অনুমোদন ছাড়াই বছরে ২৮ কোটি টাকা খাবারের ব্যয়

.
.

একই প্রশ্ন করেন সরকারি হিসাবসম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি মহীউদ্দীন খান আলমগীর। তিনি এ বিষয়ে বৈঠকে উপস্থিত বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের কাছে ব্যাখ্যা চান।

বৈঠকে উপস্থিত অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সচিব মো. ইউনুসুর রহমান বিষয়টিকে নিয়মবহির্ভূত উল্লেখ করে বলেন, অর্থ বিভাগের অনুমোদন ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক শুধু পরিপত্র জারির মাধ্যমে এ সুবিধা চালু করতে পারে না। তিনি বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।

এ ব্যাপারে সিএজি মাসুদ আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়গুলো নিয়ে সংসদীয় কমিটির বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের কাছে জানতে চাওয়া হলে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, এই অভিযোগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি পক্ষ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে এই প্রতিবেদনের ওপর একটি মত প্রকাশ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক কী মত প্রকাশ করেছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, সিদ্ধান্তটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশের আগে এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করা ঠিক না।

সিএজির প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ২০০৯ সালের ১১ আগস্ট থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতিদিনের দুপুরের খাবার বাবদ ১৩০ টাকা, হালকা নাশতার জন্য ২০ টাকাসহ মোট ১৫০ টাকা করে খাবারের ভর্তুকি দেওয়া হয়। ২০১২ সালের ২৭ নভেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক পর্ষদের ৩৩৪তম সভায় এ ভাতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়। ওই বছর ২৯ ডিসেম্বর এক পরিপত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক থেকে ২০তম গ্রেডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতিদিনের খাবারের ভর্তুকি বাড়িয়ে ২০০ টাকা করা হয়।

জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ অনুসারে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নন-গেজেটেড কর্মচারীরা (১১তম থেকে ২০তম গ্রেড) মাসে ২০০ টাকা টিফিন ভাতা পাবেন। তবে প্রতিষ্ঠান থেকে লাঞ্চ ভাতা বা বিনা মূল্যে দুপুরের খাবার দেওয়া হলে তাঁরা টিফিন ভাতা পাবেন না। আর প্রথম থেকে দশম গ্রেডের কর্মকর্তারা এই ভাতা পাওয়ার আওতায় পড়েন না।

সিএজি কার্যালয়ের প্রতিবেদনে এই খাবারের ভর্তুকি দেওয়াকে অনিয়ম বলে উল্লেখ করা হয়েছে। গত ৯ আগস্ট উপ-মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক শ্যামল কান্তি চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বিষয়টি উল্লেখ করে বলা হয়, অর্থ বিভাগ, ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ও ভাতাদি নির্ধারণ করে অর্থ মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য খাবারের ভর্তুকি মঞ্জুর ও বৃদ্ধির জন্য অর্থ বিভাগের অনুমোদন নেওয়া প্রয়োজন ছিল। অথচ বাংলাদেশ ব্যাংক তা করেনি। ভাতা মঞ্জুর ও বৃদ্ধি করা এবং দ্বিতীয় গ্রেড থেকে ১০ম গ্রেডে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্যও খাবারের ভর্তুকি দেওয়ার ব্যবস্থা করা বিধিসম্মত হয়নি, বরং ক্ষমতাবহির্ভূত হয়েছে। এই অনিয়ম দ্রুত বন্ধ করে এ পর্যন্ত ক্ষমতা বহির্ভূতভাবে এই খাতে যত টাকা দেওয়া হয়েছে, তা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছ থেকে আদায় করা প্রয়োজন।

সরকারি হিসাবসম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি মহীউদ্দীন খান আলমগীর প্রথম আলোকে বলেন, সংসদীয় কমিটির বৈঠকে জানানো হয়েছে, অর্থ বিভাগের অনুমোদন ছাড়াই বাংলাদেশ ব্যাংক খাবারের ভর্তুকি নিচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ ধরনের সুবিধা দিলে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও তা চাইতে পারে। এ বিষয়টি তুলে সিএজি আপত্তি তুলেছে। সিএজির প্রতিবেদন হাতে পেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে এভাবে খাবারের ভর্তুকি দেওয়ার ব্যাখ্যা চেয়েছে। মোট কী পরিমাণ অর্থ খরচ করা হয়েছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী বছরে খাবারের ভর্তুকি খাতে তারা ব্যয় করে ২৮ কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক এ ব্যাপারে লিখিত জবাব দিয়েছে। স্বাধীনতার পর গত ৪৫ বছর এ ভাতা দেওয়া হলেও কখনো তা নিয়ে আপত্তি ওঠেনি উল্লেখ করে বিষয়টি নিষ্পত্তির দাবি জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

উপ-মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক শ্যামল কান্তি চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, সংসদীয় কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে খাবারের ভর্তুকি বিষয়ে অনুসন্ধান করা হয়। এতে অনিয়মের তথ্য পাওয়া গেছে। কত বছরে খাবারের ভর্তুকি বাবদ কী পরিমাণ অতিরিক্ত অর্থ কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যয় করেছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেই হিসাব বের করা হয়নি। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, খাবারের ভর্তুকি বাবদ বছরে তারা ২৮ কোটি টাকা ব্যয় করে।