ঢাকঢোলের বাদ্য, আলোর রোশনাই আর অঞ্জলিতে মুখর নবমী পূজামণ্ডপ

অঞ্জলি নিবেদন শেষে ভক্তরা চরণামৃত ও যজ্ঞের ফোঁটা সংগ্রহ করেন। বনানী পূজামণ্ডপ, ঢাকাছবি : তানভীর আহাম্মেদ

শারদীয় দুর্গাপূজার মহানবমীতে ঢাকঢোলের বাদ্য, আলোর রোশনাই, অঞ্জলিতে মুখর হয়ে উঠেছে রাজধানীর পূজামণ্ডপগুলো।

আজ বুধবার শারদীয় দুর্গোৎসবের মহানবমী। নবমীতেই দেবী দুর্গা তীব্র লড়াইয়ের মাধ্যমে অসুর বিনাশ করেন। মহিষাসুর বধের এই বিজয় দিবসটি তাই দেবীভক্তদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেবী এই দিনে ভক্তদের মনোবাসনা পূরণ করেন। সে কারণে এই দিনের প্রধান ধর্মীয় আচার হলো অসুরবিনাশী দেবীকে অঞ্জলি নিবেদন। ভক্তরা ফুল হাতে দেবী পদে এই অঞ্জলি নিবেদন করেন।

বনানী পূজামণ্ডপে সকাল থেকেই ছিল ভক্তদের বিপুল সমাগম। বনানী পূজা উদ্‌যাপন কমিটির আহ্বায়ক চন্দন লোধ প্রথম আলোকে বলেন, সকাল ৯টা থেকে নবমী বিহিত যজ্ঞ ও পূজা শুরু হয়েছিল। অঞ্জলি দেওয়া শুরু হয় ১২টা ১৫ মিনিট থেকে। এ সময় হাজারো ভক্ত করজোরে পুরোহিতের সঙ্গে মন্ত্রপাঠ করে দেবী প্রণাম করেন। অঞ্জলি নিবেদন শেষে তারা চরণামৃত ও যজ্ঞের ফোঁটা সংগ্রহ করেন।

বনানী পূজামণ্ডপে সকাল থেকেই ছিল ভক্তদের বিপুল সমাগম
ছবি : তানভীর আহাম্মেদ

মানিকগঞ্জের বেতিলা থেকে স্ত্রী অর্চনা রানি ঘোষকে নিয়ে বনানী মণ্ডপে অঞ্জলি দিতে এসেছিলেন যাদব চন্দ্র ঘোষ। তাঁরা প্রথম আলোকে বলেন, বনানীর পূজার আয়োজন অনেক বড়। জাঁকজমক, সাজসজ্জাও বর্ণাঢ্য। তাঁদের গ্রামেও পূজা হচ্ছে। তবে গ্রামের পূজার সঙ্গে বনানীর আয়োজনের তুলনা চলে না। প্রতিবছরই তাঁরা নবমীতে এখানে অঞ্জলি দিতে আসেন।

অঞ্জলি দিয়ে দেবী প্রণাম জানালেন অসীম গুহ ও  রুপা গুহ দম্পতি। তাঁরা থাকেন গুলশানে। অসীম গুহ বলেন, ইতিমধ্যে তাঁরা ঢাকার অধিকাংশ মণ্ডপে প্রতিমা দর্শন করেছেন। উত্তরার দিয়াবাড়ির মণ্ডপের সাজসজ্জা তাঁর কাছে বেশ ব্যতিক্রম লেগেছে। তবে পরিসর আর বর্ণাঢ্যতার দিক থেকে বনানীর মণ্ডপ এগিয়ে। এখনে ভক্তদের বসার জন্য অনেক বড় পরিসর ও অন্যান্য সুবিধা আছে। নিরাপত্তাও খুব ভালো। তবে সাধারণ মানুষেরর মধ্যে একটা আর্থিক মন্দাভাব আছে। এ কারণে হাত খুলে খরচ-খরচা করে উৎসব নিয়ে আনন্দ উচ্ছ্বাস করায় কিছুটা ঘাটতি আছে বলে তাঁর মনে হয়েছে।

নানা আচার–আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে দুর্গাপূজার মহানবমী পালন। বনানী পূজামণ্ডপ, ঢাকা
ছবি : তানভীর আহাম্মেদ

এবার বনানী পূজামণ্ডপের সাজসজ্জায় সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব উপকরণ ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কমিটির আহ্বায়ক চন্দন দত্ত ও গুলশান সর্বজনীন পূজা উদ্‌যাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাঞ্চন কুমার দত্ত। দেবী প্রতিমায় কোনো কৃত্রিম বস্ত্র বা অলংকার ব্যবহার করা হয়নি। সম্পূর্ণ মাটির তৈরি। প্রতিমায় প্রধানত সাদা রং ব্যবহার করা হয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্র হালকা গোলাপি আভা। অস্ত্র আর অলংকার উজ্জ্বল রূপালি রঙের। ফলে সাদা ও রূপালি মিলিয়ে প্রতিমায় বিশেষ স্নিগ্ধতার প্রকাশ ঘটেছে। এ ছাড়া ফটক ও ভেতরের সাজসজ্জায় পাটি, পাটকাঠি, বাঁশ, বেত এমন উপকরণ ব্যবহার করে লোকজ ঐতিহ্যবাহী নকশায় অলংকরণ করা হয়েছে।

তাঁরা বলেন, প্রতিদিন সকাল থেকে রাত ২টা পর্যন্ত মণ্ডপ খোলা থাকে। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজারের মতো ভক্ত বনানী মণ্ডপে দেবীদর্শনে এসেছেন।

আয়োজকেরা বলেন, ষষ্ঠী পূজার দিন থেকেই বনানী মণ্ডপে প্রসাদ বিতরণ হচ্ছে। এখানে প্রতিদিন প্রায় ১৫ হাজার জনের জন্য প্রসাদ বিতরণ করা হয়।

আজ নবমীর বিকেলে ৫টা থেকে শুরু হবে পূজা ও শ্রী শ্রী চণ্ডীপাঠ। সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আরতি চলবে রাত ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত।
বনানী, গুলশান, উত্তরা এলাকার প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হবে আশুলিয়ায়। সকালে দশমীর পূজা শেষে বিজয়ার যাত্রা শুরু হবে দুপুরে।

প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজারের মতো ভক্ত বনানী মণ্ডপে দেবীদর্শনে এসেছেন
ছবি : তানভীর আহাম্মেদ

কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনের পূজা

ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনের মাঠে গত ৩৪ বছর থেকে শারদীয় দুর্গাপূজা হচ্ছে সনাতন সমাজকল্যাণ সংঘের আয়োজনে। আজ এখানে নবমীর পূজাতেও অনেক ভক্তের সমাগম হয়েছিল।

সংঘের সভাপতি মনোতোষ কুমার রায় প্রথম আলোকে বলেন, প্রায় ১০ হাজার ভক্ত নবমীর সকালে দেবীকে অঞ্জলি দিয়েছেন। এখানেও প্রতিদিন ৩ থেকে ৫ হাজার জনকে প্রসাদ বিতরণ করা হচ্ছে।

বনানী পূজামণ্ডপের সাজসজ্জায় সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব উপকরণ ব্যবহার করা হয়েছে
ছবি : তানভীর আহাম্মেদ

স্ত্রী সুবর্ণা ভৌমিক ও দুই মেয়ে প্রকৃতি ভৌমিক ও স্পৃহা ভৌমিককে নিয়ে এখানে দেবীকে নবমীর অঞ্জলি দিয়েছেন পার্থ ভৌমিক। তাঁরা থাকেন মণিপুরি পাড়ায়। আজ সারা দিন তাঁরা বিভিন্ন মণ্ডপে ঘুরে দেবী দর্শন করবেন বলে জানিয়েছেন।