নাটোরে ১৩টি ইউনিয়নে ভোট বর্জন

নাটোরের দুই উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থীরা নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। তাঁদের সমর্থকদের ভোট কেন্দ্রে যেতে বাধা ও এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া এবং নির্বাচনী কর্মকর্তাদের পক্ষপাতমূলক আচরণের অভিযোগে তাঁরা ভোট বর্জন করেছেন বলে দাবি করেন। এ ছাড়া চারটি পৃথক স্থানে দুই ইউপি সদস্যের সমর্থকদের সংঘর্ষে অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছে।
পোলিং কর্মকর্তাদের অনুপস্থিতি ও অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে ভোট গ্রহণ ব্যাহত হওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে।

ভোট বর্জন

সিংড়া উপজেলার তাজপুর ইউনিয়নে বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থী সাইদুর রহমান বেলা সাড়ে ১১টায় নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের কাছে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, তাঁর এজেন্টদের ভোট গ্রহণের শুরুতেই আওয়ামী লীগের প্রার্থীর কর্মীরা কেন্দ্রে ঢুকতে দেননি। তাজপুর-জয়নগর উচ্চবিদ্যালয় ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা নির্ধারিত পোলিং কর্মকর্তাদের বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর কর্মীদের দিয়ে পোলিং কর্মকর্তাদের কাজ করিয়ে নিয়েছেন। ফলে নির্বাচন নিরপেক্ষ ও অবাধ হয়নি। তাই তিনি নির্বাচন বর্জন করেছেন বলে জানান।
প্রায় একই ধরনের কারণ উল্লেখ করে দুপুরের পরপরই শেরকোল ইউনিয়নে বিএনপির প্রার্থী মিজানুর রহমান, শুকাশ ইউনিয়নের বিএনপি প্রার্থী আব্দুল কুদ্দুস আকন্দ, হাতিয়ান্দহ ইউনিয়নের মুনছুর আলম, চৌগ্রাম ইউনিয়নের এস এম খালেকুজ্জামান, চামারী ইউনিয়নের রাশেদুল ইসলাম, ইটালি ইউনিয়নে মখলেছুর রহমান, কলম ইউনিয়নে সোয়াইব ইসলাম, লালোর ইউনিয়নে আব্দুর জব্বার ও ছাতারদিঘী ইউনিয়নের মাহাতাব উদ্দিন নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন।
বড়াইগ্রাম উপজেলার নগর ইউনিয়নের বিএনপি প্রার্থী হজরত আলী সকাল সাতটায়, জোনাইল ইউনিয়নের আজিজুর রহমান ও বড়াইগ্রাম ইউনিয়নের রেজাউল করিম দুপুরের পরপরই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। নিজ নিজ এলাকায় সংবাদ সম্মেলন করে তাঁরা তাঁদের ভোট বর্জনের সিদ্ধান্ত জানান। উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি আলী আজগর খান তাঁদের প্রার্থীদের ভোট বর্জনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সংঘর্ষ
বড়াইগ্রামের নগর ইউনিয়নের বাঁশবাড়িয়া কেন্দ্রে দুই সদস্য প্রার্থীর সংঘর্ষে ১১ জন, বড়াইগ্রাম সদর ইউনিয়নের উপশহরে পাঁচজন ও ধানাইদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের সামনে পাঁচজন আহত হন। ধানাইদহে সংঘর্ষের সময় নাটোর-পাবনা মহাসড়কে কিছু সময় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ ছাড়া সিংড়া উপজেলার কলম ইউনিয়নে কিষ্টপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আব্দুল হাকিম ও জহুরুল ইসলাম নামের আওয়ামী লীগের দুই সদস্য প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে চারজন আহত হয়। আহত ব্যক্তিদের নাটোরের বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে।
শামিয়ানা টানিয়ে ভোট গ্রহণ
সিংড়া উপজেলার তাজপুর ইউনিয়নে কাগজে-কলমে একটি ভোট গ্রহণ কেন্দ্রের নাম ‘রাখালগাছা জুনিয়র হাইস্কুল (প্রস্তাবিত) কেন্দ্র’। আজ শনিবার সকাল সাড়ে নয়টায় সরেজমিন গিয়ে এ ধরনের কেন্দ্রের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। রাখালগাছা গ্রামের লোকজন বলেন, বাস্তবে এ ধরনের বিদ্যালয়ের অস্তিত্ব নেই। তবে রাখালগাছা গোরস্থানের আমবাগানের মধ্যে এই নামে শামিয়ানা ঝুলিয়ে একটি ভোট গ্রহণ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।

যেখানকার প্রিসাইডিং অফিসার ছিলেন সিংড়ার চলনবিল কলেজের সহকারী অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, এখানকার ভোটার ১ হাজার ৩০৩ জন। বিদ্যালয়ের অবকাঠামো না থাকায় শামিয়ানা ঝুলিয়ে তিনটি কক্ষ তৈরি করে ভোট নেওয়া হচ্ছে। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক পরিবেশে অনেকটা উন্মুক্ত অবস্থায় ভোট গ্রহণ চলছিল। তবে ঝড়বৃষ্টি ও সংঘর্ষ না হওয়ায় এখানে ভোট গ্রহণ নিয়ে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

পোলিং কর্মকর্তার সংকট
সকাল সাড়ে ১০টায় সিংড়ার তাজপুর-জয়নগর উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় সেখানে ছয়জন পোলিং এজেন্টের কেউই উপস্থিত হননি। প্রিসাইডিং কর্মকর্তা কলম ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক আব্দুল গণি বলেন, ‘এখানে মোট পোলিং কর্মকর্তা ছয়জন। তাঁরা কেউ কেন্দ্রে আসেননি। বিষয়টি রিটার্নিং কর্মকর্তা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ওমর আলীকে জানানো হয়েছে। তিনি আমাকে যেকোনো প্রকারে চালিয়ে নিতে বলেছেন। আমি স্থানীয় একজন ছাত্র, একজন শিক্ষক ও আনছার সদস্যকে ডেকে এনে পোলিং কর্মকর্তার কাজ করাচ্ছি। বিষয়টি বেআইনি হলেও ভোট গ্রহণের জন্য এটা তিনি বাধ্য হয়ে করেছেন বলে দাবি করেন। ঘটনাটি তাৎক্ষণিকভাবে এই প্রতিনিধি জেলা প্রশাসককে জানালে প্রায় এক ঘণ্টা পর নির্বাচন অফিস থেকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি এমন তিনজন সরকারি কর্মচারীকে সেখানে ভোট গ্রহণের জন্য পাঠান।
ওই কেন্দ্রের নির্বাহী হাকিম জাহিদুল ইসলাম বলেন, এটা প্রশাসনিক ব্যর্থতা। সমন্বয়হীনতার কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপে পরে কিছু লোক নিয়োগ করা হয়েছে।