অবরোধ বাড়ল ২৩ ঘণ্টা

৪৮ ঘণ্টার রাজপথ, রেলপথ ও নৌপথ অবরোধ কর্মসূচি আরও ২৩ ঘণ্টা বাড়িয়েছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮-দলীয় জোট। আজ আগামীকাল শুক্রবার ভোর পাঁচটা পর্যন্ত সারা দেশে জোটের এই কর্মসূচি চলবে।

গতকাল বুধবার বিকেল সাড়ে চারটায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে অবরোধের সময় ১২ ঘণ্টা বৃদ্ধি এবং অবরোধ কর্মসূচিতে নিহতদের জন্য আগামীকাল শুক্রবার জুমার নামাজের পর ঢাকাসহ সারা দেশে গায়েবানা জানাজার কর্মসূচি ঘোষণা দেন। এরপর রাত সাড়ে ১১টার দিকে আবার সংবাদ ব্রিফিং করে তিনি অবরোধ কর্মসূচি আরও ১১ ঘণ্টা বাড়ানোর ঘোষণা দেন।

এদিকে নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২ ডিসেম্বর সোমবার সামনে রেখে রোববার থেকে আবার টানা কর্মসূচি দেওয়ার পরিকল্পনা করছে বিরোধী দল। এর মধ্যে আগামী সোমবার নির্বাচন কমিশন এবং সারা দেশে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচিও আসতে পারে বলে বিএনপির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।

দলীয় সূত্রগুলো জানায়, এই অবরোধ কর্মসূচি শুক্র-শনিবারসহ টানা ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত চালিয়ে নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হলেও ধর্মীয় অনুভূতির দিক বিবেচনায় নিয়ে শুক্রবার অবরোধ না দিয়ে গায়েবানা জানাজার কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। এর পরের কর্মসূচি শনিবার থেকে নাকি রোববার থেকে শুরু করা হবে, তা গতকাল রাত সাড়ে নয়টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত চূড়ান্ত করা হয়নি বলে দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে।

বিএনপির একাধিক সূত্র জানায়, দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে মনে করা হয়েছিল, অবরোধ কর্মসূচির পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের পক্ষ থেকে সমঝোতার বিষয়ে ইতিবাচক কোনো সাড়া পাওয়া যাবে। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত সে ধরনের কোনো ইঙ্গিত তারা পায়নি। বরং বিএনপির কাছে খবর আছে, সরকার আরও কঠোর হচ্ছে। এর পাল্টা হিসেবে বিএনপি সরকারকে তাদের দৃঢ়তা দেখাতে অবরোধ আরও ১২ ঘণ্টা বাড়ানোর ঘোষণা দেয়।

তবে আনুষ্ঠানিকভাবে ১৮-দলীয় জোটের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রথম দুই দিনে পুলিশ ও সরকার-সমর্থকদের হামলায় বিরোধী আট নেতা-কর্মীর মৃত্যু, আহত হওয়া ও নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে অবরোধ কর্মসূচি বাড়ানো হয়েছে।

বিএনপির চেয়ারপারসনের একজন উপদেষ্টা প্রথম আলোকে বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর উদ্যোগ দেখা না গেলে তাঁদের অবরোধ টানা হতে পারে।

নির্বাচনের তফসিল প্রত্যাখ্যান করে গত মঙ্গলবার থেকে টানা ৪৮ ঘণ্টা অবরোধের ডাক দিয়েছিল ১৮-দলীয় জোট। মঙ্গলবার সকাল ছয়টা থেকে শুরু হওয়া এই কর্মসূচি আজ সকাল ছয়টায় শেষ হওয়ার কথা ছিল।

সংলাপ-সংলাপ খেলা’: গতকাল সংবাদ সম্মেলনে রিজভী আহমেদ অভিযোগ করেন, ‘সংলাপ-সংলাপ খেলায় দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। মিথ্যা বিবৃতি ও সংলাপের নামে অসত্য, ভিত্তিহীন অপপ্রচার চালিয়ে ১৮-দলীয় জোটের নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংশয় তৈরির চেষ্টা হচ্ছে।’

রিজভী আহমেদ বলেন, সরকার এখন অপপ্রচার ও গুজবের ওপর নির্ভর করছে। কোনো ধরনের গুজবকে প্রশ্রয় না দিয়ে বিএনপিসংক্রান্ত সংবাদের বিষয়ে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সত্যতা যাচাইয়ের জন্য সাংবাদিকদের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।

বিএনপির চেয়ারপারসন ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের সরাসরি বক্তব্য এবং তাঁদের নামে অথবা বিএনপির নামে কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে পাঠানো কোনো বিবৃতি ছাড়া গোপন কোনো সূত্রের বরাত দিয়ে প্রকাশিত কোনো সংবাদে বিভ্রান্ত না হতে নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান দলের এই যুগ্ম মহাসচিব।

রিজভী আহমেদ বলেন, রাজনৈতিক সমঝোতার আগেই তফসিল ঘোষণা করায় সারা দেশে প্রতিরোধ-প্রতিবাদের দাবানল জ্বলে উঠেছে। এর জন্য তিনি সরকার ও নির্বাচন কমিশনকেই দায়ী করেন। তিনি অভিযোগ করেন, সরকার পুলিশ বাহিনীর পাশাপাশি পেশাদার সন্ত্রাসীদেরও বিরোধী দল দমনে মাঠে নামিয়েছে।

রিজভী আহমেদ দাবি করেন, গত দুই দিনের অবরোধে সারা দেশে বিরোধী জোটের আট নেতা-কর্মী নিহত, ৮৫০ জনের বেশি গ্রেপ্তার এবং দুই হাজারের বেশি নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন।

গত মঙ্গলবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ককটেল হামলায় সাংবাদিক আহত হওয়ার ঘটনায় ‘ক্ষমতাসীনদের সশস্ত্র দুষ্কৃতকারীদের’ দায়ী করেন এবং এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তিরও দাবি জানান রিজভী।