নটর ডেমে আনন্দঘন নবীনবরণ

ঢাকা নটর ডেম কলেজে গতকাল নবীনবরণ অনুষ্ঠানের শুরুতে উচ্চমাধ্যমিক ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের শপথ-বাক্য পাঠ করানো হয় l ছবি: প্রথম আলো
ঢাকা নটর ডেম কলেজে গতকাল নবীনবরণ অনুষ্ঠানের শুরুতে উচ্চমাধ্যমিক ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের শপথ-বাক্য পাঠ করানো হয় l ছবি: প্রথম আলো

নটর ডেম কলেজ খেলার মাঠে বিশাল প্যান্ডেল। শামিয়ানায় সমবেত সবাই। সকাল আটটায় শুরু হলো জাতীয় সংগীত। তার সঙ্গে গলা মেলালেন সবাই। সেই সঙ্গে তরতর করে আকাশে উঠে গেল জাতীয় ও কলেজের পতাকা।
ঢাকা নটর ডেম কলেজে উচ্চমাধ্যমিক ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের আনন্দঘন নবীনবরণ অনুষ্ঠানের শুরু হয়েছিল এভাবেই। গতকাল শুক্রবার কলেজ চত্বরে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে কলেজ কর্তৃপক্ষ। এতে অভিভাবকেরাও অংশ নেন।
নবীনবরণ উপলক্ষে কলেজ প্রাঙ্গণে ছিল উৎসবের আমেজ। মূল ফটকের ভেতরে শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানাতে বসানো হয়েছে অস্থায়ী তোরণ। প্রাতিষ্ঠানিক ভবনের সামনে জমজমাট ‘নেচার স্টাডি ক্লাব’ আয়োজিত আলোকচিত্র প্রদর্শনী। অনুষ্ঠানে উপস্থিত অভিভাবকদের একজন রেহানা আফরোজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার স্বপ্নই ছিল ছেলে নটর ডেম কলেজে পড়বে। সুন্দর পরিবেশে মেধাবীদের সঙ্গে পড়লে সুশিক্ষার পাশাপাশি ওর মানসিক বিকাশ ভালো হবে।’
অনুষ্ঠানটি ছিল তিন পর্বে। প্রথম পর্বে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কামরুল হাসান খান বলেন, ‘আজ তোমাদের সবার হাতে একটা করে চাবি দেওয়া হয়েছে। এতেই খুলবে ভবিষ্যৎ। তোমাদের সামনে হাজার দরজা। কোন দরজা খুললে তোমরা সফল হবে, দেশের কল্যাণে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে পারবে, সেটা খুঁজে নাও।’
কলেজের অধ্যক্ষ হেমন্ত পিউস রোজারিও বলেন, ‘শৃঙ্খলাবোধই মানুষকে স্বাধীন করে। আমরা সুশৃঙ্খলভাবে তোমাদের স্বাধীন ও দায়িত্বশীল মানুষ হতে উৎসাহ দেব। শিক্ষা তোমাদের সততা, উদারতা ও বিবেকবোধকে সজাগ রাখবে। এই বিকাশ ব্যক্তিজীবনকে সুশৃঙ্খল করবে।’
এ ছাড়া শিক্ষক, অভিভাবক, প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে একজন করে প্রতিনিধি বক্তব্য দেন। সব বিভাগের শিক্ষক, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, বিভাগীয় কর্মী ও ১৯টি ক্লাব কার্যক্রমের সঙ্গে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেন অধ্যক্ষ ও আন্তনী সুশান্ত গোমেজ। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের শপথ পাঠের মাধ্যমে প্রথম পর্ব শেষ হয়।
দেখা যায়, অনুষ্ঠানের ফাঁকে কলেজ প্রাঙ্গণের বিভিন্ন স্থানে নতুন শিক্ষার্থীরা একত্র হয়ে গল্প করছ। একে অন্যের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে। ছবি তুলছে। কেউ কেউ বন্ধুর অভিভাবকের সঙ্গেও পরিচিত হচ্ছে। তাদের একজন রাকিব রাফিউ, ভর্তি হয়েছে বিজ্ঞান বিভাগে। সে বলে, ‘আজকে যেসব দিকনির্দেশনা পেয়েছি, সেগুলো নিজের মধ্যে ধারণ করার চেষ্টা করব। আমি আমার শিক্ষাকে মানুষের কল্যাণে কাজে লাগাতে চাই।’
দ্বিতীয় পর্বে ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে শিক্ষার্থীরা রবীন্দ্র ও নজরুলসংগীত, আধুনিক গান, রম্য বিতর্ক, দলীয় আবৃত্তি ও একটি নাটিকা পরিবেশন করেন। তৃতীয় পর্বে শিক্ষার্থীদের ২২টি দলে ভাগ করে শ্রেণিকক্ষ ব্যবস্থাপনা ও পাঠ গ্রহণ সম্পর্কে তালিম দেওয়া হয়। তাঁরা শ্রেণিকক্ষের আসন পরিকল্পনা জেনে নেন। একই সময় অনুষ্ঠানের মূল আয়োজনে অভিভাবকদের একটি প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়। তাতে ক্লাস, কলেজের স্থান ও স্থাপনা পরিচিতি, ক্লাব ও ল্যাব কার্যক্রম, মানবিক কাজসহ নানা বিষয় উঠে আসে।
নতুন শিক্ষাবর্ষে বিজ্ঞান (২ হাজার), ব্যবসা (৭০০) ও মানবিক বিভাগ (৪০০) মিলে ৩ হাজার ১০০ শিক্ষার্থী এ কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে।