জুলাই গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী কিছু নিয়ে সমালোচনা করলে তকমাবাজি করা হচ্ছে বলেছেন উন্নয়ন অর্থনীতি বিষয়ক গবেষক মাহা মির্জা। তিনি বলেন, ‘সরকারের সঙ্গে দ্বিমত করলে, এনসিপি নিয়ে কিছু বললে অভ্যুত্থানের পক্ষে যারা ছিল তাদের আক্রমণ করা হচ্ছে। এটা দুঃখজনক।’
আজ বুধবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান: এক বছরের অভিজ্ঞতা ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক গোলটেবিলে তিনি এসব কথা বলেন। প্রথম আলোর উদ্যোগে এই গোলটেবিল হয়।
মাহা মির্জা বলেন, 'কষ্ট হচ্ছে যে অভ্যুত্থানের পর কার্পেটের তলে রেখে কথা বলার কথা ছিল না। কী বললে কী ট্যাগিং খাব, এসব হওয়ায় কথা ছিল না। আওয়ামী লীগের সময়েও সাহস করে অনেক কিছু বলেছি, কিন্তু এখন আমাদের চিন্তা করতে হচ্ছে, লিখব কিনা। লেখার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আক্রমণ হচ্ছে।'
গোলটেবিলের শুরুতে রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবনে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তে হতাহতের ঘটনায় শোক জানানো হয়। সবাই দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন।
এই ট্যাগিং নিয়ে মাহা মির্জা আরও বলেন, 'ট্যাগিংয়ের শিকার আমরা কমবেশি সবাই হচ্ছি। যারা একটু লিবারেল, মডার্ন আধুনিক জীবনযাপন করলে, ছায়ানটে গেলে, রবীন্দ্রনাথের গান শুনলে সবাই আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদের দোসর। এদের ব্যাশিং করতে হবে।’
তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির প্রান্তিক পর্যায়ে যাঁরা কাজ করেন সরকারের হয়ে তাদের আওয়ামী ট্যাগিং দিয়ে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে বলেন মাহা মির্জা। এই ট্যাগিং আলার্মিং বিষয় বলেন তিনি।
মাহা মির্জা আরও বলেন, ‘নরম্যান ফ্লিনকেইনস্টেইন নামের একজন লেখক বলেছেন, হলোকাস্টকে উদযাপন করতে করতে জায়োনিস্টকে ইন্ডাস্ট্রি বানিয়ে ফেলেছে।
আওয়ামী লীগের সময়ে মুক্তিযুদ্ধকে উদযাপন করতে করতে সেটাকে ইন্ডাস্ট্রি বানানো হয়েছে। জুলাইকে উদযাপন করতে করতে যেন জুলাইকে ইন্ডাস্ট্রি না বানিয়ে ফেলি।'
অভ্যুত্থানে শ্রমিকেরা সবচেয়ে বেশি মারা গেছে জানিয়ে মাহা মির্জা বলেন, ‘কিন্তু সেই শ্রমিকদের ওপর গত আগস্টে গুলি চালানো হলো। কিন্তু অভ্যুত্থানের ন্যূনতম চাওয়া ছিল গুলি চলবে না। কিন্তু প্রথম শহীদ হলেন চম্পা নামের গার্মেন্টস শ্রমিক। সে সময় অনেক কারখানা বন্ধ হলো, বেতন বন্ধ হলো। শ্রমিকেরা রাস্তায় নেমে এল। কিন্তু এটার ব্যাপারে সরকারের বিকার ছিল না। বরং সরকার বড় করে বলেন বিনিয়োগ সম্মেলন করল, স্মার্ট উপস্থাপনা নিয়ে নানা উন্মাদনা দেখা গেল, কর্মসংস্থান হবে বলা হলো। যদিও তার তেমন প্রভাব দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু বন্ধ হওয়া কারখানা নিয়ে উদ্যোগ দেখা গেল না। বরং দেশকে সিঙ্গাপুর বানানোর স্বপ্ন দেখানো হচ্ছে। আবার সেই সিঙ্গাপুর হতে হবে। একই ভাষায় কথা বলছে।’
মাহা মির্জা উত্তর সিটি করপোরেশনে হকার ও ব্যাটারিচালিত রিকশা উচ্ছেদের সমালোচনা করেন। অন্য সমস্যা বাদ দিয়ে বুলডোজার চালানো হয়েছে বলেন তিনি।
প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফের সঞ্চালনায় এতে আরও অংশ নেন কবি ও রাষ্ট্রচিন্তক ফরহাদ মজহার, গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান, বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী সারা হোসেন, লেখক-গবেষক আলতাফ পারভেজ, অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস, নির্মাতা কামার আহমাদ সাইমন, রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য জাহেদ উর রহমান, প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের গবেষণা বিশেষজ্ঞ সহুল আহমদ।