প্রশাসনের ওএসডি ও পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তারা সরব

সরব হয়ে উঠেছেন জনপ্র্রশাসনে দীর্ঘদিন বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) হয়ে থাকা ও পদোন্নতিবঞ্চিত প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তারা। এ রকম অর্ধশত কর্মকর্তা গতকাল বুধবার মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও জনপ্রশাসন সচিবের সঙ্গে আলাদাভাবে দেখা করে পদায়ন ও পদোন্নতির দাবি জানিয়েছেন।

এসব কর্মকর্তাকে বিএনপি-জামায়াতের সমর্থক হিসেবে চিহ্নিত করে ওএসডি এবং পদোন্নতিবঞ্চিত করে রাখা হয়েছে বলে তাঁদের অভিযোগ। তবে কারণ যা-ই হোক, এর আগে এতজন ওএসডি ও পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তার জোটবদ্ধ হয়ে সংশ্লিষ্ট সচিবদের কাছে প্রতিকারের দাবি জানানোর ঘটনা বিরল।

এ ঘটনার প্রভাবে গতকাল চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয় রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে। নির্বাচনকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার তিন দিনের মধ্যে ওই কর্মকর্তাদের এভাবে সরব ও সক্রিয় হয়ে ওঠা তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করেন অনেকে। এর পাশাপাশি সচিবালয়ের কর্মচারীদের কয়েকটি সংগঠনের নেতারাও গতকাল বিভিন্ন দাবিতে জনপ্রশাসন সচিবের দপ্তরে স্মারকলিপি দেন। অবশ্য এর আগেও তাঁরা একাধিকবার বিভিন্ন দাবি সচিবকে জানিয়েছেন।

গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় কর্মকর্তারা প্রথমে জনপ্রশাসন সচিব আবদুস সোবহান সিকদারের দপ্তরে যান। সেখানে তাঁরা সচিবের কাছে তাঁদের সঙ্গে হওয়া অন্যায়ের প্রতিকার দাবি করেন। সচিবকে তাঁরা বলেন, পদোন্নতি পাওয়ার সব যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তাঁদের কয়েক দফায় বঞ্চিত করা হয়েছে। একই সঙ্গে অনেককে দীর্ঘদিন ধরে ওএসডি করে রাখা হয়েছে। এখন নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায়। এই সময়ে যেন তাঁদের পদোন্নতি দেওয়া ও পদায়ন করা হয়। এ সময় সচিব তাঁদের কথা শোনেন এবং বিষয়টি দেখার আশ্বাস দেন বলে কর্মকর্তারা জানান।

এরপর কর্মকর্তারা যান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞার দপ্তরে। সেখানেও তাঁরা পদায়ন-পদোন্নতির দাবি করেন।

সচিবালয়ের সূত্রগুলো জানায়, এর মাধ্যমে ‘বিএনপি-জামায়াত সমর্থক’ হিসেবে পরিচিত কর্মকর্তারা নিজেদের অবস্থান বোঝাতে চাইছেন। এ ছাড়া অনেকের চাকরি শেষ হওয়ার পথে। সে জন্য তাঁরা পদোন্নতি ও পদায়নের জন্য শেষ চেষ্টা করছেন। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন ওএসডি সচিব ইবাদত আলী, ঢাকার সাবেক জেলা প্রশাসক (যুগ্ম সচিব) আব্দুল বারী, আতাউল হক মোল্লা, বিজন কান্তি সরকার প্রমুখ।

একজন ওএসডি যুগ্ম সচিব প্রথম আলোকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে ওএসডি করে রাখায় সবদিক দিয়েই সমস্যার মধ্যে আছি। এখন যেহেতু নির্বাচনকালীন সরকার ক্ষমতায় এবং প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন, পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্য কাউকে বঞ্চিত না করার কথা, তাই প্রতিকার চেয়েছি। আশা করি দুই সচিব বিষয়টি বিবেচনা করবেন।’

 জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব প্রথম আলোকে বলেন, ‘কর্মকর্তারা দেখা করেছেন। তাঁদের কথা শুনেছি।’ জনপ্রশাসন সচিব বলেন, যাঁরা পদোন্নতি পাননি তাঁদের কিছুসংখ্যক কর্মকর্তা দেখা করতে এসেছিলেন। তাঁদের বলা হয়েছে, যাঁরা যোগ্য তাঁদের বিষয়ে দেখা হবে। অনেক কর্মকর্তাই দেখা করতে আসেন। এটা স্বাভাবিক ঘটনা।

জানতে চাইলে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা প্রশাসনের জন্য ভাল লক্ষণ নয়। আমার মতে, ওএসডি ও পদোন্নতি-সংক্রান্ত সমস্যা আগেই সমাধান করা উচিত ছিল। এটি জিইয়ে রাখার কারণে এখন এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, পাঁচটি সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে বিরোধী দলের জয়ের পর সচিবালয়ে ‘বিএনপি-জামায়াত সমর্থক’ কর্মকর্তাদের তৎপরতা বাড়ে। তবে বিরোধী দলের সমর্থক হিসেবে চিহ্নিত অনেক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়ায় তাঁরা চুপ হয়ে যান। কিন্তু কয়েক দিন ধরে আবারও একটি অংশ ভেতরে ভেতরে তৎপরতা চালায়। কিছুদিন আগে সরকারবিরোধী একটি প্রচারপত্র সচিবালয়ে বিতরণ করা হয়।