পুরোনোগুলো রেখে নতুন কলেজ জাতীয়করণের তোড়জোড়

সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলা সদরে ৪২ বছরের পুরোনো ডিগ্রি কলেজটি জাতীয়করণের দাবি জানিয়ে আসছিলেন এলাকাবাসী। কিন্তু সে দাবি উপেক্ষা করে চার বছর আগে প্রতিষ্ঠিত, নন-এমপিওভুক্ত এবং উপজেলা সদর থেকে বেশ দূরে বিলের মধ্যে স্থাপিত কম শিক্ষার্থীর একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করা হচ্ছে।
নতুন ওই কলেজটির নাম বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব আইডিয়াল কলেজ। প্রতিষ্ঠাতা পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান অধ্যাপক হোসেন মনসুর।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে কলেজটি জাতীয়করণের দাবিতে আবেদন করেছেন হোসেন মনসুর। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) একটি পরিদর্শক দল সম্প্রতি কলেজটি পরিদর্শন করেছে।
এ নিয়ে এলাকার মানুষের মধ্যে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। তাঁরা তাড়াশ ডিগ্রি কলেজকে জাতীয়করণের দাবিতে প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, স্থানীয় প্রশাসনসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছেন।
তাড়াশ ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক মো. মোক্তার হোসেনের সই করা আবেদনে বলা হয়, উপজেলা সদর থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে বারুহাস ইউনিয়নের বিনোদপুর গ্রামে ২০০৯ সালে হোসেন মনসুর বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব আইডিয়াল কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। কলেজটি এখনো এমপিওভুক্তি (বেতন বাবদ মাসিক সরকারি অনুদান) হয়নি। তার আগেই কলেজটি জাতীয়করণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
অথচ উপজেলা সদরে ১৯৭২ সালে তিন একর জায়গার ওপর ২৫ বিঘা জমিতে তাড়াশ ডিগ্রি কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। কলেজে প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থীসহ পর্যাপ্ত অবকাঠামোসুবিধা রয়েছে। তিনটি বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) কোর্সও রয়েছে। হোসেন মনসুর ওই কলেজটির পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি।
জানা যায়, নতুন যে কলেজটি জাতীয়করণের চেষ্টা করা হচ্ছে সেটিতে প্রয়োজনীয় অবকাঠামোসহ শিক্ষক ও শিক্ষার্থী পর্যাপ্ত নয়। এ বছর উচ্চমাধ্যমিকে মাত্র ৩২ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। দ্বিতীয় বর্ষে পড়াশোনা করছে ৮৫ জন। বর্তমানে কলেজে ১৯ জন শিক্ষক রয়েছেন।
মোক্তার হোসেন বলেন, নতুন কলেজের হিসাববিজ্ঞানের শিক্ষক মোক্তার হোসেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এবং উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি। মূলত তিনিই রাজনৈতিক প্রভাবে কলেজের সার্বিক দায়িত্ব পালন করে থাকেন।
অবশ্য মোক্তার হোসেনের ভাষ্যমতে, কলেজটি প্রতিষ্ঠা করার পর এমপিওভুক্তির জন্য আবেদন করা হয়। কিন্তু এমপিওভুক্তির সুযোগ না থাকায় পরবর্তী সময়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী জাতীয়করণের জন্য আবেদন করা হয়। তাঁর মতে, একশ্রেণীর লোক কলেজটি যাতে জাতীয়করণ না হয়, সে জন্য উঠেপড়ে লেগেছে।
কলেজের অধ্যক্ষ মো. মোজাম্মেল হক বলেন, নিয়মানুযায়ী কলেজটি জাতীয়করণের লক্ষ্যে সব কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে। এখানে কোনো অনিয়মের আশ্রয় নেওয়া হয়নি।
জানতে চাইলে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান অধ্যাপক হোসেন মনসুর প্রথম আলোকে বলেন, সরকার অনেক কলেজ সরকারীকরণ করে থাকে। জাতীয়করণের ক্ষেত্রে পুরাতন বা বড় কলেজ একমাত্র শর্ত হতে পারে না। সরকার চাইলে যেকোনো কলেজকেই জাতীয়করণ করতে পারে। এ ছাড়া তাড়াশ কলেজকেও উদ্যোগ থেকে বাদ দেওয়া হয়নি।
তাড়াশ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ম ম আমজাদ হোসেন বলেন, উপজেলা সদরের কলেজটি বাদ দিয়ে বিলের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত কলেজকে কোন নিয়মে জাতীয়করণ করা হচ্ছে বিষয়টি বোধগম্য নয়।