রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ চুক্তি সই আজ

বহুল আলোচিত রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ চুক্তি সই হচ্ছে আজ মঙ্গলবার। বাংলাদেশ-ভারত যৌথ স্টিয়ারিং কমিটির আগামীকাল বুধবারের সভা উপলক্ষে আজ ঢাকায় ভারতের যে উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদলটি আসছে, তাদের উপস্থিতিতে চুক্তি সই হবে। ‘বাংলাদেশ-ভারত ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানির (বিআইএফপিসিএল)’ নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ খবর জানা গেছে।

জানতে চাইলে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ গতকাল সোমবার রাতে টেলিফোনে বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন।

জানা গেছে, চুক্তি সইয়ের পর আগামীকাল দুই দেশের একটি যৌথ প্রতিনিধিদল রামপাল সফর করবে। সেখান থেকে ফেরার পর বিকেলে অনুষ্ঠিত হবে যৌথ স্টিয়ারিং কমিটির সভা। দুই দেশের বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতার ক্ষেত্র চিহ্নিত করা, প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য ২০১০ সাল থেকে সচিব পর্যায়ের এই কমিটি কাজ করছে। এ ছাড়া কর্মকর্তা পর্যায়ে রয়েছে একটি যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ। আগামীকাল সকালে এই গ্রুপের সভা হবে।

এ দুটি সভা উপলক্ষে আগত ভারতীয় প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন সে দেশের বিদ্যুৎসচিব প্রদীপ কুমার পূজারি। প্রতিনিধিদলে ‘ভারত হেভি ইলেকট্রিক লিমিটেড—ভেল’ এবং রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের সম-অংশীদার ‘ন্যাশনাল থারমাল পাওয়ার কোম্পানির (এনটিপিসি)’ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও থাকবেন। এই ভেলই প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র প্রক্রিয়ায় কেন্দ্রটির নির্মাণ ঠিকাদার নির্বাচিত হয়েছে। ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার এই কেন্দ্রটিতে ২০১৯ সালের শেষ নাগাদ উৎপাদন শুরু হতে পারে। উৎপাদিত সব বিদ্যুৎ কিনবে বাংলাদেশ।

কেন্দ্রটি নির্মাণে ব্যয় হবে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা (দেড় বিলিয়ন বা ১৫০ কোটি মার্কিন ডলার)। এর ৩০ শতাংশ বিনিয়োগ করবে উদ্যোক্তা কোম্পানি। অবশিষ্ট ৭০ শতাংশ ঋণ নেওয়া হবে। দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী ঠিকাদারই এই ঋণ সংগ্রহ করবে। এ ক্ষেত্রে ভারতের এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট (এক্সিম) ব্যাংক থেকে ভেল ঋণের অর্থ পাবে। ২ শতাংশ সুদে ঠিকাদারের মাধ্যমে এই অর্থ পাওয়া যাবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) ও ভারতের এনটিপিসির যৌথ উদ্যোগে গঠিত হয়েছে বিআইএফপিসিএল। বর্তমানে বাংলাদেশের বিদ্যুৎসচিব এই কোম্পানির চেয়ারম্যান। আর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এনটিপিসির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

নির্মাণ ঠিকাদার হিসেবে ভেলের নির্বাচন ও নিযুক্তির বিষয়টি বাংলাদেশ পক্ষ তথা বিপিডিবি অনুমোদন করেছে গত জানুয়ারি মাসে। তারপর এনটিপিসির অনুমোদন পাওয়ার পর ভেলকে চিঠি দেওয়া হয় চুক্তি সইয়ের জন্য। অবশ্য এই প্রকল্পের জন্য ঠিকাদারকে যেসব যন্ত্রপাতি (ক্যাপিটাল মেশিনারিজ) আনতে হবে, তা শুল্কমুক্ত হবে কি না, সে বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সিদ্ধান্ত পেতে দেরি হওয়ায় নির্মাণ চুক্তি সই পিছিয়ে যায়। তবে চুক্তি সইয়ের পর দ্রুততম সময়েই নির্মাণকাজ শুরু হবে বলে কোম্পানির সূত্র জানিয়েছে।

তবে এখন পর্যন্ত এই কেন্দ্রে ব্যবহারের জন্য কয়লার উৎস, কয়লা আনার প্রক্রিয়া ও পদ্ধতি নিশ্চিত হয়নি। বিআইএফপিসিএলের একটি সূত্র বলেছে, কেন্দ্রটি নির্মাণে সময় লাগবে প্রায় চার বছর। কয়লা লাগবে তার পরে। কাজেই কয়লার উৎস ও আমদানির প্রক্রিয়া পদ্ধতি নিশ্চিত করার জন্য যথেষ্ট সময় হাতে আছে। এই কেন্দ্রের জন্য প্রতিদিন কয়লা লাগবে প্রায় ১০ হাজার মেট্রিক টন।

রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বহুল আলোচিত হওয়ার কারণ এর নির্মাণস্থল ও পরিবেশগত প্রভাব নিরূপণ (ইআইএ)। কেন্দ্রটির নির্মাণস্থল সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশের উত্তর-পশ্চিম প্রান্তসীমা থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে। আইন অনুযায়ী সুন্দরবনের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে এ ধরনের স্থাপনা করা যায় না। তবে পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠন ও সুশীল সমাজের একাংশ প্রকল্পটিকে সুন্দরবন ধ্বংসকারী অভিহিত করে এর বিরোধিতা করছে।

তবে সরকার বলছে, পরিবেশবিজ্ঞানী, গবেষক ও এ-সংক্রান্ত উচ্চতর প্রকৌশল জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তিদের পরামর্শ নিয়েই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তা ছাড়া এই প্রকল্পে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি (সুপার ক্রিটিক্যাল) ব্যবহৃত হবে। তাই সুন্দরবনের কোনো ক্ষতির আশঙ্কা অমূলক।