বাকি দুই জঙ্গির পরিচয় মিলেছে

নারায়ণগঞ্জ শহরের পাইকপাড়ার একটি বাড়িতে পুলিশের অভিযানে তিন জঙ্গি নিহত হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যার দিকে তাদের লাশ বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে যাওয়া হয়। সন্ধ্যায় ঘটনাস্থল থেকে তোলা ছবি l প্রথম আলো
নারায়ণগঞ্জ শহরের পাইকপাড়ার একটি বাড়িতে পুলিশের অভিযানে তিন জঙ্গি নিহত হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যার দিকে তাদের লাশ বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে যাওয়া হয়। সন্ধ্যায় ঘটনাস্থল থেকে তোলা ছবি l প্রথম আলো

নারায়ণগঞ্জে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নিহত বাকি দুই জঙ্গির পরিচয় পাওয়া গেছে। তাঁরা হলেন তাওসিফ হোসেন ও ফজলে রাব্বি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্র এমনটাই জানিয়েছে।
গতকাল শনিবার নারায়ণগঞ্জে জঙ্গিবিরোধী অভিযান হয়। অভিযান শেষে পুলিশ জানায়, তিন জঙ্গি নিহত হয়েছেন। তাঁদের একজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক তামিম চৌধুরী। তিনিই গুলশানে হামলার সমন্বয়ক বা মাস্টারমাইন্ড।
বাকি দুই জঙ্গির পরিচয় গতকাল রাত পর্যন্ত নিশ্চিত করেনি পুলিশ।
তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি সূত্র জানায়, আঙুলের ছাপ মিলিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র থেকে দুই জঙ্গির মধ্যে একজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তাঁর নাম তাওসিফ হোসেন। তাঁর বাবা চিকিৎসক। বাসা ঢাকার ধানমন্ডিতে। গ্রামের বাড়ি রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানার রামচন্দ্রপুরে।
এর আগে প্রথম আলোর অনুসন্ধানে জানা গিয়েছিল, এই তাওসিফ চলতি বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি নিবরাস ইসলামের (গুলশান হামলায় নিহত) সঙ্গে বাড়ি ছেড়েছিলেন। পরে ধানমন্ডি থানায় নিখোঁজ হিসেবে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিল পরিবার। এরপর থেকেই নিখোঁজ ছিলেন তিনি। গত মাসে র‍্যাবের প্রকাশিত নিখোঁজ ব্যক্তিদের তালিকায় সাত নম্বরে তাওসিফের নাম ছিল।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আরেকটি সূত্র প্রথম আলোকে জানায়, নিহত আরেক জঙ্গির নাম ফজলে রাব্বি। তাঁর বাড়ি যশোরের সদর উপজেলার কিসমত নোয়াপাড়ায়।

পরিবার ও স্থানীয় প্রশাসন এখনো রাব্বির পরিচয় নিশ্চিত করেনি।

প্রথম আলোর যশোর অফিস জানান, ফজলে রাব্বি নামের যশোরের মাইকেল মধুসূদন (এমএম) কলেজের পদার্থবিজ্ঞানের প্রথম বর্ষের একজন ছাত্র গত এপ্রিল থেকে নিখোঁজ আছেন।

জানতে চাইলে এই রাব্বির মা ও বোন মুঠোফোনে গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা পুরোপুরি নিশ্চিত না। তবে শুনেছি, রাব্বি নারায়ণগঞ্জে নিহত হয়েছে।’

জানা যায়, নিখোঁজ হওয়ার আগে রাব্বি তাঁর ভর্তি বাতিল করে কলেজ থেকে সব কাগজপত্র তুলে নেন। এ বিষয়ে রাব্বির বাবা কাজী হাবিবুল্লাহ গত ৭ এপ্রিল যশোরের কোতোয়ালি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। ছেলের নিখোঁজের বিষয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞাপনও দেন তিনি।

সম্প্রতি রাব্বির বাড়িতে গিয়ে স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৫ এপ্রিল সকালে কলেজে যাওয়ার কথা বলে রাব্বি বাড়ি থেকে বের হন। এ সময় তাঁর পিঠে একটি ঝোলানো ব্যাগ ছিল। ব্যাগে জামা-কাপড় ছিল। এরপর আর বাড়ি ফেরেননি তিনি।

কিসমত নোয়াপাড়ার কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, রাব্বি এলাকার কারও সঙ্গে তেমন মিশতেন না। তবে স্থানীয় একটি মসজিদের ইমামের সঙ্গে তাঁর সখ্য ছিল। ঈদের দিন পুলিশ ও র‍্যাবের সদস্যরা রাব্বির বাড়িতে গিয়ে অনুসন্ধান করেন।

সম্প্রতি যশোরের পুলিশ পাঁচ ব্যক্তিকে জঙ্গি আখ্যা দিয়ে শহরে পোস্টার লাগায়। তাঁদের সম্পর্কে তথ্য দিতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। ওই পাঁচজনের একজন রাব্বি।

নারায়ণগঞ্জে নিহত জঙ্গিদের মধ্যে কিসমত নোয়াপাড়ার রাব্বি আছেন কি না—এমন প্রশ্নে গতকাল রাতে যশোরের সহকারী পুলিশ সুপার ভাস্কর সাহা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এখনো শতভাগ নিশ্চিত না। তবে আমাদের কাছে যে ধরনের তথ্য আছে, তাতে সে রকমই মনে হচ্ছে।’

গত রাতে জানতে চাইলে যশোরের কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইলিয়াস হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, নিখোঁজ রাব্বির নিহত হওয়ার কোনো তথ্য তাঁর জানা নেই।

আরও পড়ুন..