আড়াই বছর সাজা কম খেটেছেন নিজাম হাজারী

সাংসদ নিজাম উদ্দিন হাজারী
সাংসদ নিজাম উদ্দিন হাজারী

ফেনী-২ আসনের আওয়ামী লীগের সাংসদ নিজাম উদ্দিন হাজারী তাঁর কারাদণ্ডের পুরো সাজা খেটে মুক্তি পাননি। অস্ত্র মামলায় তাঁর মোট ১০ বছরের সাজা হয়েছিল। এর মধ্যে তিনি ৬২৫ দিন সাজা রেয়াত পান। এটা বাদ দেওয়ার পরও তাঁর ২ বছর ৬ মাস ১৬ দিন সাজা খাটা বাকি রয়েছে।
হাইকোর্টে কারা মহাপরিদর্শকের দেওয়া এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদনে এসব তথ্য দেওয়া হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বিচারপতি মো. এমদাদুল হক ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে কারা মহাপরিদর্শকের প্রতিবেদনটি জমা দেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আমিনুর রহমান চৌধুরী।
এর আগে নিজাম হাজারীর সংসদ সদস্যপদ নিয়ে দেওয়া রুল শুনানিতে গত ২৬ মে হাইকোর্টের এই বেঞ্চ এক আদেশে বলেন, কারা কর্তৃপক্ষকে কয়েকটি বিষয় আদালতকে জানাতে হবে। প্রথমত, অস্ত্র মামলায় নিজাম হাজারীর কারাদণ্ডের যে সাজা হয়েছিল, তাতে তিনি কোনো রেয়াত পেয়েছিলেন কি না। দ্বিতীয়ত, সাজা রেয়াত করা হয়ে থাকলে ঠিক কত দিনের জন্য তা করা হয়েছিল। তৃতীয়ত, সাজাভোগ ও রেয়াত করা সাজার একটি পূর্ণাঙ্গ হিসাব দিতে হবে। সেই সঙ্গে সাজা রেয়াতের সিদ্ধান্ত-সংশ্লিষ্ট নথিপত্র এই হিসাবের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। কারা মহাপরিদর্শককে প্রতিবেদনের মাধ্যমে এসব তথ্য জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।
গতকাল কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীনের জমা দেওয়া প্রতিবেদনটি আদালতে পড়ে শোনানো হয়। তাতে বলা হয়, আদালতের আদেশ পাওয়ার পর চট্টগ্রাম বিভাগের কারা উপমহাপরিদর্শককে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়। ওই তদন্ত কমিটি নিজাম হাজারীর সাজা ও রেয়াতের হিসাব করে দেখেছে, নিজাম হাজারী সাজা রেয়াত পাওয়ার পরও পুরো সাজা খেটে মুক্তি লাভ করেননি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ১০ বছরের সাজার মধ্যে তিনি সাজা খেটেছেন ৫ বছর ৮ মাস ১৯ দিন। কারা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সাজা রেয়াত পেয়েছেন 

১ বছর ৮ মাস ২৫ (৬২৫ দিন)। রেয়াতসহ মোট সাজা ভোগ করেছেন ৭ বছর ৫ মাস ১৪ দিন। এখনো সাজা খাটা বাকি আছে ২ বছর ৬ মাস ১৬ দিন। তিনি জামিনে মুক্তি পান ২০০৬ সালের ১ জুন।

কারা মহাপরিদর্শকের এই প্রতিবেদনের ওপর লিখিত জবাব দেওয়ার জন্য নিজাম হাজারীর আইনজীবী নুরুল ইসলাম সুজন আদালতের কাছে সময় চান। আদালত এ বিষয়ে শুনানির জন্য ২৬ জুলাই পরবর্তী দিন নির্ধারণ করেন।

আদালতে রিট আবেদনকারী পক্ষে ছিলেন আইনজীবী সত্য রঞ্জন মণ্ডল ও রাশিদা চৌধুরী। প্রথম আলোর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আফতাব উদ্দিন ছিদ্দিকী।

‘সাজা কম খেটেই বেরিয়ে যান সাংসদ’ শিরোনামে ২০১৪ সালের ১০ মে প্রথম আলোতে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়৷ এতে বলা হয়, ২০০০ সালের ১৬ আগস্ট অস্ত্র আইনের এক মামলায় নিজাম হাজারীর ১০ বছরের কারাদণ্ড হয়। তিনি ২ বছর ১০ মাস কম সাজা খেটে কারাগার থেকে মুক্তি পান।

প্রথম আলোর এই প্রতিবেদন যুক্ত করে নিজাম হাজারীর সংসদ সদস্যপদে থাকার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন ফেনী জেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন ভূঁইয়া। রিটে বলা হয়, সংবিধানের ৬৬(২) (ঘ) অনুচ্ছেদ অনুসারে, কোনো ব্যক্তি সংসদের সদস্য নির্বাচিত হওয়ার এবং সংসদ সদস্য থাকার যোগ্য হবেন না, যদি তিনি নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে কমপক্ষে দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন এবং তাঁর মুক্তিলাভের পর পাঁচ বছর অতিবাহিত না হয়ে থাকে। সে হিসেবে নিজাম হাজারী ২০১৫ সালের আগে সংসদ সদস্য হতে পারেন না। অথচ তিনি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে সংসদ সদস্য হয়েছেন।

রিট আবেদনের ওপর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০১৪ সালের ৮ জুন হাইকোর্ট রুল দেন। এরপর হাইকোর্টের দুটি বেঞ্চ এই রুল শুনানিতে বিব্রতবোধ করেন। তারপর বিচারপতি মো. এমদাদুল হকের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে রিটটি শুনানির জন্য পাঠান প্রধান বিচারপতি। এই বেঞ্চে গত ১৯ জানুয়ারি রুল শুনানি শুরু হয়।