এত দিন বলার পরেও ঠিক করতে পারলেন না: হাইকোর্ট

হাইকোর্ট
ফাইল ছবি

কারাগারে চিকিৎসক সংযুক্তি বিষয়ে আদালতের আদেশ বাস্তবায়িত না হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। কারা অধিদপ্তরের আইনজীবীর উদ্দেশে আদালত বলেন, ‘আর কত বছর লাগবে আপনাদের? চিঠি চালাচালি করছেন। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা থেকে বের হতে পারলেন না। কারাগারের একটি বিষয় নিয়ে এত দিন বলার পরেও ঠিক করতে পারলেন না।’

বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ শওকত আলী চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ মঙ্গলবার এ–সংক্রান্ত অগ্রগতিবিষয়ক শুনানিতে এসব কথা বলেন।

কারাগারে বন্দীর ধারণ ক্ষমতা, বন্দীর পরিসংখ্যান, চিকিৎসকের সংখ্যা ও চিকিৎসকের শূন্য পদ পূরণ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. জে আর খান রবিন রিট করেন। ২০২০ সালের ২৯ জানুয়ারি হাইকোর্ট এক আদেশে বন্দিদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতে দেশের কারাগারগুলোয় অনুমোদিত শূন্য পদে কারা চিকিৎসক নিয়োগ দিতে নির্দেশ দেন। এরপর আদালতের আদেশ বাস্তবায়নের অগ্রগতি জানাতে নির্দেশনা চেয়ে গত বছরের ৩০ অক্টোবর সম্পূরক আবেদন করেন রিট আবেদনকারী। গত বছরের ১৫ নভেম্বর হাইকোর্ট বন্দীদের চিকিৎসার জন্য কারাগারে শূন্য পদে ডেপুটেশনে (প্রেষণে) চিকিৎসক নিয়োগ দিয়ে এ বিষয়ে অগ্রগতি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাতে বলেন। এর ধারাবাহিকতায় আজ বিষয়টি ওঠে।

আদালতে রিটের পক্ষে আইনজীবী জে আর খান রবিন নিজেই শুনানি করেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষে আইনজীবী তীর্থ সলিল পাল এবং রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ সাইফুজ্জামান শুনানি করেন। কারা অধিদপ্তরের পক্ষে আইনজীবী মো. সফিকুল ইসলাম শুনানিতে ছিলেন।

‘গরিব মানুষগুলোকে বাঁচান’

শুনানিতে কারা অধিদপ্তরের আইনজীবী সফিকুল ইসলাম বলেন, কারা চিকিৎসকের ১৪১টি অনুমোদিত পদের বিপরীতে ১২৫ জন চিকিৎসক আছেন। চিকিৎসক নিয়োগ বিধিমালার জন্য তাগাদা দেওয়া হয়েছে। বড় কাজ সময় লাগবে।  

আদালত বলেন, চিকিৎসক সবাই কি যোগদান করেছেন? তখন আইনজীবী সফিকুল ইসলাম ‘হ্যাঁ’ সূচক জবাব দেন। রিট আবেদনকারী জে আর খান রবিন বলেন, গত ২৪ জানুয়ারি জানানো হয়েছিল ১৪১টি পদের বিপরীতে ১৪৩ জন চিকিৎসক সংযুক্ত করা হয়েছে। গত ৯ মে জানানো হয় যে ১২৫ জন কর্মরত আছেন, বাকি পদগুলো শূন্য রয়েছে। বাকি চিকিৎসক কোথায় গেলেন?

কারা মহাপরিদর্শকের পক্ষে গত ১৭ এপ্রিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব বরাবরে অনুলিপি পাঠানো একটি চিঠির প্রসঙ্গও শুনানিতে ওঠে।

রাষ্ট্রপক্ষের উদ্দেশে আদালত বলেন, ‘ক্ষমতার অপব্যবহার করার জন্য নয়, মানুষকে সাহায্য করার জন্য। কারা হাসপাতালের অনুমোদিত কর্মরত ও শূন্য জনবল নিয়ে ১৭ এপ্রিল চিঠি দেওয়া হয়। সেটি মন্ত্রণালয়ে দেওয়া হয়েছে বলে ওনারা কমপ্লায়েন্সে (অগ্রগতিবিষয়ক প্রতিবেদন) বলেছে।’ আদালত আরও বলেন, ‘এ বিষয়ে খোঁজ নেবেন। কারণ, গরিব মানুষ কারাগারে থাকে। সুতরাং এই গরিব মানুষগুলোকে বাঁচান। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিবের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।’

শুনানিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আইনজীবী তীর্থ সলিল পাল বলেন, চাহিদা অনুসারে শূন্য পদে ১৭ জন চিকিৎসক দেওয়া হয়েছে। আদালত বলেন, বর্তমান সরকার যে সংখ্যক চিকিৎসক নিয়োগ দিয়েছেন, অতীতে কোনো সরকার দেয়নি।

শুনানিতে আইনজীবী তীর্থ সলিল পাল বলেন, সিভিল সার্জনদের নির্দেশনা দেওয়া আছে, রিকুইজিশন (চাহিদাপত্র) পাওয়া সাপেক্ষে কারাগারে চিকিৎসক দিতে। চাহিদাপত্র না পেলে এ বিষয়ে জানা যায় না। কারা কর্তৃপক্ষ চাহিদাপত্র দিলে চিকিৎসক দিয়ে দেওয়া হবে।

এ সময় কারা অধিদপ্তরের আইনজীবীর উদ্দেশে আদালত বলেন, আপনারা দেননি? তখন কারা অধিদপ্তরের আইনজীবী সফিকুল ইসলাম বলেন, দিয়েছি। আদালত বলেন, ‘খোঁজ নেন। চাহিদাপত্র না দিলে চিকিৎসক দেবে কীভাবে? কবে দিয়েছেন জানাবেন।’ অগ্রগতি জানাতে এক মাস সময় দিয়ে আদালত আগামী ১০ জুলাই পরবর্তী দিন রাখেন।