কেউ বলে পড়তি, কেউ বলে বাড়তি

আগামীকাল ঈদ। যাঁরা এখনো কোরবানির পশু কেনেননি, তাঁদের জন্য আজকের দিনটি গুরুত্বপূর্ণ। পশু কেনার বাজেট ঠিক রাখতে চাইলে বিক্রেতাদের সঙ্গে দর-কষাকষিতে জিততে হবে। অন্যদিকে বিক্রেতারা যতটা পারা যায় বেশি দাম নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। আজ সোমবার শেষ দিনে গরুর হাট ঘুরে দেখা গেল, কোনো কোনো হাটে মাঝারি ও ছোট আকারের গরু বিক্রি হয়ে গেছে। বড় আকৃতির গরু বেশি দামে বিক্রির অপেক্ষায়। আবার কোনো কোনো হাটে পর্যাপ্ত পরিমাণে গরু রয়েছে। কোনো হাটে ক্রেতা কম, কোনোটায় বেশি। 

ধূপখোলার গরুর হাট । ছবি: আসাদুজ্জামান
ধূপখোলার গরুর হাট । ছবি: আসাদুজ্জামান

বিক্রেতারা দাবি করছেন, আজ গরু সস্তা যাচ্ছে! সকালের দিকে বৃষ্টি হওয়ায় দর-কষাকষিতে ক্রেতারাই বেশি লাভবান হয়েছেন বলে মনে করছেন তাঁরা।
গরু বিক্রেতা আকসিদুলের কণ্ঠে তেমনই সুর। জানালেন, গরুর বাজার আজ সস্তা। ঝিনাইদহ থেকে আকসিদুল পুরান ঢাকার ধূপখোলার মাঠে গরু এনেছিলেন ২৫টি। ইতিমধ্যে ১৫টি বিক্রি করেছেন। রয়ে যাওয়া ১০টি গরু ভালো দামে বিক্রির আশা ছিল তাঁর। আকসিদুলের ভাষ্য, ‘গতকাল গরুর বাজার ছিল চড়া। কিন্তু আজ সকাল থেকে বাজার কমতি। যে গরুর দাম গতকাল ক্রেতা বলেছিলেন ৯০ হাজার টাকা, তা আজ বলছেন ৬০ হাজার টাকা। প্রতি গরুতে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা কম বলছেন।’
দুই দিন ধরে হাট ঘোরার পর আজ গরু কিনতে সক্ষম হলেন বলে জানালেন সাদেকুর রহমান নামের এক ক্রেতা। প্রথম আলোকে বললেন, ‘গতকালও বাজারে এসেছিলাম গরু কিনতে। আজ দরদাম করে কিনতে পেরেছি।’

মাদারীপুর থেকে ৩০টি গরু এনে যাত্রাবাড়ীর হাটে তুলেছেন আবদুল জলিল ব্যাপারী। তাঁর আশা ছিল, শেষ দিনে গরুর বাজার চড়া হবে। ভালো দামে বিক্রি করতে পারবেন। আবদুল জলিল বললেন, ‘শেষ দিনে বাজার খুব খারাপ। দাম কম বলছেন ক্রেতারা।’
সরেজমিনে দেখা গেল, পুরান ঢাকার ধূপখোলা ও যাত্রাবাড়ীর গরু মাঠের অধিকাংশ গরু বিক্রি হয়ে গেছে। হাটে গরু আছে কম। ক্রেতাও কম দেখা গেছে। এর বিপরীত চিত্র ধোলাইখাল ও সাদেক হোসেন খোকা মাঠের গরুর হাটে। এই হাটগুলোতে অনেক গরু দেখা গেছে।
রাজধানীর একমাত্র স্থায়ী পশুর হাট গাবতলীতে গিয়ে দেখা গেছে, বড় আকারের গরুর সংখ্যা অনেক বেশি।
বিক্রেতারা বলছেন, বেশির ভাগ মাঝারি ও ছোট আকারের গরু ইতিমধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে। তবে গত দুদিনের তুলনায় আজ গরুর দাম তুলনামূলক কম বলে দাবি করছেন বিক্রেতারা।
এদিকে হঠাৎ বৃষ্টির কারণে হাটে আসা ক্রেতাদের দুর্ভোগে পড়তে হয়। গরুর গোবর, মলমূত্র আর বৃষ্টির পানিতে হাটের অবস্থা বেহাল। পুরো হাট কাদায় ডুবে আছে। বৃষ্টির কারণে যারা গরু নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন, তাঁদের ভিজে যাওয়া ছাড়া উপায় ছিল না।
হাট ঘুরে ও ব্যাপারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হাটে প্রথম থেকেই ছোট-মাঝারি আকারের গরুর চাহিদা বেশি। হাটে প্রচুর বড় গরু অবিক্রীত রয়ে গেছে। ঈদের আগের দিন বেশি দামদর না করে অল্প লাভ পেলেই বিক্রি করে বাড়ি চলে যাবেন বলে ব্যাপারীরা জানান।
সিরাজগঞ্জ থেকে ৩৫টি গরু নিয়ে এসেছিলেন শহীদুল। এখন পর্যন্ত ২৬টি গরু বিক্রি হয়েছে। তিনি বলেন, সবার চাহিদা ছোট গরুর দিকে। বড় গরুর দাম বলছেন না। দুদিন আগে যে দামে গরু বিক্রি হয়েছিল, আজ তার চেয়ে অনেক কম দাম বলছেন ক্রেতারা। আজ বাকি গরুগুলো বিক্রি হয়ে যাবে বলে আশা করছেন তিনি।