সুরের আবেশ ছড়ালেন প্রমিতা মল্লিক

টিআইসি মিলনায়তনে রবীন্দ্রসংগীতের সুরে শ্রোতাদের মুগ্ধ করেন শান্তিনিকেতনের শিল্পী  প্রমিতা ​মল্লিক l প্রথম আলো
টিআইসি মিলনায়তনে রবীন্দ্রসংগীতের সুরে শ্রোতাদের মুগ্ধ করেন শান্তিনিকেতনের শিল্পী প্রমিতা ​মল্লিক l প্রথম আলো

থিয়েটার ইনস্টিটিউটের মিলনায়তন ভর্তি দর্শকদের রবীন্দ্রসংগীতের সুরে ভিজিয়ে গেলেন শান্তিনিকেতনের শিল্পী প্রমিতা মল্লিক। গানের সঙ্গে শোনালেন গান রচনার পটভূমিও। বহুল শ্রুত গানের পাশাপাশি গাইলেন রবীন্দ্রনাথের স্বল্পপরিচিত গান। প্রায় দুই ঘণ্টার এই গানের আসরে ১৫টি গান পরিবেশন করেন তিনি।
১৯ মে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে থিয়েটার ইনস্টিটিউট চট্টগ্রাম (টিআইসি) মিলনায়তনে চট্টগ্রামে ভারতীয় সহকারী হাইকমিশন ও ইন্দিরা গান্ধী কালচারাল সেন্টারের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত হয় এই সংগীতসন্ধ্যার।
শিল্পী প্রমিতা মল্লিক রবীন্দ্রনাথ ও শান্তিনিকেতনের নানা অনুষঙ্গ নিয়ে কথার ফাঁকে ফাঁকে চালিয়ে গেলেন গান। শুরুতে গাইলেন ‘ওগো, তোমার চক্ষু দিয়ে মেলে সত্য দৃষ্টি’। গানটি শেষ হতেই তিনি বলেন, রবীন্দ্রনাথের প্রতিটি গানের পটভূমি জানা থাকা দরকার। কোন সময়ে কোন গান গাইতে হবে, সেটাও খেয়াল রাখতে হবে। রবীন্দ্রনাথের গানের কথায় যে কোনো বাহুল্য নেই সেটাও জানাতে ভুললেন না তিনি।
প্রমিতার গাওয়া দ্বিতীয় গানটি ছিল, ‘বিপুল তরঙ্গ রে’। এই গানের শেষে বেশ কয়েকটি রবীন্দ্রসংগীত রচনার পটভূমি তুলে ধরেন তিনি। বললেন, ১৯১৩ সালে গীতাঞ্জলির ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর কবিকে নিয়ে হইচই পড়ে গেল। বিভিন্ন সভা, সমিতি, অনুষ্ঠানে যেতে যেতে তিনি ক্লান্ত। নোবেল পুরস্কার পাওয়ার তিন মাস আগে নিজের অনুভূতি নিয়ে লিখেছিলেন ‘এ মণিহার আমায় নাহি সাজে—’গানটি। পটভূমি শুনিয়ে গানটি পরিবেশনের পর যেন নতুন আবেশ পাওয়া গেল।
এরপর তিনি গাইলেন ১৯১৮ সালে লেখা রবীন্দ্রনাথের পূজা পর্বের গান ‘তোমারি ঝরনাতলার নির্জনে’ গানটি। এই গান শেষে ছিল ব্রহ্মসংগীত ‘সুন্দর বহে আনন্দমন্দানিল, সমুদিত প্রেমচন্দ্র, অন্তর পুলকাকুল’। ১৮৮৫ সালে রবীন্দ্রনাথের বয়স যখন ২৪ বছর, মাঘ মাসে পারিবারিক অনুষ্ঠানে কীর্তন রীতিতে গেয়েছিলেন, ‘মাঝে মাঝে তব দেখা পাই’ গানটি। তরুণ রবীন্দ্রনাথ রচিত সেই গান পরিবেশন শেষে তিনি শোনালেন, ‘ওই আসনতলের মাটির ’পরে লুটিয়ে রব’। এরপর তিনি একে একে গাইলেন ‘আজি ঝড়ের রাতে তোমার অভিসার’, ‘আমি তোমায় যত শুনিয়েছিলেম গান’, ‘মধুর, তোমার শেষ যে না পাই...’, ‘ঝরঝর বরিষে বারিধারা’, ‘শাঙনগগনে ঘোর ঘনঘটা,...’, ‘যেতে যেতে একলা পথে নিবেছে মোর বাতি’ ও ‘মধুর, তোমার শেষ যে না পাই প্রহর হল শেষ—’। সবশেষে ছিল শিলাইদহ নিয়ে লেখা গান, ‘যাবার বেলায় দেব কারে বুকের কাছে’।
অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রদীপ জ্বালিয়ে সংগীতসন্ধ্যার উদ্বোধন করেন কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন। এ সময় আবুল মোমেন বলেন, প্রমিতা জন্মেছেন শান্তিনিকেতনে। সেখানেই তাঁর লেখাপড়া ও সংগীত চর্চা। তিনি গান শিখেছেন শান্তিদেব ঘোষ, কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায় ও নীলিমা সেনের কাছ থেকে যারা রবীন্দ্রনাথের সাহচর্য পেয়েছিলেন। পরবর্তীকালে তিনি কলকাতার সুবিনয় রায় ও সুচিত্রা মিত্রের কাছেও গান শিখেছেন।
অনুষ্ঠানে শিল্পীকে তবলায় সহযোগিতা করেছেন ভারত থেকে আসা শিল্পী সিদ্ধার্থ ভট্টাচার্য, বেহালায় শ্যামল দাশ, কিবোর্ডে নিখিলেশ বড়ুয়া, অক্টোপ্যাডে রনি চৌধুরী, গিটারে সাগর নাথ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আবৃত্তিশিল্পী রাশেদ হাসান।