শিক্ষক, শ্রেণিকক্ষ ও আবাসনসংকট

শিক্ষক, শ্রেণিকক্ষ, আবাসনসংকটসহ নানা সমস্যায় নওগাঁ সরকারি কলেজে পাঠদান কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর শ্রেণির কোনো কোনো বিভাগে বছরে ছয় থেকে সাতটি ক্লাসও হয় না। ফলে এখানকার শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়াই পাস করার একমাত্র উপায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কলেজ সূত্র জানায়, ১৯৬১ সালে ১১ একর জমির ওপর কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮০ সালে কলেজটি জাতীয়করণ করা হয়। ১৯৯৬-৯৭ শিক্ষাবর্ষ থেকে এখানে স্নাতক কোর্স চালু হয়। বর্তমানে উচ্চমাধ্যমিক, স্নাতক (পাস ও সম্মান) ও স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে ২০ হাজার ৭২৩ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন।
কলেজে সব মিলিয়ে শিক্ষকের ১২০টি পদ রয়েছে। শিক্ষক রয়েছেন ৬৭ জন। কলেজে ১৪টি বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর কোর্স রয়েছে।
রসায়ন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রাশিদুল ইসলাম ও জিন্নাত আরা বলেন, এ বছরের জুলাইয়ে ক্লাস শেষ ও আগস্টে ফাইনাল পরীক্ষা হওয়ার কথা। অথচ এ পর্যন্ত এক মাসও ক্লাস হয়নি। আগের বছরগুলোর মতো এবারও প্রতিটি বিষয়ে ছয়-সাতটি ক্লাস করেই পরীক্ষা দিতে হবে। বাধ্য হয়ে প্রাইভেট পড়তে হচ্ছে।
উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রেজাউল, সুজন ও সাইফুল বলেন, তাঁদের বিভাগে মাত্র তিনজন শিক্ষক রয়েছেন। প্রথম বর্ষে সব মিলিয়ে এক মাসের বেশি ক্লাস হয়নি। চারটি বিষয়ের কোনোটির কোর্স শেষ না হতেই পরীক্ষা দিতে হয়েছে। এবারও একই অবস্থা।
উদ্ভিদবিদ্যার বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ওয়াজেদ আলী বলেন, ‘বিভাগে শিক্ষকের পদ আছে সাতটি। সেখানে তিনজন আছেন। সর্বনিম্ন পাঁচটি শ্রেণিকক্ষের প্রয়োজন হলেও আছে মাত্র একটি। ফলে চেষ্টা থাকলেও শিক্ষার্থীদের ঠিকমতো পাঠদান করতে পারছি না।’
কলেজ সূত্র আরও জানায়, কলেজে বর্তমানে তিন তলাবিশিষ্ট দুটি একাডেমিক ভবন আছে। এর মধ্যে উত্তর পাশেরটি একসঙ্গে একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। শিক্ষার্থীর তুলনায় শ্রেণিকক্ষের সংখ্যা খুবই কম। বিভিন্ন বিভাগের জন্য মাত্র একটি করে শ্রেণিকক্ষ রয়েছে। ছাত্রদের জন্য দুটি ছাত্রাবাস রয়েছে। এর মধ্যে একটি টিনশেডের তৈরি একতলা। দুটি ছাত্রাবাসে ১৫০ জনের থাকার ব্যবস্থা আছে। ছাত্রীদের জন্য দুটি নিবাস আছে। সেখানে ২০০ জনের থাকার ব্যবস্থা আছে। বাকি শিক্ষার্থীদের শহরের বিভিন্ন মেসে থাকতে হচ্ছে।
অর্থনীতি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী পারভীন আকতার বলেন, নিয়ামতপুর উপজেলা থেকে এখানে পড়াশোনা করতে এসেছেন। পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো না হওয়ায় ছাত্রীনিবাসে ওঠার জন্য হল নিয়ন্ত্রকের কাছে একাধিকবার আবেদন করেছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত ছাত্রীনিবাসে উঠতে পারেননি।
কলেজের অধ্যক্ষ এস এম জিল্লুর রহমান বলেন, ‘এত কম শিক্ষক দিয়ে কোনোভাবেই মানসম্পন্ন শিক্ষা দেওয়া সম্ভব নয়। সঠিকভাবে পাঠদান করতে হলে স্নাতক শ্রেণির প্রতিটি বিভাগে অন্তত ১২ জন করে শিক্ষক থাকা প্রয়োজন। কিন্তু বিভাগগুলোতে ছয়-সাতজন করে শিক্ষক পদের অনুমোদন আছে। সেই পরিমাণ শিক্ষকও নেই। তার ওপর শ্রেণিকক্ষের সংকট রয়েছে। তবে কলেজে নতুন দুটি একাডেমিক ভবন নির্মাণাধীন রয়েছে। ভবন দুটি হয়ে গেলে শ্রেণিকক্ষের সংকট কিছুটা হলেও কমবে। এ ছাড়া এখানে ছাত্রছাত্রীদের আবাসনসংকটও বিরাট সমস্যা।’