গমভর্তি জাহাজ বারবার ফেরত দেওয়ায় রুশ সংস্থার অসন্তোষ

রাশিয়া থেকে আসা পরপর তিনটি গমভর্তি জাহাজ ফেরত দিয়েছে খাদ্য অধিদপ্তর। সব মিলিয়ে তাতে গম ছিল ১ লাখ ৫৬ হাজার টন। ফেরত দেওয়া ওই গম নেওয়ার জন্য ঢাকায় রুশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক দফা বৈঠকও হলো। বৈঠকে খাদ্য বিভাগ থেকে এ-ও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, আমদানির শর্ত অনুযায়ী ওই গমের মান সঠিক ছিল না। তাই ওই গম নেওয়া যাবে না।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানাচ্ছে, রাশিয়ার দানাদার খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা গ্রেইন কোয়ালিটি সেন্টার বাংলাদেশের গম আমদানির শর্ত নিয়ে আপত্তি তুলেছে। বিশ্বের বৃহৎ গম রপ্তানিকারক দেশ রাশিয়ার একজন গম বিশেষজ্ঞ রয়টার্সের কাছে অভিযোগ করেছেন, বাংলাদেশ গম আমদানির যে শর্ত দিয়েছে, তা আন্তর্জাতিক মানের নয়।
তবে খাদ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত ২৭ এপ্রিল গ্রেইন কোয়ালিটি সেন্টারের বৈদেশিক সম্পর্ক বিভাগের উপপ্রধান আন্দ্রে ইয়কভের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে একটি বৈঠক করে। তাতে তারা বাংলাদেশ থেকে পরপর তিনটি গমের জাহাজ ফেরত দেওয়ার ব্যাখ্যা চায়।
ওই বৈঠকে খাদ্য অধিদপ্তরের পক্ষে রাশিয়া থেকে আনা গমের নমুনা ও এর পরীক্ষা প্রতিবেদন দেখানো হয়। বলা হয়, খাদ্য অধিদপ্তরের পরীক্ষাগারে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) থেকে সরবরাহ করা যন্ত্র দিয়ে ওই গমের মান পরীক্ষা করা হয়েছে। আর যে মানমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, তা-ও এফএওর নিয়ম মেনেই করা হয়েছে।
ওই পরীক্ষাতেই রাশিয়া থেকে আনা প্রথম জাহাজের গমে নয়টি পূর্বশর্তের একটির ব্যত্যয় পাওয়া যায়। শর্ত অনুযায়ী, ওই গমে গম ছাড়া অন্য বস্তুর পরিমাণ দশমিক ৭ শতাংশের বেশি হবে না। কিন্তু নমুনায় পাওয়া যায় ১ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। দ্বিতীয় জাহাজে দুটি শর্তের লঙ্ঘন পাওয়া যায়। সেখানে প্রতি এককের ওজন থাকার কথা ৭৬ কেজি, পাওয়া যায় ৭৫ কেজি। নির্দিষ্ট জাতের বাইরে অন্য জাতের গমের পরিমাণ ৪ শতাংশ পর্যন্ত গ্রহণের নিয়ম রয়েছে। পাওয়া যায় ৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ।
সর্বশেষ গত মাসের শেষ সপ্তাহে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এডিএমের মাধ্যমে আমদানি করা গমে তিনটি শর্তের লঙ্ঘন পাওয়া যায়। ওজন, পুষ্টির পরিমাণ এবং গম-বহির্ভূত বস্তুর পরিমাণ নির্ধারিত মাত্রার মধ্যে পাওয়া যায়নি। ফলে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে ওই গম ফেরত নিয়ে যেতে বলা হয়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে খাদ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (সংগ্রহ) ইলাহি দাদ খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘পৃথিবীর অন্যতম সেরা গম উৎপাদিত হয় বলেই আমরা রাশিয়ায় গম আমদানির ব্যাপারে আগ্রহী হয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের সরবরাহ করার জন্য যে গম আমদানি করা হয়েছে, তার সঙ্গে রাশিয়ার গমের আমরা মিল পাইনি। ফলে শর্ত লঙ্ঘন হওয়ায় আমরা তা ফেরত দিয়েছি।’
তবে রাশিয়ার গ্রেইন কোয়ালিটি সেন্টারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের গমের মান পরীক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলা হয়েছে, ওই পরীক্ষা সঠিকভাবে হয়নি। গত জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৯ লাখ ৪৩ হাজার টন গম বেসরকারি খাতের মাধ্যমে বাংলাদেশে রপ্তানি করেছে রাশিয়া। সেখানে ওই গম নিয়ে কোনো আপত্তি তোলা হয়নি।
তবে খাদ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত অর্থবছরে বাংলাদেশের আমদানি করা দুই লাখ টন ব্রাজিলের গম ও প্রায় এক লাখ টন ফ্রান্সের গম নিম্নমানের হওয়ায় ফেরত দেওয়া হয়। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ব্রাজিল থেকে আসা নিম্নমানের গম নিয়ে সারা দেশে বিতর্ক ওঠার পর সরকার গমের আমদানির শর্ত আরও কঠোর করে, যাতে কোনো নিম্নমানের গম দেশে আসতে না পারে।
গম আমদানির শর্ত কঠোর করার পর থেকে অধিদপ্তর চলতি অর্থবছরে আমদানি করা এক টন গমও সংগ্রহ করতে পারেনি। চলতি অর্থবছরে সরকারি গুদামের জন্য ২ লাখ ৭০ হাজার টন গম আমদানির পরিকল্পনা করেছিল সরকার। কিন্তু এখন পর্যন্ত তিনটি দরপত্রের গমই নিম্নমানের হওয়ায় ফেরত দেওয়া হলো।