জন্মাষ্টমীর আলোচনা অনুষ্ঠান
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের চেতনায় ধর্মীয় ভেদাভেদহীন বাংলাদেশ গড়ার আহ্বান
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় দেয়ালে দেয়ালে সম্প্রীতির যে গ্রাফিতি আঁকা হয়েছিল, ধর্মীয় ভেদাভেদ ভুলে তেমন অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ ভবিষ্যতে যেন সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ থাকতে পারে।
মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দিরে কেন্দ্রীয় জন্মাষ্টমী উৎসব-২০২৫ উপলক্ষে আলোচনা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি ও বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, ঐতিহাসিক পরিক্রমায় দেখলে মহাভারতে শ্রীকৃষ্ণকে অর্জুনের সখা হিসেবে পাওয়া যায়। সেখানে তিনি একজন কূটনীতিবিদ। আবার ভগবদ্গীতাতে তাঁকে পাওয়া যায় দার্শনিক হিসেবে।
বিধান রঞ্জন বলেন, শ্রীকৃষ্ণকে আরাধনারও বিভিন্ন উপায় আছে। দাসরূপে তাঁর আরাধনা করা যায়। বন্ধুরূপে তাঁর আরাধনা করা যায়। তাঁকে সন্তান কল্পনা করে আরাধনা করা যায়। তাঁকে প্রেমিক রূপেও আরাধনা করা যায়। এত বিচিত্র চরিত্রের কোনো ব্যক্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না।
অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী। উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি বলেন, ভারতীয় উপমহাদেশে হাজার বছর ধরে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করে মিলেমিশে বিভিন্ন উৎসব পালন করে জীবন কাটাচ্ছেন। বাংলাদেশের মানুষ ভবিষ্যতেও যেন একইভাবে সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ থাকতে পারে। এ দেশের একই গ্রামে এক বাড়িতে পূজা হয়, পাশের বাড়িতে আজান হয়, নামাজ হয়।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, জঘন্য কর্মকাণ্ড, হট্টগোল, মারামারি, বিশৃঙ্খলার মধ্যে কোনোভাবেই জড়িত হওয়া যাবে না। দেশে এমনিতেই বহু সমস্যা। গরিব দেশ, ছোট্ট একটি ভূখণ্ড। প্রায় ২০ কোটি মানুষের বসবাস। এখানে সবার সহযোগিতা ছাড়া কেউই ভালো থাকতে পারবে না।
অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি ও ঢাকেশ্বরী মন্দির ব্যবস্থাপনা কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সুব্রত চৌধুরী। তিনি বলেন, জুলাই গণ-আন্দোলনের সময় দেয়ালের গ্রাফিতিতে সম্প্রীতির যে বার্তা আঁকা হয়েছিল, তেমন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। এখানে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান অথবা ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর পরিচয়ে কেউ যেন আর নিগৃহীত না হয়, নির্যাতিত না হয়।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান তপন চন্দ্র মজুমদার বলেন, শেখ হাসিনা হিন্দু কার্ড খেলেছেন। কিন্তু হিন্দুদের কিছুই দেননি। তিনি বলেন, ৪২ বছরে হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টে কোনো কাজ হয়নি। অনেক সক্ষম নেতা থাকার পরও কেন এক ছটাক জমি পাওয়া যায়নি, সেই প্রশ্ন তোলেন তপন চন্দ্র মজুমদার।
সভাপতির বক্তব্যে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব বলেন, গত রোজার সময় দেশে পূজা হয়েছে। এখানে রোজার সঙ্গে পূজা হয়, পূজার সঙ্গে রোজা হয়। দেশে অনেক জায়গা আছে, যেখানে মন্দির-মসজিদ পাশাপাশি।
অনুষ্ঠানে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির উপদেষ্টা কাজল দেবনাথ, বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর প্রমুখ বক্তব্য দেন।
জন্মাষ্টমী উপলক্ষে আয়োজিত চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও গীতাপাঠ প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হয়।