ইলিশ নয়, সার্ডিন

মাছটি দেখতে ইলিশের মতো, তবে এটি ইলিশ নয়। স্বাদের পার্থক্যও বিস্তর। তবু কক্সবাজারের বিভিন্ন বাজারে ব্যাপক বিক্রি হচ্ছে সার্ডিন নামের এই মাছ। কারণ, সামনে পয়লা বৈশাখ। ইলিশের ব্যাপক চাহিদার সুযোগ নিয়ে অনেক অসাধু ব্যবসায়ী সার্ডিনকে ইলিশ নামে চালিয়ে দিচ্ছেন।

গত সোমবার সকালে কক্সবাজার শহরের বাহারছড়া বাজারে গিয়ে দেখা যায়, ব্যাপক হারে সার্ডিন মাছ বিক্রি হচ্ছে। দুপুরে উখিয়া উপজেলার মনখালী ও পাশের বাহারছড়া বাজারেও দেখা যায় একই অবস্থা।

বিকেলে টেকনাফের বাজারেও দেখা গেছে, ব্যাপক হারে বিক্রি হচ্ছে সার্ডিন মাছ। স্থানীয় লোকজন এই মাছকে বলেন চোখ ফোলা ইলিশ।

স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ীরা জানান, ছয়-সাত দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলে বিপুল পরিমাণে সার্ডিন ধরা পড়ছে। মাছটি দেখতে ইলিশের মতো। তাই এই বৈশাখে অনেকে মাছটিকে ইলিশ বলে চালিয়ে দিচ্ছেন। অনেক ব্যবসায়ী টেকনাফ, সেন্ট মার্টিন, উখিয়া ও কক্সবাজার উপকূল থেকে এই মাছ কিনে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করছেন।

সোমবার বেলা তিনটার দিকে টেকনাফ পৌরসভার বাসস্টেশন বাজারে গিয়ে দেখা যায়, ইলিশ পরিচয়ে বিক্রি হচ্ছে সার্ডিন মাছ। বাজারে জাটকা ছাড়া বড় আকারের ইলিশ নেই। জাটকা বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫৫০ থেকে ৬৫০ টাকায়। আর সার্ডিন বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২০০ থেকে ৩০০ টাকায়। প্রতিটি সার্ডিনের ওজন ৪৫০ থেকে ৭০০ গ্রাম।

মাছ বিক্রেতা আবদুল গফুর বলেন, বাজারে এখন ইলিশের আকাল। তাই পয়লা বৈশাখে পর্যটকদের খাওয়ানোর জন্য হোটেল-রেস্তোরাঁর শতাধিক মালিক জেনেশুনে চোখফোলা ইলিশ মজুত করছেন। এই মাছ ভেজে পান্তা ভাতের সঙ্গে ইলিশ হিসেবে চালিয়ে দিলে ধরার জো নেই।

মাছ ব্যবসায়ী সৈয়দ করিম বলেন, গত তিন দিনে তিনি টেকনাফের বাজার থেকে তিনটি ট্রাকে করে প্রায় ৪৭ মেট্রিক টন সার্ডিন মাছ ঢাকায় সরবরাহ করেছেন। সেখানে এই মাছ চান্দিনা ইলিশ বলে বিক্রি করা হচ্ছে। জেলে ছাড়া সাধারণ মানুষের পক্ষে এই মাছ চেনা কঠিন। তবে খেতে গেলে স্বাদের ভিন্নতায় মানুষ জেনে যাবে, এটা ইলিশ নয়।

টেকনাফ স্থলবন্দরের কাঠ ব্যবসায়ী মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, পয়লা বৈশাখ সামনে রেখে বাসস্টেশন বাজার থেকে তিনি ছয়টি মাছ কেনেন। কিন্তু দুটি রান্না করে ইলিশের স্বাদ পাওয়া যায়নি। পরে জানা যায়, এটি ইলিশ নয়।

পৌরসভার ডেইলপাড়ার ব্যবসায়ী সলিম উল্লাহ বলেন, ফেরি করেও অনেকে ঘরে ঘরে চোখ ফোলা ইলিশ বিক্রি করছেন। কম দামে এই মাছ কিনে অনেকে প্রতারিত হচ্ছেন।

ইসলামাবাদ এলাকার গৃহিণী জাহানারা বেগম বলেন, ইলিশ ভেবে তাঁর স্বামী বাজার থেকে দুটি মাছ কিনে আনেন। মাছটি কাটার সময় সন্দেহ হয়েছিল। পরে খাওয়ার সময় বুঝতে পারেন, এটা ইলিশ নয়।

টেকনাফ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সৈয়দ মো. হুমায়ুন মোর্শেদ বলেন, ‘বিভিন্ন বাজারে ইলিশ পরিচয়ে সার্ডিন মাছ বিক্রির অভিযোগ পেয়েছি। মাছটি দেখতে হুবহু ইলিশের মতো বলে লোকজন প্রতারিত হচ্ছেন। সার্ডিন বা চোখ ফোলা ইলিশ সম্পর্কে লোকজনকে সচেতন করতে উপকূলে প্রচারণা চালাচ্ছে মৎস্য বিভাগ।’

হুমায়ুন মোর্শেদ জানান, কক্সবাজারের মহেশখালী, সোনাদিয়া, টেকনাফ ও সেন্ট মার্টিনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় উপকূলের কম লবণাক্ত পানিতে এই মাছ ঝাঁক বেঁধে চলাফেরা করে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ২২ প্রজাতির সার্ডিন মাছ পাওয়া যায়। ইদানীং বঙ্গোপসাগরেও এই মাছ পাওয়া যাচ্ছে।