ফুটপাতে পুলিশের দোকান

হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বাসস্টেশনের নতুন পদচারী-সেতুর পাশে ফুটপাতের ওপর ‘মেট্রো বেকারস্‌’ নামের একটি খাবার দোকান চালু করেছে মহানগর পুলিশ l ছবি: প্রথম আলো
হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বাসস্টেশনের নতুন পদচারী-সেতুর পাশে ফুটপাতের ওপর ‘মেট্রো বেকারস্‌’ নামের একটি খাবার দোকান চালু করেছে মহানগর পুলিশ l ছবি: প্রথম আলো

হকারদের উচ্ছেদ করে এবার ফুটপাত দখল করে দোকান দিয়েছে খোদ ঢাকা মহানগর পুলিশ কর্তৃপক্ষ। হজরত শাহ্‌জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বাসস্টেশনের নতুন পদচারী-সেতুর পাশে ‘মেট্রো বেকারস’ নামের একটি খাবার দোকান সম্প্রতি চালু করেছে তারা।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, বিমানবন্দর বাসস্টেশন যাত্রীছাউনির পাশেই ফুটপাতের ওপর তাঁবু নির্মাণ করে চালু হয়েছে নতুন একটি হালকা খাবারের দোকান। ফুটপাতে বিছানো ইটের ফাঁক গলে লোহার খুঁটি পোঁতা। ওপরে ত্রিপলের ছাউনি। নাম ‘মেট্রো বেকারস’। দোকানের নামের নিচের অংশে ব্যানারে লেখা, ‘ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কর্তৃক পরিচালিত’।

কলা, রুটি, শিঙাড়া, সমুচা, কেক, নানান রকমের বিস্কুট, বোতলজাত পানি, বিভিন্ন কোমল পানীয়, আইসক্রিমসহ হরেক রকম হালকা খাবার বিক্রি হচ্ছে। দোকানের বাইরে ফুটপাতের ওপর ক্রেতাদের বসার জন্য রাখা ৮-১০টি চেয়ার। বেশ ছড়িয়ে ছিটিয়েই রাখা হয়েছে সেগুলো। এতে জনসাধারণের পথ চলতে সমস্যা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন অনেক পথচারী।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার বিধান ত্রিপুরা বলেন, রাস্তায় চলাচলকারী ব্যক্তিদের স্বাস্থ্যসম্মত খাবার সরবরাহের কথা চিন্তা করে পুলিশের পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্টের (পিওএম) পক্ষ থেকে দোকানটি দেওয়া হয়েছে। ফুটপাত দখল করে দোকান দেওয়া কতটা যৌক্তিক জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর বিমানবন্দর থেকে আবদুল্লাহপুর পর্যন্ত ফুটপাত দখলমুক্ত করেছি, যাতে মানুষের চলাচলে সুবিধা হয়। এই দোকানের মাধ্যমে কারও চলাচলে সমস্যা হচ্ছে না।’       

বিমানবন্দর বাসস্টেশনে স্বাভাবিকভাবেই যাত্রীর চাপ অনেক বেশি থাকে। একদিকে বিমানবন্দর, অন্যদিকে রেলস্টেশন। ফলে ওই ফুটপাত দিয়ে বহু লোক চলাচল করে। বিমানবন্দর থেকে বের হয়ে কিংবা ট্রেন থেকে নেমে পদচারী-সেতু পার হয়ে বাস ধরার জন্যও অনেককে ওই ফুটপাত ধরেই এগোতে হয়। ফলে দখলদারদের উচ্ছেদ করার বদলে পুলিশ নিজেরাই ফুটপাত দখল করে দোকান দেওয়ায় পথচারীরা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। 

পথচারী মো. জামাল খান বলেন, ‘কিছুদিন ধরে এ পথে হাঁটতে অনেক সমস্যা হচ্ছে। হকার ও দখলদারদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বিমানবন্দর বাসস্টেশনের অধিকাংশ ফুটপাতই হকার ও দখলদারদের অধীনে চলে গেছে। পুলিশ এসব অবৈধ দখল উচ্ছেদ করবে কী তারা নিজেরই ফুটপাতে দোকান বসাল!’

পুলিশ কর্তৃপক্ষের ওই দোকানটিতে একটি রেফ্রিজারেটর দেখা গেল ঠান্ডা পানীয় সংরক্ষণের জন্য। এতে বৈদ্যুতিক সংযোগ কোথা থেকে আনা হয়েছে জানতে চাইলে দোকানে দায়িত্ব পালনকারী ব্যক্তি গোপাল বলেন, ‘সঠিক জানি না কোন জায়গা থেকে আনা।’ তবে বৈদ্যুতিক সংযোগটির অনুসন্ধান করে দেখা যায়, সংযোগটি পাশের আরেকটি খাবার দোকানের মিটার থেকে নেওয়া। মিটারটি কার জানতে চাইলে ওই দোকানি নিজের বলে দাবি করেন।

 এ বিষয়ে দোকানের বিক্রয়কর্মী গোপাল নিজেকে পুলিশ সদস্য পরিচয় দিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, কয়েক দিন আগে দোকানটি চালু করা হয়েছে। এটি পুলিশ কমিশনারের কার্যালয় থেকে পরিচালনা করা হয়। এর বেশি কোনো মন্তব্য করতে তিনি রাজি হননি।