আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের (আইএমও) পর্দা নামল। আয়োজনের শেষ দিন বিজয়ী খুদে গণিতবিদদের পরিয়ে দেওয়া হয় স্বর্ণ, রৌপ্য ও ব্রোঞ্জপদক। এই বর্ণাঢ্য বিজয় উৎসবের অংশ হয়েছে বাংলাদেশের তিন শিক্ষার্থীও। ব্রোঞ্জপদক পেয়েছে তারা। বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা সম্মানজনক তিনটি স্বীকৃতিও পেয়েছে।
আজ শনিবার বিকেলে কুইন্সল্যান্ডের সানশাইন কোস্ট কনভেনশন সেন্টারে এই পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। নিজ নিজ দেশের জাতীয় পতাকা নিয়ে মঞ্চে হাজির হয় বিজয়ীরা। অনুষ্ঠানে পদক বিতরণ ছাড়াও বিশ্বের পাঁচ অঞ্চলের পাঁচজন মেধাবী নারী শিক্ষার্থীকে মির্জাখানি পদক দেওয়া হয়।
পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে সানশাইন কোস্ট কাউন্সিলের ডেপুটি মেয়র মারিয়া সুয়ারেজ বলেন, ‘১০ দিন ধরে বিশ্বের সেরা শিক্ষার্থীরা এই শহরে এসেছে। এ জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। এমন একটি বৈশ্বিক আসরে সবার সমস্যা সমাধানের দক্ষতা দেখার সুযোগ পেয়ে আমরা আনন্দিত। সব শিক্ষার্থী যেভাবে এক হয়ে গণিতের নানা সমস্যা সমাধান করেছে, সে অভিজ্ঞতা তাদের অনেক সামনে নিয়ে যাবে।’
অস্ট্রেলিয়ার ম্যাথস ট্রান্স বোর্ডের চেয়ার জিওফ শুয়েট্রিম বলেন, ‘অংশগ্রহণকারী সবাইকে অভিনন্দন। শিক্ষার্থীরা গণিতের কঠিন কঠিন সব সমস্যা সমাধানের জন্য পরিশ্রম করেছে। আশা করছি তারা ভালো সময় উপভোগ করেছে।’ অনুষ্ঠান শেষে চীনা দলের হাতে অলিম্পিয়াডের আগামী বছরের পতাকা হস্তান্তর করা হয়। ২০২৬ সালের চীনের সাংহাইয়ে অনুষ্ঠিত হবে ৬৭তম গণিত অলিম্পিয়াড।
এবার ছিল গণিতের ৬৬তম বিশ্ব আসর। পুরস্কার বিতরণের আগে গত শুক্রবার ফল ঘোষণা করা হয়। সে অনুযায়ী—এ বছর ৬৭ জন শিক্ষার্থী স্বর্ণপদক, ১০৩ জন রৌপ্যপদক ও ১৪৫ জন ব্রোঞ্জপদক পেয়েছে। সম্মানজনক স্বীকৃতি পেয়েছে ১৩২ জন। এবারের আয়োজনে প্রথম স্থান অর্জন করেছে পাঁচজন শিক্ষার্থী। তারা হলো রাশিয়ার ইভান চাশোভিস্কিক, কানাডার ওয়ারেন বেই, জাপানের সাতোশি কানো, চীনের লিয়ান ডেং ও হেংগি ঝ্যাং। লিয়ান ডেং এবারই প্রথম অলিস্পিয়াডে অংশ নিয়ে স্বর্ণপদক পেয়েছে। ৪২–এর মধ্যে ৪২ নম্বরই পেয়েছে সে।
অলিম্পিয়াডে চীনের শিক্ষার্থীরা দলীয়ভাবে ২৩১ নম্বর পেয়ে প্রথম, যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষার্থীরা ২১৬ নম্বর পেয়ে দ্বিতীয়, দক্ষিণ কোরিয়ার শিক্ষার্থীরা ২০৩ নম্বর পেয়ে তৃতীয় স্থান অর্জন করেছে। বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা ১১৩ নম্বর পেয়ে ৫৩তম হয়েছে। প্রতিবেশী দলগুলোর মধ্যে ভারতের শিক্ষার্থীরা সপ্তম, পাকিস্তানের শিক্ষার্থীরা ৭৯তম ও শ্রীলঙ্কার শিক্ষার্থীরা ৭৬তম স্থান অর্জন করেছে।
গণিত অলিম্পিয়াডে প্রতিটি দেশের প্রাক্–বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায় থেকে সর্বোচ্চ ছয়জন প্রতিযোগী অংশ নিতে পারে। এ বছর বাংলাদেশ থেকে অংশ নেওয়া বিজয়ী শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রাম বাকলিয়া সরকারি কলেজের জিতেন্দ্র বড়ুয়া, আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের জাওয়াদ হামীম চৌধুরী ও ময়মনসিংহ জিলা স্কুলের তাহসিন খান। এ ছাড়া সম্মানজনক স্বীকৃতি পেয়েছে রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের এম জামিউল হোসেন, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের মনামী জামান ও চট্টগ্রাম কলেজের মো. রায়হান সিদ্দিকী।
সব শিক্ষার্থী যেভাবে এক হয়ে গণিতের নানা সমস্যা সমাধান করেছে, সে অভিজ্ঞতা তাদের অনেক সামনে নিয়ে যাবে
১৪ জুলাই উদ্বোধনী পর্বের মাধ্যমে শুরু হয় এবারের আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড। এর মধ্যে ১৫ ও ১৬ জুলাই দুই দিন পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। শিক্ষার্থীদের জ্যামিতি, কম্বিনেটরিক্স, নাম্বার থিওরি ও বীজগণিতের মোট ৬টি সমাধান করতে হয় দুই দিনে। প্রতিদিন তিনটি সমাধানের জন্য সাড়ে চার ঘণ্টা করে মোট ৯ ঘণ্টা সময় দেওয়া হয়। মোট ৪২ নম্বরের মধ্যে যারা ৩৫ নম্বরের ওপরে পেয়েছে তাদের স্বর্ণপদক, ২৮ নম্বরের ওপরে রৌপ্যপদক এবং ১৯ নম্বরের ওপরে ব্রোঞ্জপদক দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ দল এবার ২১তম বারের মতো আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে অংশ নিয়েছে। এবারসহ আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে এখন পর্যন্ত ১টি স্বর্ণপদক, ৭টি রৌপ্যপদক, ৪০টি ব্রোঞ্জপদক ও ৪৭টি সম্মানজনক স্বীকৃতি লাভ করেছে বাংলাদেশ।
ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় ও প্রথম আলোর সার্বিক ব্যবস্থাপনায় দেশব্যাপী গণিত অলিম্পিয়াড আয়োজন করা হয়। সেখান থেকে ৬৬তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের জন্য ছয় সদস্যের বাংলাদেশ গণিত দল নির্বাচন করা হয়। দল নির্বাচন ও এর আনুষঙ্গিক আয়োজন করেছে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি।