বহির্বিভাগের রোগীরা সন্তুষ্ট

আগারগাঁওয়ের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস ও হাসপাতালের সেবা নিয়ে বহির্বিভাগের রোগীরা সন্তুষ্ট হলেও ভর্তি রোগীরা তেমন সন্তুষ্ট নন। বরাদ্দের সব ওষুধ না পাওয়াসহ নানা অভিযোগ তাঁদের।
গত শনিবার সকালে গিয়ে দেখা যায়, টিকিট কাউন্টারের সামনে নারী-পুরুষের দীর্ঘ সারি। ১০ টাকার টিকিট কেটে সকাল আটটা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত বহির্বিভাগে সেবা পাওয়া যায়।
নরসিংদী থেকে আসা এক রোগীর আত্মীয় মুক্তা আক্তার বলেন, নিয়মিতই এখানে তাঁর পরিবারের সদস্যরা সেবা নিয়ে থাকেন। তিনি বলেন, এখানকার সেবার মান ভালো। ডাক্তাররাও আন্তরিক।
হাসপাতালটি ৩০০ শয্যার। কার্যক্রম শুরু ২০১২ সাল থেকে। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, বহির্বিভাগে প্রতিদিন ৯০০ থেকে ১ হাজার রোগী সেবা পাচ্ছেন।
বহির্বিভাগে রোগীরা হাসপাতালের চিকিৎসাব্যবস্থা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকলেও অন্তর্বিভাগে নানা অনিয়মের কথা বলেছেন। ভর্তি রোগীরা ওষুধ পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন। ছয় তলার নিউরোলজি ওয়ার্ডের এক রোগীর আত্মীয় আবদুল হাদি বলেন, সব অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধই তাঁদের বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে। হাই-ডিপেনডেন্সি ইউনিটের এক রোগীর আত্মীয় নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, স্যালাইন আর প্যারাসিটামল বাদে সব ওষুধই তাঁরা বাইরে থেকে কিনছেন। তিনি বলেন, ‘ওমিপ্রাজলের (গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ) মতো কমন ওষুধও বাইরে থেকে কিনছি। আর এলবুটিন নামে একটি ইনজেকশন বাইরে থেকে সাড়ে ছয় হাজার টাকায় কিনতে হচ্ছে। নার্সরা বলেছেন যদি বাইরে না পাওয়া যায় তখন তাঁরা দেখবেন।’
এই হাসপাতালে আটটি অস্ত্রোপচার কক্ষ রয়েছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, এখানে প্রতিদিন গড়ে তিন-চারটি বড় অস্ত্রোপচার হয়। তবে হাসপাতালের এক চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আটটি কক্ষে প্রতিদিন ১৬টি অস্ত্রোপচার করার সুযোগ থাকলেও সিনিয়র সার্জনদের আন্তরিকতার অভাবে তা হচ্ছে না। ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিদের রোববার ও বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার পর হাসপাতালে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া আছে। কিন্তু শনিবার সকালে বহির্বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, মেডিকেল অফিসারদের কক্ষগুলোর সামনে অনেক চেয়ার তাঁদের দখলে। বসার জায়গা না পেয়ে অনেক রোগী দাঁড়িয়ে আছেন। এক রোগীর আত্মীয় শারমীন আক্তার অভিযোগ করেন, ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা দল বেঁধে বসে আছেন বলে তিনি অসুস্থ ছোট ভাইটিকে নিয়ে বসতে পারছেন না।
হাসপাতালের চতুর্থ তলায় অস্ত্রোপচার কক্ষ, নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র, অস্ত্রোপচার-পরবর্তী পর্যবেক্ষণ কক্ষ, হাই-ডিপেনডেন্সি ইউনিটসহ গুরুতর রোগীদের পরিচর্যার বিভাগগুলো রয়েছে। এ তলায় গিয়ে দেখা যায়, রোগীর আত্মীয়দের বসার জন্য এ তলায় আসন আছে মাত্র নয়টি, কিন্তু কমপক্ষে ৪০ জন নারী-পুরুষ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে মেঝেতে বসে আছেন।
অভিযোগ সম্পর্কে উপপরিচালক নাজিমুন নেসা বলেন, ‘প্রায় ৯৯ শতাংশ ওষুধ রোগীদের হাসপাতাল থেকে সরবরাহ করা হয়। কিছু রেয়ার (দুষ্প্রাপ্য) ওষুধ ছাড়া প্রায় সব ওষুধই আমাদের স্টকে থাকে। অনেক সময় সিস্টাররা স্টোরে টেলিফোন করে খোঁজ নেন না। তাঁদের গাফিলতির কারণে কোনো কোনো সময় এমন হতে পারে।’ অস্ত্রোপচারের পরিমাণ বাড়ানো সম্পর্কে তিনি বলেন, নিউরোলজির অস্ত্রোপচারগুলো অনেক জটিল ও সময়সাপেক্ষ হওয়ায় অস্ত্রোপচারের সংখ্যা বাড়ানো যাচ্ছে না। এ ছাড়া প্রয়োজনীয় লোকবলের অভাব রয়েছে। তিনি বলেন, ‘রোগীদের ভোগান্তি কমাতে আমরা ইতিমধ্যে দুই শিফটে অস্ত্রোপচার করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি।’