নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিপন্থীদের ধাক্কাধাক্কি

আওয়ামী লীগ ও বিএনপি-সমর্থিত আইনজীবীদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটেছে
ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির এবারের (২০২৩-২৪) নির্বাচন পরিচালনা–সংক্রান্ত কমিটি নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি-সমর্থিত আইনজীবীদের মধ্যে হইচই, হট্টগোল, ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটেছে। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির মিলনায়তনের (ভোটকেন্দ্র) ভেতরে আজ বুধবার সকাল ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

ঘোষিত তফসিল অনুসারে, সমিতির দুই দিনব্যাপী এ নির্বাচন আজ ও আগামীকাল বৃহস্পতিবার হওয়ার কথা। আজ সকাল ১০টায় ভোট গ্রহণ শুরুর কথা ছিল, কিন্তু নির্বাচন পরিচালনা-সংক্রান্ত কমিটি নিয়ে সকাল থেকেই সমিতির মিলনায়তনের ভেতরে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তাপ ছড়ায়। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি-সমর্থিত আইনজীবীদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। ‘আগে চাই কমিশন, তারপরে নির্বাচন’ বলে এ সময় বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের মিলনায়তনের ভেতরে স্লোগান দিতে দেখা যায়।

পুলিশের হাতে কয়েকজন আইনজীবী ও সাংবাদিক লাঞ্ছিত হয়েছেন
ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

সকাল পৌনে ১০টার দিকে মিলনায়তনে গিয়ে দেখা যায়, বিএনপি-সমর্থিত প্যানেল থেকে মনোনীত সম্পাদক প্রার্থী মো. রুহুল কুদ্দুসের সঙ্গে নির্বাচন পরিচালনা-সংক্রান্ত উপকমিটির একজন সদস্যের কথা-কাটাকাটি চলছে। অন্যদিকে উপকমিটির পক্ষ থেকে বারবার প্রার্থীদের নির্ধারিত জায়গায় যেতে বলা হচ্ছিল। এ সময় আওয়ামী লীগ–সমর্থিত আইনজীবীরা ‘ইয়েস, ইয়েস’ বলে রব তোলেন।

একপর্যায়ে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত এক আইনজীবীর সঙ্গে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের ধাক্কাধাক্কি হয়। পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেন সমিতির সভাপতি মোমতাজ উদ্দিন ফকির। তিনি আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্যানেল থেকে এবারের নির্বাচনে সভাপতি প্রার্থী।

কিছুক্ষণ পর বিএনপি-সমর্থিত প্যানেল থেকে সভাপতি প্রার্থী মাহবুব উদ্দিন বলেন, ‘কমিশন বিষয়ে সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত নির্বাচন হবে না।’

এ সময় বিএনপি-সমর্থিত আইনজীবীরা ‘ইয়েস, ইয়েস’ বলে রব তোলেন। এর পক্ষে-বিপক্ষে হইচই ও হট্টগোল শুরু হয়। বেশ কিছুক্ষণ তা চলে।

স্লোগান দিচ্ছেন আইনজীবীরা
ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

বেলা পৌনে ১১টার দিকে মিলনায়তনে উপস্থিত একাধিক আইনজীবী প্রথম আলোকে জানান, ভোট গ্রহণ তখন পর্যন্ত শুরু হয়নি।

পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থানের প্রেক্ষাপটে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বেলা ১১টার ৪০ মিনিটের দিকে সমিতির মিলনায়তনে পুলিশ প্রবেশ করে। এ সময় কয়েকজন সাংবাদিক ও আইনজীবী পুলিশের হাতে লাঞ্ছিত হন।

গত সোমবার নির্বাচন পরিচালনা–সংক্রান্ত উপকমিটির আহ্বায়ক সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. মনসুরুল হক চৌধুরী ‘ব্যক্তিগত’ কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন। এ প্রেক্ষাপটে ভোট হবে কি না, কে আহ্বায়ক হবেন, নাকি উপকমিটির অন্য সদস্যরা নির্বাচন পরিচালনা করবেন— নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার দিনভর আইনজীবীদের মধ্যে আলোচনা চলে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বেলা ১১টার ৪০ মিনিটের দিকে সমিতির মিলনায়তনে পুলিশ প্রবেশ করে
ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

গতকাল সন্ধ্যার পর সমিতি প্রাঙ্গণে আহ্বায়ক কমিটির প্রধান নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তাপ ছড়ায়। আওয়ামী লীগ-সমর্থিত আইনজীবীরা নির্বাচন পরিচালনা উপকমিটির আহ্বায়ক হিসেবে মো. মনিরুজ্জামানকে মনোনীত করেন। অন্যদিকে বিএনপি-সমর্থিত আইনজীবীরা এ এস এম মোকতার কবির খানকে আহ্বায়ক মনোনীত করেন।

প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক আইনজীবীর ভাষ্য, গতকাল সন্ধ্যা সাতটার দিকে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত আইনজীবীরা মো. মনিরুজ্জামানকে আহ্বায়ক মনোনীত করার পর বিএনপি-সমর্থিত আইনজীবীরা মোকতার কবির খানকে আহ্বায়ক হিসেবে ঘোষণা দেন।

মনিরুজ্জামান নির্বাচনী কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ব্যালট পেপারে সই করতে সমিতির তিনতলার সম্মেলনকক্ষে যান। এতে আপত্তি জানান বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। তাঁরা কিছু ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নেন। এ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে মিছিল, হইচই ও হট্টগোল হয়। একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়।

উত্তপ্ত পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে আজ সকাল থেকেই সমিতি ভবন ও প্রাঙ্গণে বিপুলসংখ্যক পুলিশ দেখা যায়।

সভাপতি ১টি, সহসভাপতি ২টি, সম্পাদক ১টি, কোষাধ্যক্ষ ১টি, সহসম্পাদক ২টি, সদস্যের ৭টিসহ মোট ১৪টি পদে এক বছর মেয়াদের জন্য এ নির্বাচন হয়ে থাকে।

সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির ১৪টি পদের মধ্যে বর্তমান সভাপতি, সম্পাদকসহ ৭টি পদে আছেন আওয়ামী লীগ–সমর্থিত আইনজীবীরা। সহসম্পাদক, কোষাধ্যক্ষসহ অন্য ৭টি পদে আছেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা।

এবারের নির্বাচন পরিচালনার জন্য আগে সমিতির বর্তমান সম্পাদক মো. আবদুন নূর (আওয়ামী লীগ–সমর্থিত প্যানেল থেকে নির্বাচিত) আইনজীবী শাহ খসরুজ্জামানকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের উপকমিটি ঘোষণা করেছিলেন। অন্যদিকে কার্যনির্বাহী কমিটির সিনিয়র সহসম্পাদক মাহফুজ বিন ইউসুফ (বিএনপি–সমর্থিত প্যানেল থেকে নির্বাচিত) আইনজীবী এ জেড এম ফরিদুজ্জামানকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের উপকমিটি ঘোষণা করেছিলেন। তবে ২ মার্চ উভয় পক্ষের সম্মতিতে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির এবারের (২০২৩-২০২৪) নির্বাচন পরিচালনার জন্য সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. মনসুরুল হক চৌধুরীকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যবিশিষ্ট উপকমিটি পুনর্গঠন করা হয়েছিল। গত সোমবার মনসুরুল হক চৌধুরী পদত্যাগপত্র দেন।