পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র সুন্দরবনের ক্ষতি করবে

রামপাল ছাড়াও সুন্দরবনের পাশে আরেকটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প এবং প্রস্তাবিত একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগেও আপত্তি জানিয়েছে ইউনেসকো। জাতিসংঘের বিজ্ঞান, শিক্ষা ও ঐতিহ্যবিষয়ক এই সংস্থা বলেছে, ফারাক্কা বাঁধও সুন্দরবনের জন্য ক্ষতির কারণ। একই আশঙ্কায় রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল করার সুপারিশ করা হয়েছে।
সরকারের কাছে পাঠানো ইউনেসকোর প্রতিবেদনে সুন্দরবনের জন্য আরও কয়েকটি হুমকির কথা বলা হয়েছে। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ সুন্দরবনের ভেতরে ও পাশে নদী খনন এবং জাহাজ চলাচল বাড়ানোর যেসব উদ্যোগ নিয়েছে, তা সুন্দরবনের ক্ষতির কারণ হতে পারে। গত দুই বছরে সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে তেল, সার, সিমেন্ট ও কয়লাবাহী জাহাজডুবির ঘটনার উল্লেখ করে সংস্থাটি বলেছে, এসব দুর্ঘটনার পরও জাহাজ চলাচলের ক্ষেত্রে যে নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়ার দরকার ছিল, তা নেওয়া হচ্ছে না।
ইউনেসকো মনে করে, এসব প্রকল্প নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সমীক্ষা ও সমন্বিত উদ্যোগ তারা দেখতে পায়নি। ফলে সুন্দরবন ঘিরে এসব তৎপরতা জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি করতে পারে।

>বিশ্বব্যাংক- ডব্লিউএইচও-ইউনেসকো বাংলাদেশের উন্নয়নকে আটকে দিতে চায়। এর আগে পদ্মা সেতু যাতে না হয়, সে জন্য বিশ্বব্যাংক অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে।
শাজাহান খান
নৌপরিবহনমন্ত্রী

তবে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান ইউনেসকোর আশঙ্কাকে ‘ষড়যন্ত্র’ হিসেবে দেখছেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক-ডব্লিউএইচও -ইউনেসকো বাংলাদেশের উন্নয়নকে আটকে দিতে চায়। এর আগে পদ্মা সেতু যাতে না হয়, সে জন্য বিশ্বব্যাংক অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে। এবার তারা রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ এবং মোংলা বন্দর অচল করার ষড়যন্ত্রে মেতেছে। সরকার এসব ষড়যন্ত্রের বাধা ডিঙিয়ে যেভাবেই হোক রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র করবে।
ইউনেসকোর প্রতিবেদনে রামপাল এলাকায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ওরিয়নের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের ব্যাপারে আপত্তি তুলে বলা হয়, এ ধরনের আরও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ সুন্দরবনের চারপাশে বেশ কিছু শিল্পকারখানা স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এসব উদ্যোগ রামপাল প্রকল্পের মতোই ক্ষতিকারক কি না, তা সমীক্ষা করে দেখা উচিত।
ওই সমীক্ষা প্রতিবেদন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন) এবং ইউনেসকোর বিশ্বঐতিহ্য কেন্দ্রের কাছে পর্যালোচনার জন্য জমা দেওয়ার কথা বলেছে ইউনেসকো। সংস্থা দুটি থেকে ওই সমীক্ষা পর্যালোচনা করার পর এ ধরনের প্রকল্পের ব্যাপারে সরকারকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিষয়টি এখনো পরিকল্পনার আকারে আছে। আমাদের কাছে এ ধরনের ছাড়পত্রের আবেদন জমা পড়লে তারপর এ নিয়ে কথা বলা যাবে। আর ওরিয়নকে এখনো পরিবেশ ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি।’
ওরিয়ন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সালমান ওবায়দুল করিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা তিন বছর আগে পরিবেশ অধিদপ্তরে আমাদের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ইআইএ প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। তারা এখনো আমাদের অনুমোদন ও পরিবেশ ছাড়পত্র দেয়নি। তবে আমরা অনুমতি পেলে বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি করব, যাতে সুন্দরবনের কোনো ক্ষতি হবে না।’
ইউনেসকোর প্রতিবেদনে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সুন্দরবনের ঝুঁকির বিষয়টি তুলে ধরে বলা হয়েছে, বেশ কিছু প্রকল্প ও ‘উন্নয়ন কর্মকাণ্ড’ সুন্দরবনের পরিবেশকে আরও নাজুক করবে। সুন্দরবনের সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্য ও বন্য প্রাণী হত্যা ও পাচার হচ্ছে উল্লেখ করে সংস্থাটি বলেছে, এই বিপন্নপ্রায় প্রাণীগুলো রক্ষায় উদ্যোগ বাড়াতে হবে।