অবশেষে নির্মিত হলো স্মৃতিস্তম্ভ

আশুগঞ্জ ট্র্যাজেডি দিবস আজ ৯ ডিসেম্বর, সোমবার। এই দিনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে মিত্র বাহিনীর তিন শতাধিক সেনা শহীদ হন। বলা হয়ে থাকে, পূর্ব রণাঙ্গনে এটিই ছিল পাকিস্তানি বাহিনীর বড় সাফল্য।
এই দিনের কোনো স্মৃতিচিহ্ন দীর্ঘদিন থেকে ছিল না। এ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা ও স্থানীয় লোকজনের মধ্যে ক্ষোভ ছিল। তবে দীর্ঘদিন পর হলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই দিনের শহীদদের স্মৃতি ধরে রাখার উদ্যোগ নেন। বর্তমানে সেখানে এক কোটি ৭৭ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে। এখন তা উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে।
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিভিন্ন গ্রন্থ থেকে জানা গেছে, আশুগঞ্জ শত্রুমুক্ত হয়েছে—এমন খবরের ভিত্তিতে মিত্র বাহিনী আশুগঞ্জ দখলের সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু তখনো আশুগঞ্জে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দুই থেকে তিনটি পদাতিক ব্যাটালিয়ন অবস্থান করছিল। মিত্র বাহিনী আশুগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিরাপত্তা দেয়ালের ৫০ গজের মধ্যে এসে পড়লে আকস্মিকভাবে পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণের শিকার হন। কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাসহ মিত্র বাহিনীর তিন শতাধিক সেনা শহীদ হন। মিত্র বাহিনীর তিনটি ট্যাংক ধ্বংস করে দেওয়া হয়।
পরে ওই দিন সন্ধ্যার মধ্যেই মিত্র বাহিনীর বিমান হামলায় পাকিস্তানি সৈন্যরা সম্পূর্ণ পর্যুদস্ত হয়। এই যুদ্ধে শতাধিক পাকিস্তানি সেনাও নিহত হয়। পরের দিন ১০ ডিসেম্বর রণাঙ্গনে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা সহযোদ্ধাদের লাশ এক জায়গায় স্তূপ করে একাধিক হেলিকপ্টারে করে স্বদেশে নিয়ে যান ভারতীয় সেনারা।
ওই স্থানে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের দাবি ছিল দীর্ঘদিনের। মিত্র বাহিনীর ট্র্যাজেডি ও দাবির বিষয়টি সামনে এনে ২০০৪ সালের ৯ ডিসেম্বর প্রথম আলোয় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
এরপর একই বিষয়ে প্রথম আলোয় একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর ২০১০ সালের ১২ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশুগঞ্জে রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট উদ্বোধন করতে এসে মিত্র বাহিনী ট্র্যাজেডির কথা স্মরণ করে শ্রদ্ধা জানান এবং ওই স্থানে স্মৃতিস্তম্ভ গড়ে তোলার ঘোষণা দেন।
গতকাল রোববার সকালে আশুগঞ্জ গিয়ে দেখা গেছে, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে আশুগঞ্জ তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র সড়কের প্রবেশমুখে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে নবনির্মিত স্মৃতিস্তম্ভটি। স্থানীয় আলকাছ মিয়া জানান, স্মৃতিস্তম্ভটি দেখতে প্রতিদিনই অনেকে আসছেন।
আশুগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী আবু সালেহ মো. অহিদুল হক বলেন, মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে। কাজ শেষ হয়েছে। এই বিজয়ের মাসেই স্মৃতিস্তম্ভটির উদ্বোধন করার সম্ভাবনা রয়েছে।