জাসদের ঐক্য প্রক্রিয়ায় অগ্রগতি নেই

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের ঐক্য প্রক্রিয়ায় কোনো অগ্রগতি নেই। মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল (অব) আবু তাহেরের (বীর উত্তম) স্ত্রী লুৎফা তাহের দুই পক্ষকে নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার বৈঠক করলেও কোনো সমাধান হয়নি।
জাসদ সূত্রে জানা গেছে, যেসব সমস্যার কারণে এই দলটিতে ভাঙন দেখা দিয়েছে, সেসব নিয়ে আলোচনার উদ্দেশ্যে আজ সাংসদ লুৎফা তাহেরের মোহাম্মদপুরের বাসায় বৈঠক হয়। বৈঠকে এক পক্ষে হাসানুল হক ইনু ও শিরিন আখতার এবং আরেক পক্ষে নূরুল আম্বিয়া ও নাজমুল হক প্রধান উপস্থিত ছিলেন। বিকেল থেকে শুরু হয়ে রাত নয়টা পর্যন্ত বৈঠক চললেও ঐক্যের আভাস মেলেনি।
বৈঠকের বিষয়ে জানতে আজ রাতে যোগযোগ করা হলে লুৎফা তাহের কিংবা শিরীন আখতার কেউ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে জাতীয় প্রেসক্লাবে ঘোষিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বলেছিলাম, যে সম্মেলন হয়েছে সেটি বাতিল করতে হবে। কিন্তু তাঁরা রাজি হচ্ছেন না। ফলে মূল আলোচনা এক জায়গায় আটকে যাচ্ছে। তবে আরও হয়তো আলোচনা হবে। দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কী হয়?।’
গত ১২ মার্চ রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে কাউন্সিল অধিবেশনে হাসানুল হক ইনু বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি পুনর্নির্বাচিত হন। কিন্তু সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচনকে ঘিরে দলে বিভক্তির সৃষ্টি হয়। ওই পদে প্রার্থী ছিলেন দলের দুই সাংসদ শিরীন আখতার ও নাজমুল হক প্রধান। এখন তাঁরা দুজন দুই পক্ষের সাধারণ সম্পাদক। অন্যদিকে হাসানুল হক ছাড়াও আরেক অংশের সভাপতি হন শরীফ নূরুল আম্বিয়া। তাঁর সঙ্গে কার্যকরী সভাপতি পদে আছেন সাংসদ মঈন উদ্দীন খান বাদল।
দলে বিভক্তি চূড়ান্ত হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলীয় কার্যালয়ের মালিকানা, দলের প্রতীক মশাল, দুই পক্ষের ছয় সাংসদদের সদস্যপদ এবং সরকারের সঙ্গে দুই পক্ষেরই থাকার ঘোষণা নিয়ে নানামুখী আলোচনা শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে দুই পক্ষ দুটি কমিটির তালিকা দিয়েছে নির্বাচন কমিশনে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন হাসানুল হককে মশাল দিয়েছে। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ বিরোধীরা।
শুধু নেতারাই নন, সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে দলে বিভক্তির বিষয়টি নিয়ে মর্মাহত হয়েছেন দলের নেতা-কর্মীরা। মধ্যম স্তরের একাধিক নেতা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা চান জাসদ এক থাকুক। আওয়ামী লীগের নেতারাও জাসদকে এক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
জাসদের একাধিক নেতা জানান, দুই পক্ষই ঐকমত্যের গুরুত্ব বুঝে আলোচনায় অংশ নিয়েছেন। কিন্তু হাসানুল হক ইনু চাইছেন, জাসদের সব সিদ্ধান্ত তিনিই দেবেন। বাকিরা শুনবেন। অন্য পক্ষ চায়, গণতান্ত্রিকভাবে সবকিছু নিয়ে আলোচনা হবে। দুই পক্ষের আলোচনার একপর্যায়ে হাসানুল হকের বিরোধীরা ১২ মার্চের সম্মেলন বাতিল করে নতুন করে আবার সম্মেলন করার দাবি জানান। যত দিন তা না হচ্ছে পুরোনো কমিটি বহালের দাবি জানান তাঁরা। কিন্তু ইনু পক্ষ আইন অনুযায়ী সেটি সম্ভব কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রাখেন। অন্য পক্ষ জানায়, নিজেরা চাইলে সবই তো সম্ভব।
দলীয় এই বিভক্তির মধ্যেই সম্প্রতি কর্নেল তাহের সংসদ নামের ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট দেন লুৎফা তাহের। ‘আ কল ফর ইউনিটি’ শীর্ষক ওই পোস্টে লুৎফা বলেন, ‘কর্নেল তাহের তাঁর জীবদ্দশায় যে সংকল্প নিয়ে রাজনীতি করেছেন, সেটা হলো ক্ষুদ্র স্বার্থ ত্যাগ করে বৃহত্তর সামগ্রিক জনস্বার্থে জীবন উৎসর্গ করা। সেটিই তিনি তাঁর জীবনে উদাহরণ স্বরূপ আমাদের সামনে প্রতীয়মান করেছেন এবং ফাঁসির মঞ্চে গেয়ে গেছেন সাম্যের গান...।’ তিনি বলেন, জাসদ সব সময়ই অন্যায়ের বিরুদ্ধে, কলুষতা ও সব নোংরামির বিরুদ্ধে এবং মানুষের কল্যাণ ও জাতীয় ঐক্যের পক্ষে কাজ করেছে। জাসদের অগণিত নেতা-কর্মী এ জন্য নিঃশর্ত ত্যাগ ও জীবন উৎসর্গ করেছেন। তাঁদের ত্যাগের উদ্দেশ্যকে সফল করে যথাযথ সম্মান না দিলে তা দলের সবার জন্যই লজ্জা ও অসম্মানের হবে।