার জন্য আবেদন করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্রও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনো কিছু হচ্ছে না।