বিপর্যয়ের মুখে রপ্তানি খাত

কনটেইনারবাহী গাড়ির মালিক ও শ্রমিকদের একটি সংগঠনের টানা কর্মবিরতিতে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে রপ্তানি খাত। গতকাল বুধবারও প্রায় ২৫০ কনটেইনার পণ্য রপ্তানি করা যায়নি। এ নিয়ে গত দুদিনে ৪২৭ কনটেইনার রপ্তানি পণ্য না নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর ছেড়ে গেছে অন্তত ছয়টি জাহাজ। চট্টগ্রামের ১৬টি ডিপোতে গতকালও রপ্তানি না হওয়া অসংখ্য কনটেইনার পড়ে ছিল।

কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশন জানায়, গতকাল বিকেল পর্যন্ত চট্টগ্রামের ১৬টি ডিপোতে রপ্তানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে পণ্যভর্তি প্রায় ছয় হাজার কনটেইনার। এর মধ্যে সিংহভাগই তৈরি পোশাকশিল্পের। আজ বৃহস্পতিবার থেকে শুরু করে আগামী শনিবারের মধ্যে এসব কনটেইনার বন্দর দিয়ে রপ্তানি করার কথা রয়েছে। তবে কর্মবিরতি প্রত্যাহার বা শিথিল করা না হলে পণ্যবাহী এসব
কনটেইনার রপ্তানি করা সম্ভব হবে না। সারা দেশে আমদানি-রপ্তানি পণ্যভর্তি কনটেইনারের ৯৭ শতাংশ চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আনা-নেওয়া করা হয়।

কনটেইনারবাহী গাড়ির মালিক ও শ্রমিকদের সংগঠন ‘চট্টগ্রাম প্রাইম মুভার ট্রেইলার মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ’-এর ডাকে গত সোমবার থেকে কর্মবিরতি চলছে। গত ১৬ আগস্ট সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ এক প্রজ্ঞাপনে গাড়িভেদে পণ্য পরিবহনের পরিসীমা বেঁধে দেওয়ার প্রতিবাদে এবং এই প্রজ্ঞাপন স্থগিতের দাবিতে এ কর্মসূচি ডাকা হয়। সংগঠনের আওতাধীন আট হাজার গাড়িতে আমদানি-রপ্তানি পণ্যবোঝাই কনটেইনার আনা-নেওয়া বন্ধ রয়েছে। এসব গাড়ি ছাড়া কনটেইনার পরিবহন করা যায় না।

গত মঙ্গলবার রাতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পর ডিপো থেকে বন্দরে রপ্তানি পণ্যের কনটেইনার আনার জন্য আট ঘণ্টা কর্মসূচি শিথিল করেন মালিক-শ্রমিকেরা। এ সুযোগে আট ঘণ্টায় ১৬টি ডিপো থেকে ১ হাজার ৫৬৪ কনটেইনার পণ্য বন্দরে এনে জাহাজে তুলে দেওয়া হয়। শেষ মুহূর্তে পণ্যভর্তি ২৫০ কনটেইনার ডিপো থেকে বন্দরে নেওয়া যায়নি।

বন্দর কর্মকর্তারা বলেন, একটি ট্রেইলারের ওজন ১২ টন, কনটেইনারের ওজন (২০ ফুট দীর্ঘ) ২ টন। ফলে সড়ক বিভাগের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী কনটেইনারে সর্বোচ্চ ১৯ টন পণ্য পরিবহন করা যায়। কিন্তু একটি কনটেইনারে সর্বোচ্চ ২৪ টন পণ্য থাকে। আর ৪০ ফুট দীর্ঘ কনটেইনারের ওজন হয় প্রায় ৪ টন। এই কনটেইনারে সর্বোচ্চ ৩০ টন পণ্য থাকে। সড়ক বিভাগের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ১৪ চাকার প্রাইম মুভার ট্রেইলার সর্বোচ্চ ৩৩ টন (গাড়ি ও কনটেইনারের ওজনসহ) পরিবহন করতে পারবে।

পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান গতকাল মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘কর্মবিরতির কারণে রপ্তানিমুখী পোশাক খাত ক্ষতির মুখে পড়েছে। সড়ক বিভাগ ও আন্দোলনকারী—দুই পক্ষকে নমনীয় হওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি। সমঝোতা না হওয়ায় দেশের বড় ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে।’

এ বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এম এ এন ছিদ্দিক মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, প্রজ্ঞাপন নিয়ে আগামী ৪ অক্টোবর বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে চট্টগ্রামের মেয়র, প্রাইম মুভার ট্রেইলার মালিক-শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা থাকবেন।

চট্টগ্রাম প্রাইম মুভার ট্রেইলার মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সদস্যসচিব হুমায়ুন কবির প্রথম আলোকে বলেন, কর্মসূচি নিয়ে পুলিশ কমিশনার ও চট্টগ্রামের মেয়রের সঙ্গে আলাদা বৈঠক হয়েছে। প্রজ্ঞাপন স্থগিত করা না হলে কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হবে না।

কর্মসূচির কারণে রপ্তানি পণ্যবাহী কনটেইনার পরিবহন বন্ধের পাশাপাশি চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি করা পণ্যবোঝাই কনটেইনার খালাসের কাজেও ব্যাঘাত ঘটছে। আমদানি করা পণ্যভর্তি কনটেইনারের স্তূপ বাড়ছে বন্দরে। প্রতিদিন বন্দর থেকে আমদানি করা পণ্যভর্তি এক হাজার কনটেইনার চট্টগ্রামের ১৬টি ডিপো এবং সারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় ট্রেইলারে করে নেওয়া হয়। গতকাল বন্দরে আমদানি পণ্যভর্তি কনটেইনার ছিল ৩১ হাজার ৬১৪টি; যা ধারণক্ষমতার চেয়ে ৫ হাজার ৬৩৩টি বেশি।

এ বিষয়ে বন্দরের পর্ষদ সদস্য জাফর আলম বলেন, আমদানি পণ্যভর্তি কনটেইনার খালাস না হওয়ায় এখনই ধারণক্ষমতা ছাড়িয়ে গেছে। কর্মবিরতি প্রত্যাহার না হলে কয়েক দিন পর বন্দরে পরিচালন কার্যক্রম চালানো যাবে না।