গিরীশ চন্দ্র সেনের বাড়ির সংস্কার সম্পন্ন হয়নি

নরসিংদী সদরের পাঁচদোনা এলাকায় গিরীশ চন্দ্র সেনের বাড়ির সংস্কারকাজ চলছে। গত সোমবার তোলা ছবি
নরসিংদী সদরের পাঁচদোনা এলাকায় গিরীশ চন্দ্র সেনের বাড়ির সংস্কারকাজ চলছে। গত সোমবার তোলা ছবি

পবিত্র কোরআন শরিফের প্রথম বাংলা অনুবাদক ভাই গিরীশ চন্দ্র সেনের বাড়িটি প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর হচ্ছে। বাড়িটি সংস্কারের কাজ এ মাসে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা হচ্ছে না। এ জন্য আরও তিন মাস লাগতে পারে।
প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণাকেন্দ্র ঐতিহ্য অন্বেষণ এ কাজ করছে। নরসিংদী সদর উপজেলার পাঁচদোনা এলাকায় ভাই গিরীশ চন্দ্র সেনের বাড়ি। প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী এ বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি সংস্কারকাজের উদ্বোধন করেন। ভারতীয় হাইকমিশনের অর্থায়নে ও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সংরক্ষণ কাজটি চলছে।
গত সোমবার দুপুরে গিয়ে দেখা গেছে, বাড়ির সামনে একটি ছাপরা ঘরে কয়েকজন শ্রমিক নির্মাণসামগ্রী প্রস্তুত করছেন। আর কয়েকজন বাড়ির দোতলায় ইট লাগানোর কাজ করছেন। ইতিমধ্যে দোতলায় পাটাতনের কাজ শেষ হয়েছে। এ সময় রঘুনাথপুর এলাকার আবদুল মোমেনও সেখানে কাজ দেখতে আসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘গিরীশ চন্দ্র সেন আমাদের এলাকার সম্পদ। তাঁর ইতিহাস-ঐতিহ্য এ প্রজন্মকে লালন করতে হবে। তাই মাঝেমধ্যে খোঁজখবর নিতে আসি।’

ঐতিহ্য অন্বেষণের নির্বাহী পরিচালক সুফি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাড়িটি সংরক্ষণের জন্য নওগাঁ ও কুড়িগ্রামের ২০-২৫ জন লোক কাজ করছেন। এতে যশোরের টালি ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ছাড়া ঐতিহ্য অন্বেষণ নিজ উদ্যোগে উয়ারী-বটেশ্বর এলাকায় একটি বিশেষ আয়তনের ইট বানাচ্ছে। সে ইট এ কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। সংগ্রহ করা হচ্ছে ব্রিটিশ আমলের কাঠ ও আসবাব।
সুফি মোস্তাফিজুর আরও বলেন, বাড়িটির মূল অবকাঠামো অক্ষুণ্ন রেখে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মেরামত ও সংরক্ষণ কাজটি করা হচ্ছে। তবে মূল্যবান কাঠ ও আসবাব না পাওয়ায় কাজ কিছুটা পিছিয়ে গেছে। তাই এ বছরের জুন মাসে কাজটি শেষ করার কথা থাকলেও তা করা যাচ্ছে না। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, আগামী তিন মাসের মধ্যে কাজ শেষ হবে
ঐতিহ্য অন্বেষণের কর্মকর্তারা বলেন, ভাই গিরীশ চন্দ্র সেন ১৮৩৪ সালে পাঁচদোনা গ্রামে জন্ম নেন। ১৯১০ সালের ১৫ আগস্ট তিনি ঢাকায় মারা যান। গিরীশ চন্দ্র সেন একাধারে সাহিত্যিক, গবেষক ও ভাষাবিদ ছিলেন। এ ছাড়া ব্রাহ্ম ধর্মপ্রচারক হিসেবে তিনি ‘ভাই’ খেতাবে ভূষিত হন। আরবি, ফারসি ভাষায় গবেষণা এবং পূর্ণাঙ্গ কোরআন শরিফের বাংলা অনুবাদ করায় তিনি ‘মৌলভি’ খেতাব পান। কোনো উত্তরাধিকারী না থাকায় সংস্কারের অভাবে ও দখল হয়ে গিরীশ চন্দ্রের বাড়িটি নিশ্চিহ্ন হতে চলেছিল। ২০০৮ সালের তৎকালীন ভারতীয় হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী বাড়িটি দেখে দুঃখ প্রকাশ করেন।
পরে গিরীশ চন্দ্র সেনের বাড়িটির মূল অবকাঠামো অক্ষুণ্ন রেখে মেরামত ও সংরক্ষণ করার জন্য ভারতীয় হাইকমিশন অনুদান দিতে আগ্রহ প্রকাশ করে। গত বছরের ২৪ মে জেলা প্রশাসন ও ঐতিহ্য অন্বেষণের মধ্যে বাড়িটি সংরক্ষণ ও জাদুঘর নির্মাণের চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী সরকারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে ও দিকনির্দেশনায় ঐতিহ্য অন্বেষণ ফেব্রুয়ারি মাস থেকে সংরক্ষণ কাজ শুরু করে। আর এটি বাস্তবায়নে ভারতীয় হাইকমিশন ঐতিহ্য অন্বেষণকে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা অনুদান দিচ্ছে।