প্রাণ হারালেন আরও একজন

অস্ত্র কেড়ে নিয়ে পুলিশকে পেটাচ্ছেন শিবিরের এক কর্মী। রাজশাহীর বিনোদপুর বাজারে গতকাল সকালে এ ঘটনা ঘটে  ছবি: প্রথম আলো
অস্ত্র কেড়ে নিয়ে পুলিশকে পেটাচ্ছেন শিবিরের এক কর্মী। রাজশাহীর বিনোদপুর বাজারে গতকাল সকালে এ ঘটনা ঘটে ছবি: প্রথম আলো

বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮-দলীয় জোটের তৃতীয় দফা অবরোধ চলাকালে সংঘর্ষে গতকাল মঙ্গলবার নওগাঁর রানীনগরে একজন মারা গেছেন। এ নিয়ে গত শনিবার থেকে শুরু হওয়া তৃতীয় দফার অবরোধে গতকাল পর্যন্ত চারজন মারা গেলেন। এর আগে দুই দফার অবরোধে মারা যান ৫৭ জন। তিন দফায় অবরোধে এ পর্যন্ত মোট ৬১ জন প্রাণ হারালেন।

গতকাল অবরোধ চলাকালে রাজশাহীর মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) পিটিয়ে পা ও হাতের আঙুল ভেঙে দেন শিবিরের কর্মীরা। শেরপুর এবং চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডসহ বিভিন্ন স্থানে গতকালও গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে।

নওগাঁয় অবরোধ ও জামায়াতের হরতাল চলাকালে সকাল নয়টার দিকে আবাদপুকুর বাজারে দলটি একটি মিছিল বের করে। এ সময় আওয়ামী লীগ-সমর্থিত ব্যবসায়ী ও জনতা অবরোধকারীদের ধাওয়া করলে উভয়ের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে ২০ জন আহত হন। গুরুতর আহত জামায়াতের কর্মী শুকবর আলীকে নওগাঁ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। রাজশাহীতে যাওয়ার পথেই তিনি মারা যান।

খুলনার খালিশপুরে অবরোধ চলাকালে বিএনপি গোয়ালখালী থেকে একটি মিছিল বের করে। মিছিলে অংশগ্রহণকারী হেলাল হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, হূদেরাগে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। এর আগেও তিনি হূদেরাগে আক্রান্ত হয়েছিলেন।

সিলেট শহরের শিবগঞ্জ এলাকায় গতকাল পুলিশের সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এ সময় পুলিশের ভাড়া করা টেম্পোতে পেট্রলবোমা মেরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এতে পুলিশের হেলমেট, জ্যাকেটসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম পুড়ে যায়  ছবি: প্রথম আলো
সিলেট শহরের শিবগঞ্জ এলাকায় গতকাল পুলিশের সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এ সময় পুলিশের ভাড়া করা টেম্পোতে পেট্রলবোমা মেরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এতে পুলিশের হেলমেট, জ্যাকেটসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম পুড়ে যায় ছবি: প্রথম আলো



প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অবরোধ চলাকালে সকাল সোয়া আটটার দিকে রাজশাহীর বিনোদপুর এলাকার শিবিরের কর্মীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে মিছিল বের করেন। সেখানে একটি পিকআপ ভ্যানে থাকা মতিহার থানার ওসি আবদুল মজিদসহ পুলিশকে লক্ষ্য করে ককটেল ছুড়ে মারেন শিবির কর্মীরা। পুলিশ পাল্টা রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এ সময় শিবির কর্মীদের মধ্য থেকে কেউ একজন বলে ওঠেন, ‘পুলিশ কম আছে ধর।’ এর পরপরই শিবির কর্মীরা ধাওয়া দিলে ওসিসহ চার পুলিশ সদস্য রাস্তার দৌড়াতে থাকেন।

কিন্তু শিবির কর্মীরা চারদিক থেকে তাঁদের ঘেরাও করে লাঠি দিয়ে পেটাতে থাকেন। একপর্যায়ে তাঁরা কনস্টেবল রেজাউল করিম ও মেরাজ উদ্দিনের হাত থেকে শটগান কেড়ে নিয়ে পেটাতে শুরু করেন। তাঁরা ওসি ও একজন পুলিশ কনস্টেবলকে বাজারের রেজভী টেলিকম ও মোবাইল ফোন সার্ভিসের দোকানের ভেতর পেটান। পরে অতিরিক্ত পুলিশ এলে শিবির কর্মীরা পালিয়ে যান। এরপর পুলিশ তাঁদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়। বিকেল পাঁচটার দিকে নগরের ডাঁশমারী এলাকার কবরস্থানের পাশের নর্দমা থেকে সকালে লুট হওয়া মতিহার থানার ওসির ওয়্যারলেস সেটটি উদ্ধার করা হয়।

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানঘাটা এলাকায় বিকেল সোয়া চারটার দিকে একটি স্ক্র্যাপবাহী ট্রাকে আগুন দেন অবরোধ-সমর্থকেরা। কুমিরা ফায়ার সার্ভিসের একটি দল আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এর আগে গত সোমবার রাতে সীতাকুণ্ডের শীতলপুর চৌধুরীঘাটা, মাদামবিবিরহাট নেভি গেট, বানুরবাজার ও আবদুল্লাহরঘাটা এলাকায় দুটি কাভার্ড ভ্যান ও তিনটি ট্রাকে আগুন দেন বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা। এ সময় তাঁদের দেওয়া আগুনে দগ্ধ হয়েছেন ট্রাকচালক মো. আবদুল আলিম ও তাঁর সহকারী।

সিলেট নগরের সুবিদবাজার এলাকায় গতকাল পিকেটিংকালে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র হাতে শিবিরের কর্মীরা  ছবি: প্রথম আলো
সিলেট নগরের সুবিদবাজার এলাকায় গতকাল পিকেটিংকালে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র হাতে শিবিরের কর্মীরা ছবি: প্রথম আলো

চুয়াডাঙ্গায় অবরোধ চলাকালে সোমবার রাতে হরতালবিরোধীরা আলমডাঙ্গা উপজেলার হাঁপানিয়া গ্রামের জামায়াত কর্মী বেল্টু রহমানের দোকান আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেন। এতে খোকন (২৮), হাসিবুল (২৭), ইমদাদুল (২৫), আবদুল গফুর (৩২), মিনারুল (৩০) ও আবদুল্লাহ আহত হন। ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের শেরপুরের গাড়িদহ ও মহিপুর এলাকায় গত সোমবার রাতে প্রথম আলো পত্রিকাবাহী গাড়িসহ অন্তত ৫০টি ভাঙচুর করেন অবরোধকারীরা।

নারায়ণগঞ্জে অবরোধ চলাকালে গতকাল সকালে শিবির কর্মীরা একটি ট্রাকে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। ভাঙচুর করেন বেশ কয়েকটি যানবাহন। এ ছাড়া নাটোর, লক্ষ্মীপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অবরোধকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে।

সাতক্ষীরায় অবরোধ চলাকালে টায়ার জ্বালিয়ে, সড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে, ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে মিছিল ও সমাবেশ করেছে ১৮-দলীয় জোট। বাগেরহাটের কচুয়ায় পুলিশ-অবরোধকারী সংঘর্ষে ১০ জন আহত হন। এ সময় সাতটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নির্বাচনী কার্যালয়সংলগ্ন একটি ভবন থেকে ১৯টি হাতবোমা ও সরঞ্জাম উদ্ধার করে পুলিশ।
(প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন নিজস্ব প্রতিবেদক রাজশাহী, নওগাঁ, চুয়াডাঙ্গা, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড ও সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রতিনিধি)