খেতেই নষ্ট হচ্ছে সবজি

যশোর-মাগুরা মহাসড়কের পাশে সবজির খেত আবদুস সাত্তারের। নিজের জমি নেই, অন্যের ৪০ বিঘা জমি ইজারা নিয়ে এবার বাণিজ্যিকভাবে বাঁধাকপির চাষ করেছেন। তবে অবরোধের কারণে তাঁর খেতে অন্তত দুই লাখ কপি নষ্ট হচ্ছে। ট্রাক চলাচল বন্ধ থাকায় তিনি কপি কাটতে পারছেন না। সাত্তারের মতো অবস্থা যশোরের কয়েক হাজার সবজিচাষির।
যশোর-মাগুরা ও যশোর-ঝিনাইদহ সড়কের পাশে যত দূর চোখ যায় শুধুই সবজির খেত। শীতকালীন সবজি শিম, বাঁধাকপি, ফুলকপি, বেগুন, মুলা চাষেই এ অঞ্চলের কৃষকের ভাগ্য নিহিত। সবজি চাষই তাঁদের জীবিকার প্রধান উৎস। এ বছর দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সেই সবজি এবার খেতে পড়েই নষ্ট হচ্ছে। দিনের পর দিন অবরোধে সবজি দেশের কোথাও পাঠানো যাচ্ছে না।
সদর উপজেলার কোদালিয়া গ্রামের সবজির খেতে বসেই কথা হয় আবদুস সাত্তারের সঙ্গে। তিনি জানান, এক বিঘা জমিতে বাঁধাকপি চাষ করতে চাষ, বীজ, সার, সেচ, শ্রমিক ও জমির ইজারা মূল্যসহ সব মিলিয়ে তাঁর ২৩ থেকে ২৪ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। প্রতিদিন দুই থেকে তিন ট্রাক করে সবজি তোলার কথা তাঁর। অবরোধের কারণে পরিবহন সংকট থাকায় সবজি সরবরাহ করা যাচ্ছে না। গত পাঁচ দিন সবজি তুলতে না পারায় বর্তমানে তাঁর খেতে অন্তত দুই লাখ বাঁধাকপি পড়ে আছে। এসব বাঁধাকপি ফেটে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি। এ অবস্থা চলতে থাকলে ব্যাংকের ঋণের টাকা কীভাবে পরিশোধ করবেন, তা নিয়ে চিন্তিত এই চাষি। একটি বেসরকারি ব্যাংক থেকে বড় অঙ্কের টাকা ঋণ নিয়ে চাষের কাজে লাগিয়েছেন বলেও তিনি জানান।
সাত্তার জানান, বর্তমানে বাজারে প্রতিটি বাঁধাকপির দাম আট থেকে ১০ টাকা। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে প্রতিটি বাঁধাকপি ১২ থেকে ১৫ টাকা দরে বিক্রি হতো। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে নিঃস্ব হওয়া ছাড়া কোনো পথ থাকবে না তাঁর মতো আরও অনেকের। আরেক চাষি এমরামুল ইসলামও ছয় বিঘা জমিতে বাঁধাকপির চাষ করেছেন। ফসলই তাঁর আয়ের একমাত্র উৎস। তিনিও ধারদেনা করে চাষাবাদ করেন। অবরোধের কারণে এ বছর তিনি কপির দাম পাচ্ছেন না বলে জানান। তাঁর খেতে অন্তত ২০ হাজার কপি রয়েছে কাটার উপযোগী, যা ফেটে নষ্ট হচ্ছে।
অবরোধের কারণে মালিকেরা ট্রাক চালানোর সাহস পাচ্ছেন না। ঝুঁকি নিয়ে দু-একটি চলছে, তাতে আবার দ্বিগুণ বা তিন গুণ টাকা গুনতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। যশোর এলাকার সবচেয়ে বড় সবজির মোকাম বারীনগর বাজার থেকে প্রতিদিন প্রায় ৪০টি ট্রাক বিভিন্ন স্থানে সবজি নিয়ে যায়। অবরোধের কারণে এখন এই মোকাম থেকে মাত্র দু-তিনটি ট্রাক ছেড়ে যাচ্ছে।
আবদুস সাত্তার জানান, অবরোধে দ্বিতীয় দিনে পুলিশ প্রহরায় ১০ ট্রাক সবজি ঢাকায় পাঠানো হয়। কিন্তু পথে সবকটি ট্রাকের সামনের কাচ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এখন আর কোনো ট্রাক ভাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।