বাংলাদেশে চীনের সামরিক উপস্থিতি নিয়ে মার্কিন প্রতিবেদনের তথ্য নাকচ চীনা রাষ্ট্রদূতের

চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশে চীনের সামরিক উপস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার বার্ষিক প্রতিবেদনে প্রকাশিত তথ্য নাকচ করে দিয়েছেন ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। তিনি বলেছেন, প্রতিবেদনে বাংলাদেশে চীনের সামরিক উপস্থিতির তথ্য ‘সত্য নয়’।

বাংলাদেশ থেকে চীনে প্রথমবারের মতো পাঠানো আমের চালান নিয়ে বুধবার দুপুরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন ইয়াও ওয়েন। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ঢাকার চীনা দূতাবাস।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির (ডিআইএ) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, বাংলাদেশসহ বিশ্বের বেশ কিছু দেশে সামরিক উপস্থিতি বিবেচনা করছে চীন। এ তালিকায় বাংলাদেশ ছাড়াও রয়েছে মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কিউবা, কেনিয়া, গিনি, সেশেলস, তানজানিয়া, অ্যাঙ্গোলা, নাইজেরিয়া, নামিবিয়া, মোজাম্বিক, গ্যাবন, পাপুয়া নিউগিনি, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ ও তাজিকিস্তান।

যুক্তরাষ্ট্রের ওই প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে ইয়াও ওয়েন বলেন, ‘ওই প্রতিবেদনের তথ্য সত্য নয়। আমাদের এ ধরনের কোনো উদ্দেশ্য নেই। বাংলাদেশ, পাকিস্তান, মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের সুসম্পর্ক রয়েছে। আমরা আমাদের বন্ধুত্বের ওপর জোর দিয়ে যাচ্ছি।’ রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘চীনের সামরিক উপস্থিতি থাকার কোনো প্রয়োজন আমি দেখি না। আর এটার জন্য আমাদের আমন্ত্রণও জানানো হয়নি। আমি জানি না এ প্রতিবেদনের উৎস কী। তবে আমি বলতে চাই, এটি সত্য নয়।’

চীনা বাণিজ্যমন্ত্রীর সফরে কিছু এমওইউ সই হবে: বাণিজ্য উপদেষ্টা

এদিকে আগামী শনিবার চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী ওয়াং ওয়েনতাওয়ে ঢাকায় আসছেন। চীনা বাণিজ্যমন্ত্রীর সফরে দেশটির সঙ্গে কিছু সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হওয়ার তথ্য জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।

বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরের পর চীনা বাণিজ্যমন্ত্রী একটি বৃহত্তর বিনিয়োগ প্রতিনিধি নিয়ে আগামী শনিবার বাংলাদেশ সফর আসছেন। তাঁরা বিনিয়োগ পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করবেন। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) সঙ্গে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেবেন। তাঁর সঙ্গেও চীনা বাণিজ্যমন্ত্রীর বৈঠক হবে। এ সময় কিছু সমঝোতা স্মারক সই হবে।

শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ‘বাংলাদেশের ব্যবসার সঙ্গে চীনের ব্যবসার একটা সংযোগ সৃষ্টি হবে। বাণিজ্যিক কার্যক্রম সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যে, বাণিজ্য–ঘাটতি কমানোর উদ্দেশ্যে আমরা বেশ কিছু বিষয় চিহ্নিত করেছি, যার ওপর ভিত্তি করে আমরা এমওইউ স্বাক্ষর করব।’

চীনের বাণিজ্যমন্ত্রীর সফরে দেশটির পক্ষ থেকে কী পরিমাণ বিনিয়োগ প্রত্যাশা করেন—জানতে চাইলে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘চীন কত বিনিয়োগ করবে, সেটা এ মুহূর্তে বলা মুশকিল। কারণ, সিদ্ধান্তটা তারা নেবে। তবে আমরা আশা করি চীনা বাণিজ্যমন্ত্রী একটা প্রতিনিধিদল নিয়ে আসছেন। আশা করি তাদের এ সফর বিফলে যাবে না।’
গত মার্চে চীন সফর করেছিলেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তাঁর সফরের পর দেশটি থেকে কী পরিমাণ বিনিয়োগ এসেছে, জানতে চাইলে শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ‘আপনি যখন কোনো বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেন, তখন তা এক সপ্তাহে ঘটে না।’

চলতি বছরে বাংলাদেশ থেকে আম রপ্তানির পরিমাণ ১০ গুণ বাড়বে বলে মনে করেন বাণিজ্য উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘বাণিজ্য–ঘাটতি কমানোর উদ্যোগের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ এখন চীনের বাজারে শতভাগ শুল্কমুক্ত সুবিধা পাচ্ছে। এ সুবিধার আওতায় এবারই প্রথম দেশটিতে বিনা শুল্কে বাংলাদেশের আম রপ্তানি করা হচ্ছে। আম রপ্তানি বহুগুণ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে চাষিরা ন্যায্যমূল্য পাবেন।’

চলতি বছর চীনে ৫০ টন আম রপ্তানির কথা রয়েছে। বুধবার প্রথম চালানে চীনে আম রপ্তানি শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের আম রপ্তানি নিয়ে চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, চীনের বাজারে বাংলাদেশের আম রপ্তানিতে উভয় দেশ লাভবান হবে। এর মধ্যে দিয়ে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ভারসাম্য আসবে।